শিরোনাম
শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত লালমনিরহাটের কৃষকেরা
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:০০
শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত লালমনিরহাটের কৃষকেরা
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সবজিভাণ্ডার বলে খ্যাত লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। উত্তরাঞ্চলে এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় জেলার কৃষক পরিবারগুলোতে বেশ ব্যস্ততা বেড়েছে।


কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কৃষকেরা। শুধু নিজেদের জন্যই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন সবজি। শীতের শুরুতে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠান তারা।


সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি আলু, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মুলা, করলা, পটোল, পালং শাক ও লাল শাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজির চারা।


ফজর নামাজের পর পরই কাক ডাকা ভোরে কোদাল, নিড়ানী, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে এখন কৃষকরা। সকাল সকাল ক্ষেতে নেমে পড়েন সবজি পরিচর্যায়। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকায় দুপুরের খাবার ক্ষেতেই বসে কেথে হচ্ছে। সন্ধ্যা অবধি মাঠেই চারার পরিচর্যা ও চারার গোড়ায় পানি ঢেলে তবেই ফিরছেন সবাই বাড়ী। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে কোদাল চালাচ্ছেন, অনেকেই গাছের গোঁড়ালির পাশ দিয়ে ঘোরাচ্ছেন নিড়ানী, কেউবা খালি হাতেই গাছগুলো ঠিক করছেন।


কেউ বা নেতিয়ে পড়া চারার স্থলে সতেজ চারা প্রতিস্থাপন করছেন, আবার কেউ সার ছেটাচ্ছেন। এভাবে শীতকালীন সবজি নিয়ে চলছে কৃষকের কর্মযজ্ঞ। দিন যতই যাচ্ছে শীত আসার আগে বেড়েই চলছে কৃষকদের কাজের চাপ।


লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের দুরাকুটি গ্রামের কৃষক বাহার উদ্দিন বলেন, এই এলাকার জমি গুলো একটু উচু হওয়ায় ধান চাষে তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না তারা। আর ধান চাষ করলেও কোনো ভাবেই লোকসান ঠেকাতে পারছেন না, তাই রকমারি সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এই ইউনিয়নের অনেক কৃষক, তাতে লাভবানও হচ্ছেন তারা।


শীতকালীন সবজির বাজার ধরতে তারা ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন। কার্ত্তিক মাসের শেষ দিকে তাদের সবজি বাজারে উঠবে। এজন্য নার্সারি থেকে সবজি চারা সংগ্রহ করে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে রোপণ করেছেন। সাড়ে তিন একর জমিতে প্রায় ৩৫-৩৮ হাজার কপির চারা রোপণ করা হবে। প্রতিটি চারার পেছনে তাদের খরচ হবে প্রায় পাঁচ থেকে সাত টাকা। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি কপি ক্ষেতেই বিক্রি হবে ১৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যে। কপি ক্ষেত থেকে মাত্র তিন মাসে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন ওই দুই কৃষক।


লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক রহিম মোল্লা বলেন, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক ভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও তুলনামূলক কম। তবে এসব সবজি চাষে সবজির সেবায় ক্রটি করা যাবে না। কিন্তু রোগবালাই দমনে সবজি ক্ষেতে সব সময় তদারকি করতে হয়। ঠিক মতো পরিচর্যা করলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই সবজি বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। ইচ্ছে করলে প্রায় প্রতিদিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। সেই সাথে পরিবারের চাহিদা মেটানোও সম্ভব হয়। ক্ষেতে সবজি থাকা পর্যন্ত প্রত্যেক কৃষকের হাতে কমবেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলের বেলায় সম্ভব হয় না। এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো। সবমিলিয়ে সবজি চাষকেই লাভজনক মনে করছেন এই জেলার সাধারন কৃষকেরা।


কমলাবাড়ি গ্রামের সবজি চাষি করিম মিয়া জানান, সবজি চাষের ফলন ভাল পাওয়ার জন্য জমিতে সারাদিন সময় দেয়া হচ্ছে। এই সপ্তাহেই মূলা ও ফুল কপি বাজারজাত করবেন তিনি। এ বছর তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন তিনি।



লালমনিরহাট সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আলু ৫ হাজার ৪৮ হেক্টর, সিম, বেগুন, লালশাক, মুলা শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ৪’শ ১০ হেক্টর ও অন্যান্য সবজী ৮০০ হেক্টরসহ প্রায় ১৫ হাজারেরও অধিক জামিতে শাক-সবজি চাষ-আবাদ চলছে। এই জেলার সবজির কদর প্রায় সারাদেশেই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরো বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করে আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব।


কৃষকদের সবজি চাষে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। সবজি চাষে যুক্ত উপজেলার কৃষকরা এবার বেশ উৎফুল্ল। কারণ তারা প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুল থাকায় এবার উৎপাদিত ফসলের ফলন ও দাম বেশ ভালো পাবেন বলে মনে করছেন তিনি। বলেন, শীতকালীন সবজি চাষে সদও উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিদিন নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।



লালমনিরহাট জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধূ ভূষণ রায় বলেন, উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাট সবজি চাষের উপর অনুকূল পরিবেশ থাকায় প্রতি বছর জেলার চাহিদা মেটানোর পর এই জেলা থেকে প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে বিভিন্ন সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এখানকার কৃষকেরা কৃষিবান্ধব। তাই সবজি চাষের উপর জেলা কৃষি অফিস প্রতি মাসে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে সবজি চাষের পরামর্শ দিচ্ছে।


বিবার্তা/জিন্না/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com