সফল শিক্ষাবিদ, অনন্য সমাজসেবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কোহিনূর বেগম
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:০৬
সফল শিক্ষাবিদ, অনন্য সমাজসেবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কোহিনূর বেগম
অনিন্দিতা রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

মূল্যবান রত্ন কোহিনূরের গল্প কে না জানে? ইতিহাস সচেতন সকলের এবং বাদবাকি আরো অনেকেরই সে গল্প জানা। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং শোভায় অনন্য রত্ন 'কোহিনূর'৷ সেই কোহিনূরের মতোই মূল্যবান এক রত্ন বাঙালি নারী কোহিনূর বেগম। অসাধারণ গুণে গুণান্বিত এবং কর্মে-সাফল্যে অতুলনীয় এই কোহিনূর বেগম একাধারে সফল শিক্ষাবিদ, দরদী সমাজসেবক, সংস্কৃতিমনস্ক এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।


আব্দুস সোবহান ভূইয়া ও চনদ্র বান দম্পতির কন্যা কোহিনূর বেগম। তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মহাম্মদ ফজলুল হক। তার একমাত্র সন্তান আয়েশা হক, উপসচিব হিসেবে কর্মরত আছেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে।



কুমিল্লার রত্ন কোহিনূর বেগমের বেড়ে ওঠা রাজনীতি সচেতন ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী পরিবারে। তার বড় দুই ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মো. মহিউদ্দিন ভূইয়া ( যুদ্ধাহত) এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মো. মিজানুর রহমান ভূইয়া। ফলে খুব ছোটোবেলা থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয় কোহিনূর বেগমের মধ্যে। বরাবরই বাড়িতে যাতায়াত ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের। আর সেই বীজই বপন হয় তার মধ্যে, বড় হতে হতে কোহিনূর বেগম নিজেই হয়ে ওঠেন সংগ্রামী এক নারী নেত্রী। জীবনে যাপন করতে শুরু করেন রাজনৈতিক চেতনার মোড়কে রেখে, আর তাই তো বারবারই রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতা ও নেতৃত্বের জন্য পদপ্রাপ্ত হয়েছেন।



রাজনৈতিক অঙ্গনে দক্ষতা ও সততার গুণে কোহিনূর বেগমকে বলা হয় জনবান্ধব নারী নেত্রী। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর করা কোহিনূর বেগম ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন রাজনীতি সচেতন। তারই ধারাবাহিকতায় ছিলেন সভাপতি, ছাত্রলীগ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ এবং ছিলেন সভাপতি, ছাত্রলীগ, শামসুন্নাহার হল শাখা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের কমিটিতেও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।


রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি হীরকোজ্জ্বলে উজ্জ্বল কোহিনূর বেগমের শিক্ষকজীবন। দীর্ঘ সময় ধরে নিযুক্ত ছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। কুমিল্লা জেলার শিক্ষা বিস্তারে কোহিনূর বেগম নিরলস কাজ করেছেন, পরিশ্রমী ছিলেন, সফলতাও পেয়েছেন।১৯৯২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা মর্ডার্ণ হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ২০১১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কুমিল্লার শৈলরাণী দেবী পৌর মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ কুমিল্লায় শিক্ষা বিস্তারে ব্যপক অবদান রেখেছেন। তিনি কুমিল্লা মাহিব একাডেমির পরিচালক।



তিনি মাষ্টার ট্রেইনার ছিলেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন বলে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করা থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমাজের নারীদের রাজনীতি বিষয়ে সচেতন করা,আত্মনির্ভরশীল করা সহ বিভিন্ন কর্মস্থলে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। অতি সম্প্রতি বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ''সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী'' এই ক্যটাগরীতে কুমিল্লা জেলা থেকে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন রোটারিয়ান কোহিনূর বেগম।


কোহিনূর বেগম মনে করেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে নারীদের এগিয়ে যেতে হবে। নারীরা সমাজে পড়ে থাকলে সেই সমাজ কখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। জয়িতা পুরস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জয়িতা পুরস্কার দেওয়ার কারণে সমাজে নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করার আগ্রহ বাড়বে। পুরস্কার মানুষকে কাজের উৎসাহ যোগায়। আশা করি এই পুরস্কার আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে।



রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কোহিনূর বেগম রোটারিয়ান হিসেবেও দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন। রোটারি ক্লাবে ডেপুটি গভর্নর, সহকারী গভর্নর হিসেবে ছিলেন। সামাজিক কর্মকাণ্ড কোহিনূর বেগমের ভেতরের শক্তিকে যতটা উদ্ভাসিত করেছে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তিনি ততটাই অনুরাগী। বিশেষত কুমিল্লার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান অনবদ্য। তিনি কুমিল্লার বাংলার মুখ শিল্প গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কুমিল্লা সম্মিলিত সংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি এবং কুমিল্লা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।


সফল শিক্ষাবিদ, সংগঠক ও সমাজ সেবক হিসেবে কোহিনূর বেগম 'ইউনাইটেড মুভমেন্ট ফর হিউম্যান রাইটস' সংস্থা থেকে পেয়েছেন এম এ জি ওসমানী পিস অ্যাওয়ার্ড-২০১৭। সমাজসেবা ও ব্যাবসা বাণিজ্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে পেয়েছেন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন স্মৃতি পদক। এই পদক প্রদান করে একুশে সাংস্কৃতিক পরিষদ। একইসালে শিক্ষা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য পান মৈত্রী পুরস্কার। এই পুরস্কার পান কলকাতা থেকে। ড. ত্রিগুণা সেন মঞ্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এর পক্ষে সৃজন বার্তা এই পুরস্কারে ভূষিত করেন কোহিনূর বেগমকে। শিক্ষা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৯.সালে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক মৈত্রী অ্যাওয়ার্ড পান কোহিনূর বেগম।



কল্যাণকর্মে নিজের নাম লেখা অবধি একের পর এক পুরস্কারে প্রাপ্তির ঝুলি শুধু ভরে উঠেছে কোহিনূর বেগমের কর্মসাফল্যের জোরে, তবে থামেনি তার গতি ও স্পৃহা। বরং প্রতিটি অর্জন পরবর্তী সাহসী কাজে উদ্যোগী করেছে কোহিনূর বেগমকে। তিনি এই বিশ্বাসেই পথ চলেন যে আজীবন কাজ করবেন দেশ ও দশের কল্যাণে। প্রজ্ঞা ও কল্যাণে পূর্ণ করে রাখবেন বাংলামায়ের প্রাণ।


বিবার্তা/এসবি/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com