শিরোনাম
তিস্তার ভাঙনে অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৬
তিস্তার ভাঙনে অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দেশ হতে প্রায় বিছিন্ন বাংলাদেশের আলোচিত ভূ-খণ্ড আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম। তিনদিকে ভারত একদিকে তিস্তা নদী বেষ্টিত ভারতের অভ্যন্তরে ৩৫ বর্গ মাইল জুড়ে দহগ্রাম ইউনিয়ন। দহগ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে দেশের ঐতিহাসিক এবং আলোচিত দহগ্রাম ইউনিয়নের আয়তন দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের কারণে শত শত পরিবারের কপাল পুড়ছে।


মাথা গোঁজার ঠাই, বসতভিটা, আবাদী জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছেন দহগ্রামের তিস্তা পাড়ের নদী ভাঙ্গন কবলিত বাসিন্দারা। বাঁধ নির্মাণ করায় তিস্তা নদী ভারতীয় অংশে ভাঙছেনা। অথচ বাংলাদেশি অংশে অনবরত ভাঙ্গার ফলে বিলীন হচ্ছে দহগ্রাম আঙ্গরপোতার বিস্তীর্ণ এলাকা অস্তিত্ব এবং আয়তন হুমকির মুখে পড়েছে।


দ্রুত ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন এখানকার সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলো। নতুবা বাংলাদেশের আলোচিত ভূ-খণ্ড আঙ্গরপোতা-দহগ্রামের অস্তিত্ব তিস্তা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।


সরেজমিনে দহগ্রামের ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার এলাকায় গজলডোবা ব্যারাজ বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত। ফলে বাংলাদেশি অংশে তিস্তা নদী প্রবাহে সুফলের চেয়ে ক্ষতির প্রভাবই বেশি। দহগ্রামের বিপরীত দিকে নদীর মাঝ গতিপথ রোধ করে ট্রাকের পর ট্রাক পাথর ও স্পার ফেলে ভারত তাদের অংশে নির্মাণ করেছে বিএসএফ ক্যাম্প। ফলে নদীর স্রোতে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশের দহগ্রাম অংশে ভেঙে চলেছে।


নদী তীরবর্তী ৬/৭ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় পাঁচটি বিএসএফ ক্যাম্প। চরাঞ্চলবাসির দাবি, বিএসএফ সীমান্ত আইন অমান্য করে স্পিড বোর্ড ও নৌকা দিয়ে প্রবল গতিতে বাংলাদেশি নদী অংশে টহল দেয়। এতে করে স্রোতের পাশাপাশি তীব্র ঢেউয়ে আরো বেশি বেশী ভাঙ্গছে তিস্তা।


তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পায় আবার সহসাই পানি নেমে যায়। কারণ হিসেবে চরাঞ্চলবাসির দাবি উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ বাঁধ। পানির তীব্রতা বা পাহাড়ী ঢল নামলেই ভারত গেট খুলে দেয় আর তখনই ফুঁসে উঠে তিস্তা। মুহুর্তেই ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়, বালু পড়ে নষ্ট হয় ফসলী জমি। অপরদিকে পানি নামতে থাকলে রুদ্র মূর্তি ধারণ করে তিস্তা গ্রাস করতে থাকে একরের পর একর ফসলি জমি, বসতবাড়ী প্রভৃতি।


দহগ্রামের সৈয়দপাড়া এলাকার কৃষক ছকিম উদ্দিন (৪০) ও ইউপি সদস্য হবিবর রহমান হবি বলেন, হঠাৎ পানি বৃদ্ধি আর নেমে যাওয়ায় গত চৈত্র মাসে অনেকের পাকা ভুট্টা ক্ষেত ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। আষাঢ়, শ্রাবণ ভাদ্র মাস ছাড়াও আরো প্রায় দুই মাস তিস্তা নদী ফসলি জমি, মাথা গোঁজার ঠাই ভাঙতেই থাকবে।


মাথায় হাত অশ্রুশিক্ত দহগ্রামের কাতিপাড়া এলকার ইউসুফ আলী (৫০) জানান, পরিবারের ৫ জন সদস্য নিয়ে কি খেয়ে বাঁচব? জমি তো তিস্তার পেটে। আমাদের বাচাঁন, আমরা বাচঁতে চাই।


ভারতের জলপাইগুড়ি মহকুমার মেকলিগঞ্জ, হলদিবাড়ী, ধাপড়া এলাকার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের আঙ্গরপোতায় প্রবেশ করে আবারও ভারতীয় অংশে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে ভারত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নদীর তীর ঘেঁষে বিভিন্ন ধরনের বিশাল বিশাল শিমুল, বাবলা গাছ লাগিয়েছে। বাংলাদেশী অংশে প্রাবাহিত তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ছিটমহল তিস্তা নদীর বক্ষে প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।


তিস্তার চরের উমর আলী (৬০), ময়নুল হক (৫০), ছকিম উদ্দিন (৪০) বলেন, দহগ্রামের প্রায় ৬/৭ কি.মি অংশই তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিস্তা নদী প্রায় ৪ কি.মি এলাকা জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রেখেছে। দুর্গম তিস্তা চরে যাতায়াতের কোনো সড়ক না থাকায় চরম ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটাতে হয় তাদের। বাংলাদেশের এ ভূ-খণ্ডটির অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারকে এখনই এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন দহগ্রাম আঙ্গরপোতার অধিবাসীরা।


দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন বলেন, এক সময় এই ইউনিয়নে আসতে হলে ১৪-১৫ অপেক্ষা করে প্রবেশ করতে হতো। এখন ২৪ ঘন্টা তিনবিঘা করিডোর খোলা থাকে। আমরা দির্ঘদিন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার পর এখন আমরা স্বাধীন। কিন্তু তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে ইউনিয়নটির আকার দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ভাঙ্গন রোধে সরকারী ভাবে এখনই যদি কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তাহলে হয়তো একদিন মানচিত্র থেকে এই দহগ্রামের নামটি একেবারেই মুছে যাবে।


লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা) আসনের সংসদ সদস্য ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের স্টান্ডিং কমিটির সদস্য মোঃ মোতাহার হোসেন বলেন, বিষয়টি অনেকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডে জানানোর পর শুনেছি গত বছর সেখানে বাঁধ নির্মাণের জন্য ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও কি কারণে দহগ্রামে তিস্তার ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু করা হচ্ছে না, বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবগত করবেন।


এ ব্যাপারে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দহগ্রাম তিস্তা নদী ভাঙন রোধে গত বছর ৭০ কোটি টাকার ৪ হাজার ৫০ মিটারের একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে নৌবাহিনীর আওতাধীন খুলনা শিফইয়ার্ড লিঃ কাজ করবে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই এ বছরের শেষের দিকে কাজ শুরু হওয়ার কথা। তিস্তা নদীর বাম তীর রক্ষায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাঁধ নির্মিত হবে।


বিবার্তা/জিন্না/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com