শিরোনাম
আজো সংস্কার হয়নি সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০১৮, ১০:৫২
আজো সংস্কার হয়নি সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঝালকাঠি জেলায় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় কৃষকদের আবাদি জমির ফসল স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেই ডুবে যাচ্ছে। এর মধ্যে জরুরিভাবে প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের কাজ হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগণ্য। এর ফলে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে ফসল এবং পতিত পড়ে থাকছে হাজার হাজার একর জমি।


গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বর্ষা মৌসুমের আগেই জরুরি ভিত্তিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও অবকাঠামো মেরামতের জন্য ৩১ কোটি ৫৩ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ৭৯ লাখ টাকা। আর তাই এ বছর বর্ষার আগেই বাঁধের কাজ না হওয়ায় কৃষকরা ফসলহানির মুখে পড়েছে।


অপরদিকে ঝালকাঠি-রাজাপুর-কাঁঠালিয়া উপজেলার গাবখান থেকে আমুয়া পর্যন্ত প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮.৭ কিলোমিটার প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। প্রকল্পটির ডিপিপি পাশ হয়ে প্রাক্কলনের কাজ চলছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়। এটি বাস্তবায়িত হলে জেলার প্রায় ১৫ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমি ও এর ফসল বন্যা, প্লাবন এবং স্বাভাবিক জোয়ারে প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়।


জেলার ৫৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই এগুলোর অবস্থা ছিল জরাজীর্ণ। ফলে প্রতি বছর বর্ষায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার ভোগান্তিতে পড়ছে কৃষকরা।


পানি উন্নয়ন বিভাগ সূত্র জানায়, সিডরের পর নলছিটি উপজেলার ২৬, ঝালকাঠির ২, গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ১২, কেওড়া কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের পাঁচ এবং রাজাপুরের ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


এদিকে ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, বেড়িবাঁধ না থাকায় জেলার নলছিটি কাঁঠালিয়া রাজাপুরের অনেক আবাদি জমি সাধারণ জোয়ার এবং বন্যায় প্লাবিত হয়। ফলে রবি শস্যের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। এসব রবি শস্যের মধ্যে মুগডাল, মরিচ, তিল, আলু, কুমড়া, ফুট, শাক-সবজি উল্লেখযোগ্য।


ঝালকাঠির গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চরকাঠি গ্রামের কৃষক নূরু হায়দার এবং আবু ছালে জানান, তাদের গ্রামের পাশে বেড়িবাঁধ না থাকায় গতবছর গাবখান নদীর স্বাভাবিক জোয়ারে এবং সামান্য বর্ষায় আবাদি জমিতে পানি উঠে রবিসহ সব ধরনের ফসল বিনষ্ট হচ্ছে।


কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদী তীরবর্তী জয়খালী গ্রামের কৃষক জয়নাল, হামেদ এবং ছোবাহান মিয়া জানান, কাঁঠালিয়ায় পানি উন্নয়ন বিভাগ কোনো বেড়িবাঁধ না করায় স্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে যাচ্ছে আবাদি ও নিচু জমি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বিশেষ করে কাঁঠালিয়ার দক্ষিণ পাড়ের হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, জয়খালি, চিংড়াখালী, ছারাও কাঁঠালিয়া, রগুয়ারচর, শৌলজালিয়া, জাঙ্গালিয়া, আওরাবুনিয়া, আমুয়াসহ প্রায় ২১টি গ্রাম বেড়িবাঁধ না থাকায় ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকে।


কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ফোরকান বলেন, আমাদের কাঁঠালিয়া উপজেলা ঘিরে বাঁধ দেয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ পার্শ্ববর্তী জেলা বরগুনা পুরোটাই পানি নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের মাধ্যমে বেড়িবাঁধের আওতায় নেয়া হয়েছে। তাই বিষখালী নদীর পানির চাপে জোয়ারের সময় প্রথমেই আমুয়া ইউনিয়ন তলিয়ে যায়। এরপর ওই পানি কাঁঠালিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রবেশ করে তলিয়ে যায় মাঠ-ঘাট ফসলের জমি।


ঝালকাঠির কেওরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোয়জ্জেম হোসেন টিপু জানান, গাবখান নদীর পাড় ঘেঁষে কেওরা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ অনেক আগেই ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধের পথ ধরে এখন বাড়ি-ঘর এবং ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। বিশেষ করে ঝালকাঠি পৌরসভার পারকিফাইতনগর এলাকা থেকে পাকমহর পর্যন্ত এই মুহূর্তে বাঁধের কোনো চিহ্ন নেই।


ঝালকাঠি-রাজাপুর-কাঁঠালিয়া উপজেলার গাবখান থেকে আমুয়া পর্যন্ত ৪৮.৭ কিলোমিটার প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলম আক্তার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য চার সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করেছে। তাদের স্টাডি রিপোর্ট দাখিলের পর এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর আগেও একবার প্রকল্পটি সেখানে উপস্থাপন করা হলে প্লানিং কমিশন স্টাডি রিপোর্ট না থাকায় তা ফিরিয়ে দেয়।


বিবার্তা/আমিনুল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com