বনশ্রীতে নারী সাংবাদিককে হেনস্তা, গ্রেফতার ৩
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৪১
বনশ্রীতে নারী সাংবাদিককে হেনস্তা, গ্রেফতার ৩
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় এক নারী সাংবাদিককে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানসহ (২৫) তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।


বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) র‍্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সনদ বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


গ্রেঢতারকৃতরা হলেন— সোয়েব রহমান জিশান (২৫), মো. রাইসুল ইসলাম (২১) ও মো. কাউসার হোসেন (২১)।


সনদ বড়ুয়া জানান, ২ এপ্রিল রাতে বনশ্রীতে ঘটে যাওয়া নারী হেনস্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিষয়টি র‍্যাব-৩ এর নজরে এলে তাৎক্ষণিকভাবে ছায়া তদন্ত শুরু করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে নাম থাকা ও অজ্ঞাতনামা অভিযুক্তদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‍্যাব সদর দপ্তর, গোয়েন্দা শাখা এবং র‍্যাব-৩ এর একাধিক গোয়েন্দা ও অপারেশনাল টিম মাঠে নামে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।


তিনি জানান, র‍্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৩ এপ্রিল গভীর রাতে রামপুরা থানাধীন মেরাদিয়া এলাকা থেকে প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার ফুলহাতা গ্রামে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রমনা থানাধীন বেইলি রোড এলাকা থেকে মো. রাইসুল ইসলামকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বরিশাল সদর উপজেলার চহটা গ্রামের বাসিন্দা। এরপর শ্যামপুর থানাধীন গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে মো. কাউসার হোসেনকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও বরিশাল সদর উপজেলার রাজ্জাকপুর গ্রামের বাসিন্দা।


গ্রেফতারকৃতদের রামপুরা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।


রামপুরা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার (২ এপ্রিল) রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে রামপুরা থানাধীন বনশ্রী ই-ব্লক ৩নং রোডের শেষ মাথার জুস দোকানের ভেতরে ছিলেন ওই ভুক্তভোগী তরুণী।


ভুক্তভোগীর বয়ান মতে, সেসময় অজ্ঞাতনামা এক লোক বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল দেখে আমি তার নিকট জানতে চাই আমাকে চেনে কি না? কেন তাকাচ্ছেন বারবার। এ কথা শুনে উনি উত্তেজিত হয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করেন। এ কারণে আমি দোকান থেকে বের হয়ে আসি। আমি ও আমার ছোট ভাই ও বন্ধু দোকান থেকে বের হই।


বের হওয়ার পর ওই দোকানে অজ্ঞাতনামা দুজন প্রবেশ করে। খুব সম্ভবত ওই লোকের কাছ থেকেই তাকানোর বিষয়টি শুনে তারা আমার দিকে তাকালে কী হবে বলে টিজ করতে করতে দোকান থেকে বের হয়ে বিবাদী জিশানসহ অজ্ঞাতনামা দুজন আমার পথরোধ করে।


এটা দেখে আমার ছোটভাই তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন তারা আমার ভাইকে থ্রেট দেওয়া শুরু করে এবং বলে যে, ‘বাসা কই, চল বাসায় যাই’। আমি তখন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বলতে থাকি যে, আমাকে টিজ করায় আমার ছোট ভাই সামনে আসছে, আপনারা সরেন, ওরা আরও উত্তেজিত হতে থাকে এবং আমার ভাইকে দুজন ফেলে মারতে শুরু করে। তখন আমি আমার ভাইকে রক্ষার জন্য এগিয়ে গেলে পেছন থেকে বিবাদী জিশান ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা এসে আমাকে চুল ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে ও আমার শরীরে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি দেয়।


অন্যদিকে আমার ভাইকে মারপিট করতে দেখে আমার বন্ধু মাশফিক ভিডিও করতে গেলে তাকেও এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারে। এরপর বিবাদী জিশানসহ অজ্ঞাতনামা দুজন ব্যক্তি আমাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া শুরু করে এবং আরও বলতে থাকে যে, ‘রেপ করসি?’, ‘হ দেখ রেপ করসি’।


ঐ সময় বিবাদী জিশান মোবাইল ফোনে ফোন করে আরও অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন লোক নিয়ে আসে। সবাইকে শনাক্তও করা যায়নি, বিবাদী জিশানসহ অজ্ঞাতনামা দুজন ব্যক্তি আমাদের ফোন ফেলে দিচ্ছিল বারবার লাথি দিয়ে। বলছিল কার কাছে যাবি যা? একজন বলল, ‘আমি আনন্দ টিভির সাংবাদিক, যা কার কাছে বিচার চাওয়ার চেয়ে নে’।


তখন এক বয়স্ক লোক এসে ওদের সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করে বলতে থাকে যে, ‘আমি সমিতির নেতা, সমাধান করে দিব।’ তখন আমি ও আমার ছোট ভাই চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে চলে যাই।


এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে মামলা করেছি। আসামিদের শনাক্তে পুলিশকে ফুটেজ দিয়েছি। জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।


বিবার্তা/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com