শিরোনাম
জন্মদিনে এসআই উত্তমের বাড়িতে শোকের মাতম
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৩১
জন্মদিনে এসআই উত্তমের বাড়িতে শোকের মাতম
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীতে বাস চাপায় নিহত এসআই উত্তম সরকারের জন্মদিন ছিল সোমবার। জন্মদিনে নিজ বাড়িতে কফিনে করে ফিরলেন তিনি। এসআই উত্তমের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভার পশ্চিম বেতডোবা কর্মকার পাড়ায়।


সোমবার সন্ধ্যার পর লাশ বাড়িতে আনা হলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা। স্ত্রী তমা রানী ও মাতা কামনা সরকারসহ স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে গোটা পাড়া। রাতে তাকে কালিহাতী কেন্দ্রীয় শশ্মান ঘাটে সৎকার করা হবে।


মৃত ভজন সরকার ও কামনা রানী সরকারের দুই ছেলের মধ্যে উত্তম সরকার ছোট। বড় ছেলে দিপংকর সরকার সুমন ঢাকায় নাভানা গ্রুপে চাকরি করেন।


এসআই উত্তমের ভাই দিপংকর সরকার সুমন জানান, ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন উত্তম। কালিহাতীর আরএস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কালিহাতী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে বিবিএ এবং ঢাকার ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমবিএ পাশ করেন। ২০১২ সালে পুলিশের এসআই পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা, মোহাম্মদপুর এবং সর্বশেষ রূপনগর থানায় কর্মরত ছিলেন।


তিনি আরো জানান, উত্তম ২০১৪ সালে ঢাকার ধামরাইয়ের তমা রানী চৌধুরীকে বিয়ে করেন এবং তাদের উপমা সরকার নামের ৩ মাসের কন্যা সন্তান রয়েছে।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে উত্তমের স্ত্রী তমা রানী ও মা কামনা সরকার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তমা রানী বিলাপ করতে করতে বলছেন আমি তিন মাসের মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব, আমার কি হবে, আমাকে কে দেখবে? মা কামনা সরকার বলেন, আমার বাবাকে (উত্তম সরকার) জন্মদিনেই পোড়ান হবে। আমি এই বেদনা সইতে পারছি না, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। আমি হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।



সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ ছিলো নিহত এসআই উত্তম কুমার সরকারের জন্মদিন। ছেলের সাথে ঢাকায় থাকতেন মা কামনা রানী সরকার। ঈদের ছুটিতে কালিহাতী পৌরসভার পশ্চিম বেতডোবা গ্রামের বাড়িতে বাড়াটিয়ারা বাড়ি যাওয়ায় খালি থাকবে বলে এখানে এসেছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার দিন বিকেলে ছেলের জন্য পায়েস রান্না করে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো তার। কিন্তু বিকেলের ফোনে থেমে যায় কামনা রানী সরকারের ছেলের কাছে যাওয়া। আর মায়ের হাতের পায়েস খাওয়া হলো না উত্তম কুমারের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা গুলো বলছিলেন নিহতের বৌদি।


পাশের রুমে ৪৮ দিন বয়সী নিহতের মেয়ে উপমাকে কোলে নিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী তমা সরকার। আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো, মেয়ের কি হবে? রবিবার একসাথে ওর জন্য কেক, গিফট কিনতে যাওয়ার কথা ছিলো, সবসময় ওর সব পছন্দের খাবারগুলো রান্না করে দিতাম, এখন কাকে রান্না করে খাওয়াবো? আগামী বছর জন্মদিনে ভারতে স্ত্রী, কন্যাসহ বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিলো বলে জানান তিনি। এসময় স্বামী হত্যার বিচারও চান উত্তম কুমারের স্ত্রী তমা সরকার।


উত্তমের মরদেহ সন্ধ্যার পর কালিহাতীর বাড়িতে পৌঁছানোর পর তার স্বজনদের কান্নায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। মরদেহ একবার দেখার জন্য বাড়িতে ছুটে আসেন এলাকার শতশত মানুষ। উত্তমের বন্ধুরা জানান উত্তম অনেক মেধাবী এবং ভাল মনের মানুষ ছিলেন। পরে রাতে কালিহাতী কেন্দ্রীয় শশ্মান ঘাটে এসআই উত্তম সরকারকে দাহ করা হয়।



সড়ক দুর্ঘটনার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শোক জানাতে আসা মানুষদেরও, এটি দুর্ঘটনা নয় হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে তারাও দ্রুততম সময়ে এর বিচারের দাবি করেন।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com