শিরোনাম
রোহিঙ্গা প্রভাবে কক্সবাজারে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৪১
রোহিঙ্গা প্রভাবে কক্সবাজারে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রোহিঙ্গাদের প্রভাবে কক্সবাজারে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যে মেতে উঠেছে মালিকরা। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে কক্সবাজার শহরের যাচ্ছেন দেশি বিদেশি অনেক মানুষ। তাদের আগমনে বাড়ি ভাড়ার ব্যবসা এখন তুঙ্গে। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ইচ্ছামত ভাড়া বাড়াচ্ছেন মালিকরা।


উখিয়া শহরের বাহারছড়া এলাকায় একটি বাড়ির নিচ তলার দুই রুমের বাসাভাড়া ৭ হাজার টাকা। গত এপ্রিলে বাসাটি ভাড়া ছিল ৫ হাজার টাকা। এই কয় মাসে দুই হাজার টাকা ভাড়া বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ বিল এর বাইরে।


এদিকে দুই মাস যেতে না যেতেই এক মাসে আরও এক হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে আট হাজার টাকা করেছেন মালিক। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিলে আছে গরমিল। বাড়িওয়ালার ইচ্ছা মত এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা করে বিল পাঠানো হতো। সুনিদৃষ্ট মিটারও তারা করে দেয়নি। সব মিলে ওই ৫ হাজার টাকার বাসায় এখন ভাড়া দিতে হয় ৯ হাজার টাকা।


একইভাবে শহরের গাড়ির মাঠ এলাকার আরেক ভাড়াটিয়া জানান, গাড়ির মাঠের দুই নাম্বার গলির দুই রুমের ৩ হাজার টাকা দামের এক বাসায় তিনি গত ৪ বছর ধরে পরিবার নিয়ে থাকছেন। সেই থেকে ওই ভাড়া বাড়তে বাড়তে সাড়ে ৪ হাজার টাকা হয়। এদিকে গত ৫ মাস আগে হঠাৎ ওই বাসার ভাড়া আরো ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৭ হাজার টাকা।


ভাড়া কেন বাড়ানো হচ্ছে জানতে চাইলে বাড়িওয়ালা জানান, 'সব জায়গায় ভাড়া বাসার দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী আমারও ভাড়া বাড়াতে হয়েছে।'


এই ধরনের অভিযোগ শত শত ভাড়াটিয়ার। এমনও অভিযোগ আছে যে, নানা অজুহাত দেখিয়ে পুরাতন ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বেশি টাকা দিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া নিচ্ছে বাড়িওয়ালারা।


টেকনাফের চিত্র আরো ভয়াবহ। ওখানে ঘর ভাড়াকে বড় বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছে। এমনও খবর আছে যে, গরুর গোয়াল ঘর পর্যন্ত একটু পরিচর্যা করে বাসা বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছে মালিকরা। ওই এলাকায় যে বাসা ৫০০ টাকায় ভাড়া দিতো সেই বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়!


উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার সেবা প্রদানে কাজ করছে দেশি-বিদেশি এনজিওসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজন। একদিকে রোহিঙ্গা অন্যদিকে তাদের সেবা প্রদানে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের কারণে শহরে বেড়েছে ভাড়া বাসার চাপ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে বাড়ির মালিকেরা। তারা ইচ্ছেমত বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছে।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যতই বাড়ি ভাড়া ভাড়া করা কেন কোনো বাসা খালি যাচ্ছে না। রীতিমত অগ্রিম বুকিং হয়ে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু বাড়িওয়ালা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে যাচ্ছে তাই বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছে। ভোগান্তির শেষ থাকছে না ভাড়াটিয়াদের।


এ বিষয়ে প্রকৌশলী কানন পাল জানান, কক্সবাজারে বাড়ি ভাড়ার উপরে গণপূর্ত বিভাগের একটি সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও তা বাস্তবে প্রয়োগ নাই। বর্তমান সময়ে এই শহরে যেভাবে বাড়ি ভাড়ার দাম বাড়ছে তা কোনোভাবে মঙ্গলজনক নয়। মূলত রোহিঙ্গাদের কারণে এই শহর ও উখিয়া-টেকনাফে বাড়ি ভাড়ার চাপ বেড়েছে। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অপচর্চা করছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা চলে গেলে এই বাড়িওয়ালারা কী করবে?


কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, অনেক অসাধু বাড়িওয়ালা লোভে পড়ে পুরাতন ভাড়াটিয়াদের পর্যন্ত বের করে দিচ্ছেন। এনমও দেখা যায় ৫ হাজার টাকা দামের বাসা ভাড়া দিচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। অগ্রিম নিচ্ছে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে কক্সবাজারের অর্থনীতিতে পর্যন্ত মারাত্বক প্রভাব পড়ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নজরে আনা দরকার। আর এই অসাধু বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।


শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তজার্তিকসহ দেশি-বিদেশি শতাধিক সংস্থা কাজ করছে। আর এসব সংস্থার সাথে জড়িত রয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক লোকজন। যাদের বেশিরভাগই অবস্থান করছে শহরে।


জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, কক্সবাজার শহরে বাড়িভাড়া বাড়ার বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। এ আইন প্রয়োগে শহরের আশপাশে বাড়ির মালিকদের সাথে মিটিং করার পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/মানিক/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com