শিরোনাম
রাজারহাটে রেণু-পোনা চাষ করে কোটিপতি ইসহাক
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৪৮
রাজারহাটে রেণু-পোনা চাষ করে কোটিপতি ইসহাক
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে দেশীয় প্রজাতির যেসব মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে ধানী-ফিঙ্গাললীন, রেণু-পোনা টেবিল ফিস উৎপাদন করে কোটিপতি হয়েছেন রাজারহাট উপজেলার চেতনা এলাকার মৎস্য চেতনা হ্যাচারি অ্যান্ড নার্সারির মালিক ইসহাক আলী।


এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন স্থানীয়ভাবে সম্মাননা ক্রেস্ট এবং ওয়ার্ল্ড ফিস, অক্সফাম আরডিআরএস বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা। স্থানীয় মাছ চাষিদের মতে, মাছ চাষ ও মাছের রেণু-পোনা উৎপাদনে দেশের মধ্যে সফল ব্যক্তি ইসহাক আলী। সততা ও কঠোর পরিশ্রমই তাকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। যার ফলে দেশের অধিকাংশ জেলার মাছ চাষির মুখে ইসহাক আলীর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।


১৯৮৪ সালে ইসহাক ৩৫০০ টাকা দিয়ে মাত্র ২টি পুকুরে প্রথম মিনি নার্সারি করে মাছের রেণু-পোনা উৎপাদন শুরু করেন। তখন তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে কিছুটা লোকসানের মুখে পড়েন। পরবর্তী সময়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে রেণু-পোনা উৎপাদন শুরু করলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে এবং ১৯৯৮-২০০০ সালে নার্সারি থেকে হ্যাচারিতে পরিণত হয় প্রতিষ্ঠানটি।


২০০৭-২০০৮ সালে নানা কারণে যখন মৎস্য চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন, তখন ইসহাক রেণু-পোনা উৎপাদনের পাশাপাশি গুরুত্ব দেন দেশীয় প্রজাতির মাছের রেণু-পোনা উৎপাদনের ওপর। যার ফলে ওই সময় অন্যান্য মৎস্যচাষির মতো তিনি কোনো ক্ষতির মুখে পড়েননি। দেশীয় প্রজাতি মাছ চাষ ও রেণু-পোনা উৎপাদন অনেক বেশি লাভজনক হওয়ায় তিনি শিং, মাগুর, পাবদা ও গুলসা মাছের চাষ এবং রেণু-পোনা উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার অনেক বড় হ্যাচারি থাকার পরেও শুধু দেশীয় প্রজাতি মাছের রেণু-পোনা উৎপাদনের জন্য গত বছর তার হ্যাচারির পরিধি আরো বাড়াতে হয়েছে। নিজ এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় তিনি দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষের প্রসার ঘটানো শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকে তিনিই মাছচাষের জন্য এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যার কারণে মাছ চাষ করে এ উপজেলার অনেকেই লাখোপতি হয়েছেন।


স্থানীয় মৎস্যচাষি আলামীন, আমিনুর, মাসুদ ও আক্তারুজ্জামান জানান, রাজারহাট উপজেলায় প্রথমে ইসহাক দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ ও রেণু-পোনা উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। তার পরামর্শে এখন নিজ এলাকার মাছ চাষি ছাড়াও বিভিন্ন জেলার মাছ চাষিরা দেশীয় প্রজাতি মাছ চাষ শুরু করেছেন। অন্যান্য মাছের চেয়ে দেশীয় প্রজাতি শিং, মাগুর, পাবদা ও গুলসা মাছের দাম বাজারে অনেক বেশি। এই মাছগুলোর মধ্যে বর্তমানে পাবদা ও গুলসা প্রায় ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর শিং ও মাগুর ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এই দেশীয় প্রজাতির মাছের রেণুর কেজি বর্তমানে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া রুই কাতলা, মৃগেল, স্লিভারকার্প মাছ টেবিল ফিশে রূপান্তর করে। এক একটি টেবিল ফিস ৪-৫কেজি পর্যন্ত হয়।


প্রতিবছর মৎস্য সপ্তাহ দিবসে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ রেণু-পোনা উৎপাদনকারী হিসেবে ২০০২-২০১৭ সাল পর্যন্ত সম্মাননা পদক পান ইসহাক।



ইসহাক জানান, দিন দিন দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম ভুলে যাচ্ছে সেসব মাছের নাম। আর এ কারণেই আমি দেশীয় প্রজাতি মাছের রেণু উৎপাদন করছি। যাতে করে মানুষ সহসাই দেশীয় মাছ খেতে পারেন। বর্তমানে আড়াই একর জমিতে হ্যাচারি নির্মাণ ও ৬টি পুকুরে দেশি মাছের চাষ করছি। যাতে দেশি মাছ চাষ করে চাষিরাও সহজেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।


মৎস্যচাষি আলামীন জানান, বর্তমানে বছরে তিনবার প্রায় ১কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেন। খরচ বাদে ৫০ লাখ টাকার মতো আয় হয় তার। মৎস্যচাষি আক্তারুজ্জামান বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় মাছের গুণগত মান বজায় থাকে।


রাজারহাট উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল রহমান জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছের রেণু উৎপাদন ও মৎস্যচাষে ইসহাক আলীর অবদান ব্যাপক। শুধু রাজারহাট উপজেলাতেই নয়, তার অবদান আশপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি এখন মডেল। তার এই কৃতিত্বের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষির পদক পেয়েছেন।


বিবার্তা/লিমন/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com