প্রজনন ও নারী স্বাস্থ্যে কীর্তিমান ডা. হালিদা হানুম আখতার
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩, ১৬:১২
প্রজনন ও নারী স্বাস্থ্যে কীর্তিমান ডা. হালিদা হানুম আখতার
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

'একজন বাংলাদেশি হিসেবে কাজ করতে চেয়েছি। সবসময় চেয়েছি স্বাধীনভাবে কাজ করবো, কেন আমাকে ডোনারের আন্ডারে কাজ করতে হবে? বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে তাদের অধীনস্থ থাকা, কিন্তু সাব-অর্ডিনেট কেন থাকবো, আমি লিড দিতে চেয়েছি। এই জন্য দারুণ সব সুযোগ আমি ছেড়ে দিয়েছি। বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার, দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক সুযোগ ছিল আমার। কিন্তু আমার স্বপ্নই ছিল বাংলাদেশি একটা মেয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবো, বাংলার মেয়ে হিসেবে লোকে জানবে আমাকে।'



নিজের স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে এভাবেই বলছিলেন ডা. হালিদা হানুম আখতার। বিশিষ্ট প্রজনন ও নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. হালিদা হানুম আখতার। জন্মনিয়ন্ত্রণ, ব্রেস্টফিডিং, মাতৃমৃত্যু ও অসুস্থতা, গর্ভপাত এবং কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ওপর যার গবেষণা কার্যক্রম দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের শীর্ষস্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বহু পুরস্কার, সম্মাননায় ভূষিত তিনি।


ডা.  হালিদা হানুম আখতার বিশিষ্ট প্রজনন স্বাস্থ্য এপিডেমিওলজিস্ট। প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে ৩০ বছরেরও বেশি আন্তর্জাতিক কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। একজন ওবি/জিওয়াইএন হিসাবে তার ক্লিনিকাল প্রশিক্ষণের পর, ড. হালিদা হানুম আখতার জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে জনস্বাস্থ্যে ডক্টরেট লাভ করেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে তার নেতৃত্বের ভূমিকার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় প্রজনন স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (BIRPERHT) এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ছিলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম পরিবার পরিকল্পনা সংস্থার (FPAB) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং একটি তৃণমূল স্তরের সংস্থা তৈরি করেছেন যা নারীদের মাতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়। তার গবেষণার মূল ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে গর্ভনিরোধক কার্যকারিতা, প্রজনন স্বাস্থ্য চাহিদা এবং পরিষেবা, গর্ভপাত, এবং মাতৃত্বকালীন অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার।




ডা. হালিদা হানুম আখতার জন্মেছেন রংপুরে। বেড়ে ওঠা জীবনের গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার মা ড. হুমায়রা খানম গাইনোকলজিস্ট ছিলেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হওয়ার আগে থেকে। রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছি। তারপর ঢাকায় আসি, মেডিকেলে পড়ার জন্য। তখন ঢাকায় আসতে ১৮ ঘণ্টা সময় লাগত। প্রথমে ট্রেন, তারপর ফেরি পার হয়ে, আবার ট্রেনে ফুলবাড়িয়া স্টেশনে নামতাম। এই আঠারো ঘণ্টা ট্রাভেল করে পুরো মেডিকেলে পড়াশোনা। কিন্তু কখনো আনসেভ মনে হত না। লেডিস কম্পার্টমেন্টে উঠে যেতাম। সালোয়ার কামিজ পরা। মা প্রথমে রাজশাহী ভর্তি করবেন, নানাবাড়ি কাছে থাকো, কিন্তু আমি বললাম না, ঢাকা মেডিকেলেই পড়বো।


ব্যক্তিগত জীবন প্রসঙ্গে বলেন, আমার জীবনসঙ্গী (স্বামী) ইঞ্জিনিয়ার গোলাম ফরিদুদ্দিন আখতার। জীবন চলার পথে  আমার উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ থাকাকালীন সময় থেকে শুরু পারিবরিক জীবন, সন্তানদের দায়িত্ব পালনে তার সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। আমাদের দুই কন্যা- ফারহানা আক্তার রুহী, আফসানা আক্তার। তারা উচ্চ শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত এবং প্রবাসী।



কর্মজীবন শুরু হলো কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে ফোর্থ ইয়ারের শেষের দিকে আমার বিয়ে হয়ে গেল। গাইনি অবস্ট্রেক্টটিসে ইন্টার্নশিপ করলাম। তখন ফ্যামিলি প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট কেবল শুরু, ডাক্তার খুঁজছে, মোবাইল টিম, বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কাজ করবে, আমার বেশ মজা লাগল। আমার মা তো গাইনি ডাক্তার ছিলেন। সারাক্ষণ দৌড়িদৌড়ির মধ্যে থাকতেন মা। এই পেইন উঠছে রোগীর ডেলিভারি করছেন। এই সিজার করো, সারাক্ষণ মাকে এইসবে ব্যস্ত থাকতে দেখতাম, বড় মেয়ে হিসেবে এই দেখে বড় হয়েছি। জীবনের শুরু থেকেই দেখছি, নিজের কর্মজীবনও শুরু হল নারীর প্রজনন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দিয়ে। নূরজাহান রোডে আরবান ক্লিনিকে মেডিকেল অফিসার হিসেবে জয়েন করলাম।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর ১৯৬৯ সালে তিনি পরিবার পরিকল্পনা মোবাইল টিমের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। শুরু হয় মাতৃ মৃত্যু কমানো ও নারী স্বাস্থ্য উন্নয়নের লড়াই। কাজে যোগ দেয়ার কিছুদিন পর তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণে আমেরিকায় পাঠানো হয়। তিনিসহ মোট ৩ জনকে তখন বাংলাদেশ থেকে এই প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। ১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকায় পৌঁছার পর সেখানে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কোর্স করার ও প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। এগুলো শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৯৭১ সালের এপ্রিলে।


ডা. হালিদা হানুম আখতার বলেন, অনেক রোগী দেখতাম, দেখতাম নারীদের হাজারো সমস্যা কমপ্লিকেশন এসব দেখে মনে হতে শুরু করল, নারীদের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের কাজ খুব চ্যালেঞ্জ ছিল, তখন সেরকম কোনো পদ্ধতি ছিল না। এরপর সরকারের হেড মিনিস্ট্রি আমাদের আমেরিকা পাঠাল, আরও দুজন সিনিয়র আপার সাথে ছয় মাসের কোর্সের জন্য গেলাম। এর মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এপ্রিলে ফেরার কথা, মার্চে যুদ্ধ।


সেসময় অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটল। ইস্ট পাকিস্তানের কেউ কেউ ছিল আমাদের সাথে, সেসময় ওরা কেমন আলাদা হয়ে গেল। ওখানেই এক ধরনের ডিভাইডেশন। ইউএসএআইডি বলল, এর মধ্যে তোমাদের দেশে পাঠানো যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে পাকিস্তানিদের ওখানে থাকতে বলতে শুনেছি, কিছুদিন ওরা  (বাংলাদেশের মানুষ) একটু ঝামেলা করবে, প্রথম দিকেই কিছু মেরে ফেললেই ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করুন! অক্টোবরে ফিরলাম, দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে সেসময়েই।



মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা দ্বারা ধর্ষণের শিকার গর্ভবতী মেয়েদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি উদ্যোগ নেয়। যার নাম ‘সেবা সদন’। এই সদনে কাজ করার দায়িত্ব পড়ে ডা. হালিদা হানুমের ওপর। সেই দায়িত্ব হাসিমুখে সাদরে পালন করেছিলেন তিনি। একাত্তরে বিদেশে অবস্থান করায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে না পারার আক্ষেপটা এই কাজের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও কমাতে চেয়েছিলেন ডা. হালিদা হানুম আখতার। সেবা সদনে আসা নির্যাতিত নারীদের অপমানে কুঁকড়ে যাওয়া মুখগুলো আজো ব্যথিত করে তাকে।


তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আগের কাজে যোগ দেয়ার পরপরই অফিস থেকে আমাকে বলা হলো, যুদ্ধের সময় সারাদেশে যে নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য একটা বিশেষ ক্লিনিক খোলা হয়েছে। ওই ক্লিনিকে আমাকে ডেপুটেশনে পাঠানো হবে। এই প্রস্তাবে আমি কতটা খুশি হয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারব না। ধানমন্ডির ৩ নং সড়কের ‘সাদা বাহার’ নামে একটি বাড়িতে ক্লিনিকটি করা হয়েছিল। জানুয়ারিতে শুরু হয় সেবা সদনের কার্যক্রম। এমন কয়েকটা ক্লিনিক সারাদেশে তৈরি করা হয়েছিল।



সেবাসদনে কাজ করার সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন ডা. হালিদা হানুম আখতার।সেসময় নিয়ে বলেন, মেয়েরা আসতে শুরু করে। কারোর বাবা, কারোর ভাই, কিংবা কারোর স্বজন তাদের এখানে রেখে গেছে। তাদের কেউ কেউ ৭ মাস, কেউ ৮ মাসের গর্ভবতী। সবার চেহারা বিমর্ষ। কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলেই অঝোরে কাঁদত। এমন পরিস্থিতি যা বলে বোঝানো যাবে না, শুধু অনুভব করা যায়। শেষপর্যন্ত জিজ্ঞেস করাই বাদ দিলাম। একটি ঘটনা এখনো মনে হলে আমার চোখ ভিজে যায়। একজন কম বয়সী গর্ভবতী নারীকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। তিনি ক্লিনিকে আসেন খুব অসুস্থ অবস্থায়। তার গর্ভের সন্তান আগেই মারা গিয়েছিল। সেই কারণেই অস্বাভাবিকভাবে তার রক্তপাত হচ্ছিল। ফেনা ফেনা রক্ত। ডাক্তারি পড়ার সময় বইতে পড়েছিলাম গর্ভের সন্তান আগে মারা গিয়ে থাকলে এমন ফেনা ফেনা রক্তপাত হয়। সেদিন বাস্তবে দেখেছিলাম। কিছুতেই রক্তপাত থামানো যায়নি। আমার সামনেই মেয়েটা মারা যায়। মেয়েটার মুখটা এখনো চোখে ভাসে।


ডা. হালিদা হানুম বলেন, সেবা সদনে আসা মেয়েগুলোর আরেকটি বিষয় আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছিল। শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি ওদের মানসিক কষ্ট যে প্রচণ্ড ছিল তা তাদের দেখেই বোঝা যেত। পেশাগত দায়িত্বের আড়ালে একজন মা হয়ে সেদিন দেখেছি তাদের অপমানের কষ্ট আর যন্ত্রণা। নির্যাতিত নারীদের গর্ভে জন্মানো ওইসব শিশুদের বলা হতো যুদ্ধশিশু। জন্মানোর পর শিশুদের নেয়া হতো ‘টেরিজা হোম’ এ। ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরাই এসে নিয়ে যেতেন। পরে তারা ওই শিশুদের দত্তক দিত।



সন্তান জন্মের পর সেই মেয়েদের অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চাইতেন তাদের বাড়ি থেকে কেউ খোঁজ নিয়েছিল কিনা। ফোন করেছিল কিনা। কিন্তু যারা একবার তাদের রেখে গেছে কেউ আর তাদের খোঁজখবর নেয়নি। তবে তাদের সেই কথাটি বলতে পারতাম না। তাদের আশ্বস্ত করতাম। বলতাম, হয়তো ফোনে পায়নি। চিঠি হয়তো লিখেছে, আসবে। কিন্তু ওরাও বুঝে যেত তাদের আর বাড়ি ফেরা হবে না। আপনজনের কাছে ফেরা হবে না। সত্যি বলতে তাদের আর পরিবারের কাছে ফেরা হয়নি।


মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষ যখন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে তখন ওই নারীরা নীরবে কাঁদছে, নিজেদের লুকানোর পথ খুঁজছে। কিছুদিন পর তারা অনেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন এই নারীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেন। গঠন করলেন নারী কল্যাণ পুনর্বাসন কেন্দ্র। সেবা সদনটি বন্ধ হওয়ার পর আমিও আগের কাজে যোগ দিই। আমার দীর্ঘ কর্মময় জীবনে এই নির্যাতিত নারীদের সেবা করার যে সুযোগ আমি পেয়েছি তা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।



ডা. হালিদা হানুম আখতার বিগত ৩০ বছর ধরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সোসাইটি ফর গ্রামীণ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীদের কমিউনিটি ম্যাটারনিটি প্র্যাকটিশনার হিসেবে প্রশিক্ষণ দানে অসামান্য অবদান রেখেছেন। চিকিৎসা ও কল্যাণকর কাজে অবদান রাখায় তিনি ২০২২ সালে জি-১০০ আজীবন সম্মাননা পান। ২০০৬ সালে জাতিসংঘের জনসংখ্যা পুরস্কারে ভূষিত হন। জনসংখ্যা এবং ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণে অসামান্য কাজের জন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। জনসংখ্যার প্রশ্নে সচেতনতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ড. হালিদা হানুম আখতার ব্যক্তিবিভাগে এই পুরস্কারপ্রাপ্ত হন।


৭ ডিসেম্বর ২০০৩-এ ডায়রিয়া রোগ ও পুষ্টি বিষয়ক ১০ম এশীয় সম্মেলনে বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বের জন্য হোস্ট কান্ট্রি পুরস্কার প্রাপ্ত হন। গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক অ্যালামনাস অ্যাওয়ার্ড পান ১৯৯৭ সালে, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, সোসাইটি অফ অ্যালামনাই, বাল্টিমোর, এমডি, ইউএসএ। জার্মানির জাস্টাস-লিবিগ ইউনিভার্সিটি গিয়েসেন থেকে  উন্নয়নশীল দেশ পুরস্কার পান ১৯৯৫ সালে। পরিবার পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহ, জীবনব্যাপী গবেষণা, পরিবারে মাঠ কর্মীদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক কাজের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যের অবস্থার উন্নতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি দেয়।



নারী প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত 'জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ' এর ইন্টারন্যাশনাল হেলথ ডিপার্টমেন্টের জ্যেষ্ঠ সহযোগী ড. হালিদা ছিলেন ইউএসএআইডি-ডিএফআইডির এনজিও স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের প্রধান, কাজ করেছেন পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল এর সিনিয়র কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে। গর্ভবতী নারীদের জন্য গর্ভকালীন সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে 'মাটির ব্যাংক' ডা. হালিদার চিন্তাপ্রসূত। বাংলাদেশে সূর্যের হাসি স্বাস্থ্যসেবায় তার ভূমিকা অনন্য।



ডা. হালিদা হানুম আখতার আরো যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন:


★ ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফপিএবি) ঢাকা, বাংলাদেশ মহাপরিচালক, ২০০৫-০৮।


★ জনসংখ্যা ও উন্নয়নে অংশীদার (PPD), অংশীদার সচিবালয় ঢাকা, বাংলাদেশ সিনিয়র প্রজনন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।


★ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ ফর প্রমোশন অব এসেনশিয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজি, বিআইআরপিএইচটি ঢাকা, বাংলাদেশ
পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠাতা।


★ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০০৯-এ প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনার জন্য গ্লোবাল টেকনিক্যাল লিড হিসাবে CHS-এ যোগদান করেন।


★ এমসিএইচ প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেশন সেল ঢাকা, বাংলাদেশ প্রকল্প পরিচালক, ইত্যাদি।


এছাড়াও, প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতায় ডা. হালিদা হানুম আখতার বিভিন্ন বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন।


★ ড. পি.এইচ., জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৮১, জনসংখ্যার গতিবিদ্যা বিভাগ। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি দ্বারা প্রদত্ত বৃত্তি।


★ এম. পি. এইচ, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৭৯। দ্য পাথফাইন্ডার ফান্ড, বোস্টন থেকে বৃত্তি পুরস্কার।


★ ই.আই.এস. অফিসার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি), আটলান্টা, জর্জিয়া, ইউএসএ, প্রজনন স্বাস্থ্য বিভাগে, জুলাই ১৯৮১ থেকে জুন ১৯৮৩। দুই বছরের জন্য রকফেলার ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।


বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের অবস্থান এবং নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কথা বলা প্রসঙ্গে ডা. হালিদা হানুম আখতার বলেন, যখন ট্রেনিং দিয়েছি, কথা বলেছি, দেখি কাঁদছে মেয়েরা। বললাম, এই মেয়ে কান্দো কেন? বলে, 'আমরা তো আপনার মতো হতে চাইছি, বিয়া দিয়া দিছে, কিছুই করতে পারি নাই, কানবো না?' নারী তো একটা মানুষ, সামাজিক জীব। একটা নারীকে বিকশিত হওয়ার জন্য, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সমাজ ব্যবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ, শুধু সমাজ নয় পরিবারের সহযোগিতা খুব জরুরি। জন্মানোর পর থেকে নারী বৈষম্যের শিকার। গাছ থেকে ফুল চাইলে প্রমোট করতে হবে গাছকে, নারীর মূল্য যেভাবে বাড়বে সে ব্যবস্থা করতে হবে।



কীর্তিময় জীবনের সব অর্জন, প্রাপ্তি ও সম্মাননার মাঝে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেবা সদনে সেবাদানের সুযোগ প্রাপ্তিকেই জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে মনে করেন ডা. হালিদা হানুম আখতার। বেঁচে থাকার প্রতিটা মুহূর্তে কাজ করে যেতে চান আগের দিনের চেয়েও উদ্যমী ও সাহসী হয়ে। স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের নারীরা নিজেদের প্রতি সচেতন হবে, পাশাপাশি সমাজও নারীদের প্রতি সচেতন হবে। সুখী-সমৃদ্ধশীল বাংলায় নারী ক্ষমতায়িত ও সফল জীবন পাবে, এই প্রত্যাশাই করেন কীর্তিমান নারী ডা. হালিদা হানুম আখতার।


বিবার্তা/সামিনা/

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com