শিরোনাম
পরীক্ষামূলক উৎপাদনে পুরনায় চালু রাজশাহী রেশম কারখানা
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০১৮, ১৭:৩১
পরীক্ষামূলক উৎপাদনে পুরনায় চালু রাজশাহী রেশম কারখানা
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

বন্ধ করে দেয়ার ১৬ বছর পর পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে ফিরলো রাজশাহী রেশম কারখানা। শুক্রবার থেকে কারখানার ৫টি লুমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকালে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন।


রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় এই রেশম কারখানা। এক কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথা রেখে ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয়।


সে সময় অনেক আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি রাজশাহীবাসী। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেশম বোর্ডের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেন। এতে ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পকে ঘিরে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো রাজশাহীর মানুষ।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কারখানাটি চালুর পেছনে শ্রমিকদেরও অবদান আছে। তাদের আন্তরিকতা ছাড়া এটা চালু করা সম্ভব হতো না। আমরা রেশম কারখানাটিকে পূর্ণাঙ্গভাবেই চালু করতে চাই। এ শিল্পকে সামাজিক শিল্পে রূপ দিতে চাই। ঘরে ঘরে রেশম সুতা তৈরি হবে, মানুষ কারখানায় গিয়ে সুতা বিক্রি করে আয় করবে, আমরা এমন স্বপ্ন দেখি। এটা সম্ভব।


বাদশা আরো বলেন, লোকসানের অযুহাতে বিএনপি সরকার দেশের অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা কারখানাগুলোকে লাভজনক করে তোলার উপায় খোঁজেনি। আমরা বে-সরকারি কারণের হাত থেকে এই কারখানাকে রক্ষা করেছি। এখন গ্যাস দিয়ে কারখানা চালাতে চাই। এতে উৎপাদন ব্যয় ৩০ ভাগ কমে যাবে। তখন রেশম কারখানা একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, হঠাৎ একদিন রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ করে দেয়া হলো। হাহাকার শুরু হলো রাজশাহী বাসীর। শ্রমিকদের কেউ কেউ হার্টফেল করে মারা গেল। চাষিদের মন ভেঙে গেল। তারা পলুচাষ বন্ধ করে দিলেন। এভাবে রাজশাহীর রেশম শিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে গেল।


মহাপরিচালক বলেন, রাজশাহী রেশম কারখানায় প্রতিবছর গড়ে এক কোটি টাকা লোকসান হতো। সরকার কতো খাতেই তো ভর্তুকি দেয়। কারখানার এই লোকসান বহন করা সরকারের জন্য খুব বেশি কঠিন ছিল না। কারখানায় এই ভর্তুকিটা দিলে আজ এই রেশমের মাধ্যমেই সরকার কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারতো।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেণী, অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুন ও রেশম বোর্ডের সদস্য ড. সাবরিনা নাজ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলীসহ রেশম চাষি,শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা কারখানায় রেশম সুতা ও কাপড় উৎপাদন প্রক্রিয়া ঘুরে দেখেন। পাঁচটি লুম ছাড়াও থুইরিং, রিলিং এবং ওয়ার্কিং মেশিন চলতে দেখে তারা উচ্ছ্বসিত হন। সর্বশেষ ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর কারখানাটি এভাবে রেশম কাপড় উৎপাদন করেছিল। বন্ধ করে দেওয়ার দিন কারখানার ৩০০ জন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।


বন্ধ ঘোষণার আগে আশরাফুল ইসলাম টুটুল ২৪ বছর প্রধান মেকানিক হিসেবে রেশম কারখানায় চাকরি করেছেন। কারখানা বন্ধের পর তিনি অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। কারখানাটি চালু করতে তাকে ডেকে আনা হয়। দক্ষ এই কর্মী পাঁচটি লুম চালানোর উপযোগী করে তোলেন। টুটুল বলেন, এতো দিন পর কারখানাটি চালু হওয়ায় তিনি ভীষণ খুশি।


নগরীর শিরোইল কলোনীর বাসিন্দা পারভীন খাতুন ১৯৯৬ সালে রেশম কারখানার ওয়ার্কিং সেকশনে যোগ দিয়েছিলেন। কারখানা বন্ধ হওয়ার পর তিনি বেকার হয়ে পড়েছিলেন। অন্য কোনো পেশাতেও তিনি যেতে পারেননি। কারখানায় কাজের জন্য ১১ দিন আগে তার ডাক পড়ে। শুক্রবার থেকে তিনি কাজ শুরু করেছেন। পারভীন বলেন, এতো দিন পর কাজ ফিরে পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।


রেশম বোর্ড জানিয়েছে, বন্ধ ঘোষণার সময় রেশম কারখানায় মোট ৬৩টি লুম ছিল। এর মধ্যে উৎপাদন চলতো পুরনো ৩৫টি লুমে। নতুন ২৮টি লুম চালুর আগেই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের আগে কারখানাটি বছরে এক লাখ ৬ হাজার মিটার রেশম কাপড় উৎপাদন করতো। কারখানায় ৬৩টি লুম চালু করা গেলে বছরে কাপড় উৎপাদন হবে দুই লাখ ৮৭ হাজার মিটার।


বিবার্তা/তারেক/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com