শিরোনাম
যাত্রীশূন্য দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথ
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০১৮, ১০:০২
যাত্রীশূন্য দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

একটা সময় ছিল যখন উপকূলীয় গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারসহ অধিকাংশ মানুষের বসতি ছিল নদী কেন্দ্রিক। শুধুমাত্র যাতায়াতের সুবিধার জন্যই মানুষ নদী তীরে বসতি স্থাপন করতো। সেই সুবাদে দক্ষিণাঞ্চল বাসীর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌপথ। নিরাপদ ও আরামদায়ক হওয়ায় নৌপথে যাতায়াত করত অধিকাংশ মানুষ।


স্থানীয় লঞ্চ টার্মিনালগুলো জমজমাট থাকতো যাত্রীদের পদচারণায়। অথচ বর্তমানে যাত্রী শূন্যতায় ভুগছে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নৌযান গুলো। শত বছরের পুরনো এই নৌপথে এখনো ছোট-বড় লঞ্চ চলাচল করলেও তাতে যাত্রী নেই। যাত্রীর অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে নৌপথ গুলো।


অভাব অনটনের মধ্যে দিন পার করছেন দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের সাথে সম্পৃক্ত শত শত নৌ শ্রমিক। ফিটনেস বিহীন নৌযান, সময় মতো লঞ্চ না আসা, লঞ্চে বসার ভাল ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন এ অঞ্চলের নৌপথে চলাচল করা যাত্রীরা।


জানা গেছে, বরিশালের কীর্তনখোলা নদী থেকে শুরু করে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদী হয়ে সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২০০ কিলোমিটার নৌপথ। বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে ঝালকাঠি ও বরগুনা হয়ে সাগর পাড়ের শহর পাথরঘাটা পর্যন্ত বর্তমানে মাত্র দুটি বড় লঞ্চ চলাচল করে।


এছাড়া ঝালকাঠি থেকে রাজাপুর ও বেতাগী উপজেলার নিয়ামতী বন্দর হয়ে কাঁঠালিয়ার আমুয়া বন্দর পর্যন্ত চলাচল করে চারটি ছোট লঞ্চ। যেখানে একযুগ আগেও প্রতিঘন্টায় লঞ্চ চলাচল করতো।


গত সোমবার সকাল ১১টায় রাজাপুরের বাদুরতলা লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঝালকাঠি থেকে ছেড়ে আসা আমুয়া গামী এমএল সুজন নামের একটি ছোট লঞ্চে মাত্র দুইজন যাত্রী বসে আছেন। এছাড়া লঞ্চটিতে চালক, ইঞ্জিন মাষ্টার ও টিকিট মাষ্টার এই তিনজন স্টাফ রয়েছেন।


লঞ্চের চালক মো. দুলাল মোল্লা বলেন, এখন আর লঞ্চে যাত্রী হয় না। অনেক সময় খরচের টাকাই ওঠে না। মাঝে মধ্যে দুই একটা বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানের ট্রিপ দিয়ে কোন মতে টিকে আছি। যখন রাস্তাঘাট ছিল না, তখন যাত্রীর চাপে অনেক সময় যাত্রীদের নিতে পাড়তাম না। অথচ এখন যাত্রীর অভাবে লঞ্চ বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে।


টিকিট মাষ্টার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ঝালকাঠি থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় পাঁচজন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছেড়েছি। এরমধ্যে তিনজন বাদুরতলা ঘাটে নেমে গেছে। এখান থেকে কোনো যাত্রী ওঠেনি তাই দুইজন যাত্রী নিয়েই নিয়ামতী বন্দর হয়ে আমুয়া যাচ্ছি। তবে বর্তমানে রাস্তার যে বেহাল অবস্থা, আশাকরি লঞ্চে আবার যাত্রী হবে।


নিয়ামতী বন্দরের ব্যবসায়ী লঞ্চযাত্রী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, যদি ছোট নৌযানগুলোকে আরো আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক করা যেত তাহলে যাত্রীর সংখ্যা নিশ্চই আরো বাড়তো। আমাদের উপকূলীয় এলাকায় নৌযান সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ পূর্ণ পরিবহন। ভালো নৌযান হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ নদীতে ভ্রমণ করতে আসতো। শুধু কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিলেই নৌপথগুলোকে আরো বিস্তৃত এবং ব্যবসা সফল করা সম্ভব।


ঝালকাঠিতে কোনো কর্মকর্তা না থাকায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিআইডব্লিউটি এর ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা নিয়মিত ছোট-বড় নৌযানের ফিটনেস পরীক্ষা করে থাকি। নৌপথকে আরো আরাম দায়ক করতে সম্প্রতি রাজাপুর, বেতাগী, কাকচিরাসহ বেশকিছু ঘাটে নতুন পল্টুন স্থাপন করা হয়েছে।


অপর এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, সড়ক পথে অল্প সময়ে যাতায়াত করা যায় তাই সময় বাঁচাতে নৌপথে যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। তবে লঞ্চ ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণের নিশ্চয়তা দিতে পারলে নৌপথে চলাচল করতে যাত্রীরা আগ্রহী হবে।


বিবার্তা/আমিনুল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com