শিরোনাম
মাগুরায় জম-জমাট ঈদবাজার
প্রকাশ : ১২ জুন ২০১৮, ১৬:৩৩
মাগুরায় জম-জমাট ঈদবাজার
মাগুরা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস কখনো রোদ আবার কখনো এক পসলা বৃষ্টি। যেন জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ সময়ে মেঘের সাথে উত্তাপ ছড়ানো ঝাঁঝালো রোদের লুকোচুরি খেলা। সাথে তীব্র গরম। তবুও যেন থেমে নেই ঈদের কেনাকাটা। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠেছে মাগুরার ঈদ বাজার। ঈদের আনন্দটুকু পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে প্রিয় জনের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে ক্রেতাদের রোজায় ক্লান্তিকর ছুটাছুটি।


পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য বাহারি রঙ-বেরঙের আলোক সজ্জায় সেজেছে শহরের বিভিন্ন বিপনি বিতানগুলো।
ইতিমধ্যে শহরের বেবী প্লাজা, নুর জাহান প্লাজা, সুপার মার্কেট, কাজী টাওয়ার মার্কেট, মরিয়ম প্লাজা, খান প্লাজা, জমজম মার্কেট, আল-আমিন মার্কেট, জুতাপট্টির দোকান মালিকগুলো ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী নানা রঙের পরসা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা।


ঈদ কেনাকাটায় সরগরম হয়ে উঠেছে ফ্যাশন হাউজ, বিপনীবিতান আর কসমেটিকস্ কর্ণার। কেনাকাটায় শিশু, কিশোর, তরুণ-তরণী, যুবক-যুবতী ও মহিলাদের ব্যস্ততা বেড়েছে।


শহরের হাজী কমপ্লেক্সে অবস্থিত দোয়েল ফেব্রিক্স এন্ড টেইলার্স মালিক আলাউদ্দিন হোসেন জানান, পনের রোজার পর থেকে দোকানে খুব ভীড়। আমরা ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে প্রতি বারই নিত্য-নতুন আধুনিক ডিজাইনের থ্রি-পিচ সংগ্রহে রাখি। এর মধ্যে লেটেষ্ট থ্রি-পিচ হচ্ছে ফ্লোর টাচ। এ থ্রি-পিচটিতে এ্যাম্বডারি ও সুনিপুন –সুদক্ষ হাতের কারুকাজ থাকায় তররুণীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। ফ্লোর টাচ থ্রি-পিচ ঈদ বাজারে ৪ হাজার-৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।


পোশাক তৈরি করতে আসা আশা নামের এক তরুনী জানান, এবারের ঈদে আমার পছন্দের তালিকায় রয়েছে ফ্লোর টাচ থ্রিপিচ। এ থ্রি-পিচের কারুকাজ ভালো হওয়াতে এটি আমার খুবই পছন্দ।


সুপার মার্কেটের অন্যতম গামেন্টস লিখন ফ্যাশানের সৈয়দ ফজলুল ইকবাল প্রিন্স জানান, প্রতি বারই আমি ঈদ কালেকশনে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক সংগ্রহে রাখি। এবার ঈদে সবচেয়ে আকর্ষনীয় পোশাকের মধ্যে রয়েছে শামুক সিল্ক। এতে হাতের কারুকাজ সুন্দর থাকায় শিশু থেকে শুরু করে তরুনীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তাছাড়া লং ফ্রক, চায়না ফ্রক, র্সারা, ফ্লোর টাচ পোশাক ভাল চলছে। প্রতিবারই আমার বিক্রি ভাল । এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।


কেনাকাটা বা ফ্যাশান সচেতনতাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও ছেলেদের জন্য ও আয়োজনের কমতি থাকে না পোশাক বাজারে। মেয়েদের পাশাপাশি পছন্দ মত আধুনিক মর্ডান রেডিমেড ড্রেসটি বেছে নিতে এখন ছেলেদের ও চলছে কেনাকাটার ব্যস্ততা। মাগুরা শহরের বিভিন্ন ফ্যাশান হাউজ, শপিং মল এবং ছেলেদের ছোট বড় রেডিমেট পোশাকের মার্কেটের গিয়ে দেখা গেছে নতুন কাট ও ডিজাইনের ভিত্তিতে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের শার্ট ও টি শার্টের কালেকশন রাখা হয়েছে দোকান গুলোতে। রং বাহারি টি শার্টের পাশাপাশি এবার ক্যাজুয়াল ব্র্যান্ডেড প্রিন্টের শার্টের কদর রয়েছে এবার।


বেবী প্লাজা শপিং মলের নিউ মডেল গার্মেন্টসের সত্তাধিকারি মাসুদ পারভেজ জানান, এবার ঈদের জন্য তরুনরা জিন্স প্যান্ট আর বাহারী রঙের পাঞ্জাবী কিনছেন বেশি। পাশাপাশি আমার দোকানে ছোট শিশুদের নানা ধরনের বাহারি পোশাকের আয়োজন। এবার বেশি গরম পড়েছে তাই শিশুদের দেশি সূতির পোশাকের চাহিদা বেশি।


তিনি আরো জানান, ছেলেদের জিন্সের প্যান্ট দেশি ১ হাজারথেকে ১৫শ টাকা, চায়না থাই ১৬শ টাকা ২৫শ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। টি শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ২শ টাকা ১৫শ টাকা পর্যন্ত। ঈদের প্রথম থেকেশেষ পর্যন্ত পুরুষের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো পাঞ্জাবী। তাই শহরের বিভিন্ন বিপনি-বিতানগুলোতে সাজানো হয়েছে দেশি বিদেশী সব পাঞ্জাবী দিয়ে। ঈদ উপলক্ষে এসব পাঞ্জাবীর রং এবং নকশায়ও আনা হয়েছে ব্যতিক্রমী ঢং। চিরাচরিত সাদা, কালোসহ নীল, বেগুনী, জলপাই, হলুদ, ছাইসহ হালকা রঙে নতুনত্ব আনা হয়েছে।


বেবি প্লাজাসহ শহরের সুপার মার্কেটের বিভিন্ন ব্যবসায়ী জানান, এবার সাদার পাশাপাশি সূতি, প্রিন্ট স্টাইফ সহ বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবী ক্রেতারা কিনছেন। কেউ কেউ আবার এ্যাম্বোটারি ও হাতের তৈরি পাঞ্জাবীও কিনছেন।
পোশাক কিনতে আসা গৃহিনী রুশনা মাহমুদ জানান, শিশুদের পোশাকের এবার খুব দাম । পছন্দের মত ভাল পোশাক পাচ্ছি না। অনেক ঘুরে ঘুরে স্বণালী গার্মেন্টস থেকে একটি সূতি পোশাক কিনছি।


এবারের ঈদে কিশোরী, তরুনী, নববধূ ও বাঙালী নারী পছন্দের তালিকায় রয়েছে শাড়ি। ব্যবসায়ীরা জানান, ১৫ রোজার পরথেকে বিভিন্ন বয়সী নারীরা শাড়ির দোকানে ভিড় করছেন। ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে নিত্য নতুন শাড়ি আনতে হয় আমাদের। শাড়ির বাজারের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। এবার ঈদে দেশি শাড়ির ব্যাপক চাহিদা হয়েছে।


ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের সত্তাধিকারি তাপস অধিকারি জানান, ঈদে বরাবরই দেশি শাড়ির চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন প্রিন্ট আর নানা রঙের বৈচিত্র বাংলাদেশী নারীকে করে তোলে আর্কষণীয়। বাংলাদেশি শাড়ির মান ও কারুকাজ ভাল হওয়াতে এখন এ শাড়ি বাইরেও যাচ্ছে। এবার জর্জেট ,নেটের জজেট শাড়ি ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকার জামদানি, টাঙ্গাইল ও তাঁতের শাড়ি ও অনেকে কিনছেন।


পোশাকের পাশাপাশি নতুন জুতা, সেন্ডেল দোকানেও উপচে পড়া ভিড়। শিশু তরুণ-তরুণী, নারী-পুরষ তাদের পছন্দের সু কিনতে সবাই ব্যস্ত। পাদুকা ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি সু’র পাশাপাশি শিশু বাচ্চাদের চায়না সু’র কদর বেশি। আমরা ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী নতুন নতুন ডিজাইনের আকর্ষণীয় সব সু এনেছি। বিশ রোজার পর থেকে উপচে পড়া ভিড়। বেচাকেনা ভাল।


পাশাপাশি ঈদের পছন্দের পোশাক কিনতে শহরের ফুটপাত গুলোতেও নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেয়েদের লেহেঙ্গা, ফ্রক, শার্ট, প্যান্ট, বেবি ড্রেস, পাঞ্জাবীসহ বিভিন্ন ধরণের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে শহরের থানার সামনের দোকান গুলোতে।


শহরের পাশ্ববতী আবালপুর গ্রামের অটো চালক তৈয়ব আলী জানান , আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদিন কষ্ট করে অল্প টাকা রোজগার করি। ঈদের ছেলে-মেয়েদের পোশাক কিনতে এসেছি। অন্যবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি হওয়ায় হিমসিম খাচ্ছি। নিজের পোশাকটি না কিনতে পারলেও ছেলেমেয়েদের কিছু পোশাক কিনেছি।


অন্যদিকে, ঈদকে সামনে রেখে সরেজমিনে জেলার শ্রীপুর, শালিখা, মহম্মদপুর উপজেলার কয়েকটি বাজারে অবস্থিত দোকানগুলোতে ও দেখা যায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। উপজেলা শহরের পুটপাতগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষ চুরি-মালার দোকানের পরসা বসিয়েছে। সেখানে শিশুদের ক্লিপ, নানা রঙের চুড়ি, ফিতা, মালা, চেনসহ নানা উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে।


মাগুরা জেলা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রতিটি বাজার ঘাটের দোকানগুলো ও প্রধান-প্রধান সড়কগুলোতে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন মার্কেটে ও বিপনিবিতানের সামনে পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে।


বিবার্তা/মাহামুদুন/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com