শিরোনাম
কর্ম-সাফল্যে সুরের মূর্ছনা সংগীতা চৌধুরী
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১৯:০৩
কর্ম-সাফল্যে সুরের মূর্ছনা সংগীতা চৌধুরী
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

'তখন ছোট ছিলাম, ঘুম ভাঙতো কোনো সংগীত কিংবা সুরের মূর্ছনায়। মা-বাবা সকালে ডাকাডাকি করে ঘুম ভাঙাতেন না কখনো। হয়তো কীর্তন কিংবা বাদ্যযন্ত্রের কোনো সুর ছেড়ে দিতেন প্লেয়ারে। ঘুম ভাঙত সুরে— এতে করে স্নিগ্ধ সকালটা আরো সুন্দর হয়ে যেত। এখনো মনে হয়, সেই সুরের মূর্ছনা আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি কাজে প্রতিটি সাফল্যে মিশে আছে। ছোটোবেলার সেই সুর নিয়ে শিল্প-সংস্কৃতি গভীরভাবে মিশে আছে আমার মনে ও মগজে। যতটুকু কর্মোদ্যম যতটুকু সাফল্য যতটুকু আজকের আমি— তার বীজ সেই ছোটোবেলাতেই রোপিত হয়েছে।' কথাগুলো বলছিলেন সংগীতা চৌধুরী।



শিল্পজগতে একজন সফল নারী সংগীতা চৌধুরীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা বেশ মুশকিল। কোন বিশেষণটি আগে কোনটিই বা পড়ে বলা যায় তার ক্ষেত্রে সেটিই যেন এক গোলকধাঁধা। প্রশ্ন করতেই পারেন, কেন? উত্তর সহজ, সংগীতা চৌধুরীর জীবনজুড়ে শিল্পের নিদারুণ প্রতিধ্বনি। যখন মঞ্চে, নাটকে কিংবা অভিনয়ে ক্যামেরার সামনে থাকেন তখন তিনি সুন্দরের প্রতিমূর্তি, অনন্য উপস্থাপন তার। একইসাথে তার কণ্ঠ, তার অভিনয়, তার কর্মশৈলী— ক্যামেরার পেছনেও হয়ে ওঠে শৈল্পিক ও অসাধারণ।


সংগীতা চৌধুরী একাধারে অভিনয় ও বাচিক শিল্পী। থিয়েটার করছেন প্রায় ২৭ বছর ধরে, আবৃত্তির শুরু ছোটোবেলা থেকেই। মঞ্চনাটক, থিয়েটারের পাশাপাশি টেলিভিশনেও দেখা যায় তাকে। চলচ্চিত্রেও তিনি প্রিয় এক মুখ। অতি সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। একাধিক বিজ্ঞাপনচিত্রসহ ওটিটিতে কাজ করছেন সংগীতা। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আবৃত্তি বিভাগের প্রশিক্ষক। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত আবৃত্তিশিল্পী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রিভিউ কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট এর গভর্নিং বডি'র সদস্য। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি একাডেমিতে আছেন সহ-সভাপতি হিসেবে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক তিনি।



'নীলদর্পণ' নাটকে ক্ষেত্রমনির চরিত্রে

আরো উল্লেখ্য, তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য। বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের আবৃত্তি বিভাগের সমন্বয়ক। এছাড়াও, তিনি ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের এডুকেশনাল সেক্রেটারি, ভয়েস এন্ড ডাবিং প্রফেশনাল এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি (বিআইএফএস) এর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারি। অর্থাৎ নিঃসন্দেহেই অনুমেয়, কর্মময় এক সফল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সংগীতা চৌধুরী।



জাতীয় পর্যায়ে এগারোবার পুরস্কৃত হয়েছেন সংগীতা চৌধুরী। ১৯৮৫ সালে প্রথম পুরস্কার পান, এরপর আর থেমে থাকেনি প্রাপ্তি। আবৃত্তি, লোকনৃত্য, সাধারণ নৃত্য, দেশাত্মবোধক গান, শাস্ত্রীয় নৃত্য, অভিনয় শিল্পের এসব শাখায় এগারোবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে ভারতের কর্ণাটকের গুলবার্গা বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ক ইয়ুথ ফেস্টিভ্যালে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় একাধিক পুরস্কার অর্জন করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনেন।


তার কর্মক্ষেত্রের বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে শিশুরা। তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে প্রশিক্ষক, আবৃত্তি ও উপস্থাপনাশৈলী বিভাগে। সংগীতা চৌধুরী 'কস্তুরী' বাচিক পাঠশালার পরিচালক। 'রত্নগর্ভা' খেতাবে ভূষিত তাঁর মায়ের নামে গড়া 'কস্তুরী' সংস্কৃতি অনুশীলন কেন্দ্র পারিবারিকভাবে তাদের সংস্কৃতিচর্চার প্রতিষ্ঠান। কস্তুরী নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে তার। শিশু ও কিশোরদের জন্য খুব সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করছে 'কস্তুরী'। মানবিক বিকাশে সহায়ক এবং শিশুদের নান্দনিক ভবিষ্যতে বিশ্বাসী 'কস্তুরী'। সংগীতা শিশুদের বাচিক শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে চান, অর্থাৎ আবৃত্তি, অভিনয়, শুদ্ধ উচ্চারণ, গল্পকথন, উপস্থাপনাশৈলী সর্বোপরি বাচিক শিল্প ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত হওয়া জরুরি বলে মনে করেন সংগীতা।



'কোথায় জলে মরাল চলে' নাটকে দেবী সুন্দরীর চরিত্রে

সংগীতা চৌধুরী সম্পর্কে বিশেষভাবে আরেকটি কথা উল্লেখ করতে হয়, তিনি একজন গবেষক। বর্তমানে গবেষণা করছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে। 'বাংলাদেশের কবিতায় বঙ্গবন্ধু : ১৯৭০- ২০২০' এই বিষয়ে একাডেমিক গবেষণা করছেন তিনি।


জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক। সংগীতা চৌধুরীর বাবা শিক্ষাবিদ শ্রী হারাধন চৌধুরী এবং মা শিক্ষাবিদ স্বর্গীয় কস্তুরী চৌধুরী। শিক্ষকতা পেশা ছিল তাঁদের কিন্তু তাঁরা দু'জনেই ছিলেন সংস্কৃতিসেবী ও শিল্পপ্রেমী। জ্ঞানচর্চায় যতটা অনুপ্রেরণা দিতেন সন্তানদের ঠিক ততটাই প্রেরণা জোগাতেন শিল্পচর্চায়। তাঁদের অনুপ্রেরণা ও পরিচর্যাতেই সন্তানেরা অর্থাৎ সংগীতা চৌধুরী ও তার ভাইবোনেরা সংস্কৃতিচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে পথ চলছেন, তাদের শিল্পবোধ ও শিল্পকর্মের সৌন্দর্য আকীর্ণ করেছে শিল্পাঙ্গন।



বাবা-মায়ের সাথে সংগীতা চৌধুরী

বাবা ও মা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সংগীতা জানান, 'বাবা-মা আমাদের ভাইবোনদের জন্য এত পরিশ্রম করেছেন যা বলাই বাহুল্য। তারা জীবনের সব প্রচেষ্টা-শ্রম আমাদের পেছনে ব্যয় করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সবাইকে শিল্পবোধ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা। শিক্ষক হিসেবে কতই বা উপার্জন, তবু কোনোদিন আমাদের শিল্পচর্চাতে 'না' বলেননি বাবা-মা।'


মা কস্তুরী চৌধুরীর কথা বলতে গিয়ে খুব আপ্লুত হয়ে পড়েন সংগীতা, বছর পেরিয়ে ছে, মাকে হারিয়েছেন। তার মা কলকাতায় পড়াশোনা ও চাকরী করেছেন, শিক্ষক হিসেবে যেমন অসাধারণ ছিলেন তেমনি শিল্পের সাধনায় ছিলেন অতুলনীয়। সবচেয়ে দুঃখজনক, আসছে সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেতে যাওয়া 'ময়ূরাক্ষী' সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সংগীতার মা কস্তুরী চৌধুরী। জীবদ্দশায়
নিজের অভিনয় দেখে যাওয়া হলো না কস্তুরী চৌধুরীর। আজ শিল্পী নেই— তবু সরবে রয়েছে তাঁর শিল্পটুকু, রয়েছে শিল্পীর শিল্পবোদ্ধা চার সন্তান— ইন্দিরা চৌধুরী, মন্দিরা চৌধুরী, রাজীব চৌধুরী ও সংগীতা চৌধুরী। রত্নগর্ভা মায়ের চার রত্ন তারা।



'পুণ্যাহ' নাটকে সূত্রধর চরিত্রে

সংগীতা চৌধুরীর বড়দি ইন্দিরা চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আবৃত্তিশিল্পী, উপস্থাপক, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী এবং অভিনয়শিল্পী । তিনি বাংলাদেশের প্রথম সারির আবৃত্তি দল "বোধন আবৃত্তি পরিষদ"-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সংগীতা চৌধুরী জানান, দিদির হাত ধরেই আবৃত্তিতে আমার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা শুরু হয় বোধন আবৃত্তি স্কুলে। তিনি ২০১৯ সালে আবৃত্তি শিল্পে "শিল্পকলা পদকে" ভূষিত হন।


সংগীতা চৌধুরীর মেজদি মন্দিরা চৌধুরী বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একাধারে নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও আবৃত্তিশিল্পী।


সংগীতা চৌধুরীর একমাত্র ভাই রাজীব চৌধুরী একজন আইটি প্রফেশনাল। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ডগুলো সহ নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে আইটি সেক্টরে কাজ করছেন। তিনি নিজেও একজন আবৃত্তিশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী।


সংগীতা চৌধুরী আরো জানান, আমার দিদিমা স্বর্গীয় রাধারানী সরকার ছিলেন একজন গীতিকবি। তাঁর অনুপ্রেরণা, সাহচর্য ও পরিচর্যাতেই আমাদের সংস্কৃতি যাত্রায় এতদূর আসা। আমার মামা স্বর্গীয় ডাক্তার আশীষ বরণ সরকার ছিলেন একজন সংস্কৃতিসেবী। ছাত্রাবাস্থায় তিনি অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। মূলত আমার জন্ম একটি সংস্কৃতিবান্ধব পরিবারে। পরিবারের চেষ্টা, পরিচর্যা, অনুপ্রেরণা ও সংস্কৃতিবোধের উপর ভর করে আমার এতদূর আসা।



সংগীতা চৌধুরীর অভিনয় গুরু শ্রদ্ধেয় তারিক আনাম খানের সাথে

পরিবারের পাশাপাশি খুব শ্রদ্ধাভরে দু'টি নাম উল্লেখ করেন সংগীতা। বরেণ্য অভিনেতা ও নির্দেশক তারিক আনাম খান সংগীতার অভিনয়ের গুরু। প্র‍য়াত নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন থিয়েটারে তার অনুপ্রেরণা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই তিনি সেলিম আল দীনের সাহচর্য পান এবং থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার করতেন, পরে ঢাকায় থিয়েটার দল নাট্যকেন্দ্রে যুক্ত হন।



থিয়েটার প্রসঙ্গে তিনি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভালো কোনো নাট্যদলে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। সেই সময় সুযোগ ঘটেনি। পড়াশোনা শেষে শুরু হয় কর্মজীবন। এর মধ্যে ২০০৪ সালে নাট্যকেন্দ্রে যোগ দিই। দলের 'প্রজাপতি' নাটকেই আমার প্রথম কাজ। 'প্রজাপতি' নাটকের পর ডালিমকুমার, মৃত মানুষের ছায়া, দুই যে ছিল এক চাকর, বন্দুকযুদ্ধ,গাধার হাট, পুণ্যাহ, তীর্থযাত্রী নাটকে অভিনয় করেছি। তীর্থযাত্রী নাটকটি অতি সম্প্রতি টেকনিক্যাল শো সহ পাঁচবার মঞ্চায়ন হল।



'পুণ্যাহ' নাটকে মর্তুজি চরিত্রে

এছাড়াও, নাট্যম রেপার্টরী প্রযোজিত 'ডিয়ার লায়ার' এবং 'কোথায় জলে মরাল চলে' এই দুটি নাটকে অভিনয় করছেন সংগীতা চৌধুরী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় হ্যামলেট নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। বাংলা থিয়েটারের প্রযোজনায় 'নীলদর্পণ' নাটকে অভিনয় করছেন। নাটক, মঞ্চ, থিয়েটার মিশে আছে সংগীতার প্রাণে। এই প্রাণেই শিল্পের আকুল আবেদন তার।



'তীর্থযাত্রী' নাটকে একজন তীর্থযাত্রীর চরিত্রে

তবে, সংগীতার খুব পরিকল্পনামাফিক শিল্প-সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়া তেমনটা নয়। যেহেতু বাবা-মা শিক্ষক ছিলেন, বাড়িতে পড়াশোনাটা সবারই খুব জোরদার ছিল। তার নিজেরও বরাবরই পড়ালেখার প্রতি ঝোঁক। সেটার পাশাপাশি বাসায় সারাক্ষণই থাকত সাংস্কৃতিক আবহ। কলেজ জীবন পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা করেছেন।



'তীর্থযাত্রী' নাটকে তন্বীর চরিত্রে

সংগীতা চৌধুরী নিজে হতে চেয়েছিলেন শিক্ষক, এদিকে বাবা- মায়ের স্বপ্ন ছিল তিনি ডাক্তার হবেন। কপালের ফেরে ডাক্তারি পড়া হল না কিন্তু শিক্ষকতা পেশা জীবনে ঠিকই এলো। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে শিক্ষকতা করেছেন। নটরডেম কলেজ ও হলিক্রস কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি।


কর্মজীবন ও শিল্পজীবনের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কি না এই প্রশ্নের জবাবে সংগীতা বলেন, পরিবার থেকে খুব সাপোর্ট পেয়েছি, প্রতিবন্ধকতা আর কী। তবে, আমি ভীষণ দৃঢ় মনোবলের অধিকারী, কখনো ভেঙে পড়ি না, ভয় পাই না, ধৈর্য হারাই না। যখন অধ্যাপনা করতাম তখন একবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম যে হয় চাকরিটা করতে পারব, না হলে থিয়েটার। সেসময় মনে হল, না থিয়েটারই করবো। একরকম বাধ্য হলাম, চাকরি ছাড়তে। চাকরিস্থলে আমার থিয়েটারের কথা জানত, কিন্তু একটা সময় গিয়ে তাদের সহযোগিতা পেলাম না। থিয়েটার তো আমার আত্মার সাথে মিশে আছে, এটা ছাড়ি কী করে?



'মুজিব-একটি জাতির রূপকার' চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর মা সায়েরা খাতুনের চরিত্রে

থিয়েটার, আবৃত্তি ছাপিয়ে সংগীতা চৌধুরী সদর্পে পা রেখেছেন চলচ্চিত্র জগতে। চলচ্চিত্রে পা রেখে খুব গুরুত্বপূর্ণ সব কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন তিনি। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর নির্মিত শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব – একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর মা সায়েরা খাতুন-এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সংগীতা। তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্রে কাজ করাটা আমার অভিনয় জীবনে বড় প্রাপ্তি।



'মাইক' চলচ্চিত্রে

সংগীতা চৌধুরী সম্প্রতি অভিনয় করেছেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক'-এ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত পূ্র্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার (১১ আগস্ট)। সংগীতা চৌধুরী বলেন, 'মাইক' চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পেরে আমি ভীষণ খুশি। এমনিতেই শিশুদের সাথে কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। তার মধ্যে এই চলচ্চিত্রটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে নির্মিত এবং শিশুদের অভিনয়ে এই চলচ্চিত্রটি এককথায় দারুণ হয়েছে। সিনেমাটি কাহিনি ও নির্মাণকৌশলে চমৎকার একটা শিশুতোষ চলচ্চিত্র।


পান্না কায়সারের লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ : আগে ও পরে’ অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে সিনেমা ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’। এটি শহীদুল্লাহ কায়সার-পান্না কায়সার দম্পতির মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সারের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ি প্রোডাকশন থেকে নির্মিত হচ্ছে। এই সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন সংগীতা।



'দিগন্তে ফুলের আগুন' চলচ্চিত্রে

সংগীতা আরো বলেন, শিশুরাই জাতির কর্ণধার, আমাদের ভবিষ্যৎ, তারাই জাতির নেতৃত্ব দিবে, শিশুদের মধ্যে সংস্কৃতির বীজ বপন করতে না পারলে, প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে যে-কোনো সমাজ যেকোনো জাতি সাফল্যের আলো দেখতে পারবে না। শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে খুব জোরালোভাবে কাজ করতে হবে আমাদের সকলকেই।


সারাদিনের ব্যস্ততা সমন্বয় করেন কী করে জানতে চাইতে সংগীতা বলেন, আপনি যেসময় যে কাজটা করবেন টোটাল ফোকাসটা সেই কাজে থাকবে। মানুষ হিসেবে নানারকম চড়াই-উতরাই আমাদের পার হতে হয়, জীবনে অনেক ধরনের সমস্যা থাকবে কিন্তু সেগুলো ছাপিয়ে যখন যে কাজটা করছেন সেটার প্রতি মনোযোগী হলে অবশ্যই আপনি সফল হবেন। ছোটোবেলা থেকে বাবা-মাকে দেখেছি, বড়দি-মেজদি-দিদিমণি প্রত্যেককে দেখতাম তারা কী দারুণভাবে তাদের কাজের সময়ের সমন্বয় করতেন, এটা আমি পরিবার থেকে শিখেছি।


শিল্পী হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে সংগীতা চৌধুরী বলেন, আমার কাছে মনে হয়, আগে আপনার শিশুকে শিখতে দিন। জীবনযাপন এমনকি খাদ্যাভাস থেকে শুরু করে পুরো জীবনযাপনের প্রত্যেকটি স্তরে আপনার শিল্পচর্চার মধ্যে থাকতে হবে। শিল্পের সাধনা চাই, নাহলে শিল্পী হওয়া সম্ভব নয়।



সংগীতা চৌধুরী ১৯৯৬ সালে থেকে মঞ্চের পাশাপাশি চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করে আসছেন। নিয়মিত কণ্ঠ দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনচিত্রে ও ডকুমেন্টারীতে। এর বাইরে তিনি একজন ভয়েস আর্টিস্ট ও ডাবিং শিল্পী। দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক মেগা সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’-এ সুলতান সুলেমানের স্ত্রী হুররামের বাংলায় যে সংলাপ শোনা যায় তার কারিগরদের অন্যতম তিনি। এ ছাড়া রেপিড একশন ব্যাটেলিয়ন টিম,সুপার শপ ‘স্বপ্ন’সহ নানা বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে তিনি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।



সংগীতা চৌধুরী শিল্পচর্চা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকেই একটি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে বড় হয়েছি। থিয়েটার করতে চেয়েছি শৈশব থেকেই, যেভাবেই হোক থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই। আমি সামান্য মানুষ, নিজের জায়গা থেকেই আমার দেশের জন্য, আমার দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।



বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই যেমন থিয়েটার করতেন তেমনি যুক্ত ছিলেন ছাত্ররাজনীতির সাথে। রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম তাকে এখনো টানে, এখনও রাজনীতির অঙ্গনে তার বিচরণ। দেশের মানুষের সেবা ও কল্যাণে নিবেদিত হতেই থাকতে চান রাজনীতির মাঠে। আর থিয়েটার আত্মায় মিশে থাকবে, এর মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক উৎকর্ষে ভূমিকা রাখতে চান সংগীতা। দেশাত্মবোধ আর শিল্পপ্রেম বুকে ধারণ এক সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন অসামান্য প্রতিভার অধিকারী সফল নারী— সংগীতা চৌধুরী।


বিবার্তা/লিমন/এসবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com