শিরোনাম
পলিথিনের ঝুঁপড়িটাই কুলসুমের শেষ ভরসা
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৪৩
পলিথিনের ঝুঁপড়িটাই কুলসুমের শেষ ভরসা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের দেয়া বিনামুল্যের ঘর পেয়েছেন অনেকেই। আবার সুবিধাভোগী এমনো অনেকে আছেন যাদের ঘর পাওয়ার কথা না থাকলেও তারাও সরকারের এমন সুবিধা ভোগ করছেন।


তবে রেহেনা বেগমের (কুলসুম) চিত্র ভিন্ন কথা বলে। অনেকটা বেদনাদায়ক। গত বছর তার স্বামী মারা গেছেন। অভাবের তাড়নায় ঘরটাও বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। সব হারিয়ে ভিটে বাড়িতে এখন পলিথিনের তাঁবু।


দেখতে অনেকটা অস্থায়ী বিশ্রামাগার মনে হতে পারে। অর্ধেকটা শোবার জন্য চৌকি রাখা। পাশের অর্ধেকে একটি গরু রাখার জায়গা। বলা চলে সংযুক্ত গোয়াল ঘরে থাকছেন তারা। রোদের তাপ, শীতের ঠাণ্ডা আর বৃষ্টির ফোটা সহজেই ভেতরে ঢোকে। নিরাপত্তা মোটেও নেই। এমন একটি ঝুঁপড়িতে গত ২৪ দিন ধরে রয়েছেন ৬২ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা।


পাশের আরেকটা চৌকিতে থাকছেন তার ৩৫ বছরের ছেলে মোশারফ। ১০ বছর বয়সী নাতি আসলামও থাকে ওদের সাথে। শিশু আর নারীসহ তিনজনের থাকার একমাত্র জায়গা এই পলিথিনের ঝুঁপড়ি।


টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের কড়াইল-স্বল্পবড়টিয়া গ্রামে নজরে পড়ে বৃদ্ধার এমন এক আশ্রয়স্থল। দেশে যেখানে সরকার ঘরহীন মানুষকে বিনামুল্যে ঘর দিচ্ছে সেই দেশে আজকের দিনে এমন অমানবিক দৃশ্য অনেকেরই নজরে পড়েছে। কুলসুমের ঘরটি অনেকে দেখতে গেলেও কারও মানবিক সাড়া পাওয়া যায়নি।


সরজমিনে গিয়ে কথা হয় কুলসুমের সঙ্গে। গ্রামের সহজ সরল নারী তিনি। বছর হলো বিধবা হয়েছেন। স্বামীর নাম স্ত্রীর মুখে আনা যাবে না এমন বিশ্বাস এ যুগেও রেহেনার মধ্যে রয়েছে। অন্যকে দিয়ে স্বামীর নাম জানালেন সোনা মিয়া। গত বছরের এই দিনে মারা গেছেন সোনা মিয়া।


কুলসুম জানান, দিনমুজুর আর মাটি কাটার কাজ করতেন তার স্বামী। তখন থেকেই কুলসুম আর সোনা মিয়ার পরিবারে অসচ্ছলতা। গত বছর অসুস্থ হয়ে বিনে চিকিৎসায় মারা যান তিনি। এরপর তাদের ছেলে মোশারফও মাটি কেটে সংসার চালাচ্ছে। জোড়া তালির ছোট একটি ঘর থাকলেও তার অল্প আয়ে সংসার না চলায় ঘরটি বিক্রি করতে হয়।


পরে মা, ছেলে, নাতি সবাই চলে যায় টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া চরে মোশারফের শশুর বাড়ি। মোশারফের স্ত্রী আছমা পরিবারের একমাত্র সম্বল দুটি গরু রেখে মা-ছেলেকে তাড়িয়ে দেয়। কুলসুমের নাতনী মরিয়ম মায়ের কাছে থেকে গেলেও বাবার সাথে চলে আসে শিশু আসলাম। এরপর থেকেই ওই ঝুপড়িতে ওরা তিনজন থাকছেন।


এমন দৃশ্য দেখেও সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা মেলেনি কুলসুমের ভাগ্যে। সরকার ঘরহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দিলেও কুলসুম পাইনি সরকারি ঘর। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি কুলসুম। না বয়স্ক ভাতা, না পেয়েছে ন্যায্যমুল্যের চালের কার্ড। না ভাগ্যে জুটেছে ভিজিডি কার্ড। যদিও মঙ্গলবার প্রতিবেশি আরজু মিয়া ধার হিসেবে একটি ৫ সিট টিনের একচালা ঘরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবুও ছেলে, নাতি আর নিজের জন্য ওটাও যথেষ্ট হবে না।


কুলসুমের এই মহুর্তে একটি থাকার ঘরের প্রয়োজন। কিন্তু কে পাশে দাঁড়াবে কুলসুমের ? কে তৈরি করে দেবে কুলসুমের থাকার ঘরটি। এভাবেই খোলা আকাশের নিচেই-বা কদিন কাটবে কুলসুম?


কুলসুম জানান, ছেলের মাটিকাটার কাজ প্রতিদিন থাকে না। তবুও যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। শিশু নাতির সুরক্ষার জন্য হলেও তার একটি ঘরের প্রয়োজন। তার থাকার ঘরের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।


দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সাচ্চু জানান, এ বিষয়ে কেউ তাকে কিছু জানাননি। ইউপি ওয়ার্ড সদস্য আরিফুর রহমান বিষয়টি জানেন বললে ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার আরিফের সাথে কথা বলে একটি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।


এক্ষেত্রে স্থানীয়রা বলছেন, বিনামুল্যের ঘর পেতেও টাকা গুনতে হয়। টাকা দিতে না পারায় তার নাম বিনামুল্যের ঘরের তালিকায় না উঠতে পারে।


উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহমেদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিনামুল্যে ঘর বিতরণের তালিকা মুলত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। দেলদুয়ারে প্রায় ৫শ ঘর বিনামুল্যে নির্মাণ হলেও এদের মতো মানুষ বাদ পড়াটা দুঃখজনক। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদিরা আক্তার বলেন, আমি নতুন এসেছি, আমি প্রথম দিনই বলেছি এমন মানবিক ঘটনা থাকলে আমাকে জানাবেন। আমি ব্যবস্থা নেব। এখন জানলাম, দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। জানার পর তাৎক্ষণিক ওই বাড়িতে লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com