শিরোনাম
নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস আজ
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০১৮, ০৯:১০
নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস আজ
নাটোর প্রতনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

৪ জুন, নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস। একাত্তরের ৪ জুন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি রেড লেটার ডে। এ দিন ছাতনীতে ঘটে মুক্তিযুদ্ধে নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড।


’৭১ সালে এদিন রাতে হানাদার বাহিনীসহ কয়েকশ বিহারী নাটোর সদরের ছাতনী গ্রামসহ আশপাশের ১০টি গ্রামে ঢুকে চার শতাধিক ঘুমন্ত বাঙালীকে ধরে ছাতনী স্লুইচ গেটে এনে একত্রিত করে হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে গুলিসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে এবং জবাই করে হত্যা করেছিলো। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে এসিড দিয়ে ঝলসানো হয়। পরে এসব শহীদদের লাশ ছাতনী স্লুইচ গেটসহ আশেপাশের পুকুর ও ডোবায় মাটিচাপা দেয়া হয়।


১৯৭১ সালের নাটোরের ছাতনী গ্রামের গণহত্যার সেই নৃশংস ও হৃদয় বিদারক কথা আজও এ এলাকার মানুষের মনে নাড়া দেয়। মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর উত্তরাঞ্চলের হেড কোয়ার্টার ছিল নাটোরে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোরের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালিয়েছে। এর মধ্যে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল নৃশংস ও হৃদয়বিদারক। নাটোর শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে ছাতনী গ্রামের অবস্থান।


প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা তৎকালীন এমসিএ শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর বাড়ি ছাতনী গ্রামে হওয়ায় এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা অবাঙালিদের আক্রোশে পড়ে এই গ্রাম। হানাদার বাহিনীসহ কয়েকশ বিহারী ৪ জুন গভীর রাতে ছাতনী গ্রামসহ আশপাশের নারীবাড়ি, শিবপুর, পণ্ডিতগ্রাম, বারোঘড়িরা, ভাটপাড়া, আমহাটি, ভাভনি, হাড়িগাছা, রঘুনাথপুর ও বনবেলঘরিয়াসহ ১০টি গ্রামে ঢুকে ঘুমন্ত মানুষদের হত্যা করে।


এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে প্রতিবছর স্থানীয় লোকজন দিবসটি পালন করলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি পালন করার কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। সবার নাম সংগ্রহ করতে না পারায় মোট ৬৪ জনের নাম খোদাই করে রাখা হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ায় আক্ষেপ করেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, ছাতনী গণহত্যার দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হোক। সেইসঙ্গে দেশের শুরু হওয়া মানবতাবিরোধীদের সঙ্গে ছাতনী গণহত্যার ইন্ধনদাতাদেরও দ্রুত বিচার শুরু করার দাবি জানান।


স্মৃতিস্তম্ভের শহীদের তালিকা দেয়া আছে তারা হলেন, ছাতনী গ্রামের মনির উদ্দিন সরকার, কালা মিয়া, নূরুজ্জামান, আব্দুল হান্নান, নূর মহাম্মদ, শফিউল্লাহ, আবু বকর, আব্দুল্লাহ মুন্সী, হোসেন পাটোয়ারী, আব্দুল জব্বার, কালা পাল, নিমাই চৌধুরী, শুকুমার চৌধুরী, জসিম উদ্দিন শাহ, আজাহার উদ্দিন শাহ, মনতাজ উদ্দিন শাহ, আবুল কালাম, শাহাবুদ্দিন, কালাম প্রাং, ইসমাইল, ইব্রাহিম, শুটকা, আজাহার, আব্দুর রহমান, কফিল উদ্দিন।


বনবেলঘড়িয়া গ্রামের সেকেন্দার, কোরবান আলী, নরেশ ঠাকুর, কালু মিয়া, সুলতান মিয়া। গোকুলপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ, আব্দুল কাদের। পণ্ডিতগ্রামের মনোয়ার হোসেন মনু, ডাঃ আব্দুল হামিদ, সোনা চৌকিদার, চতু মন্ডল। ভাবনী গ্রামের মেছের প্রাং, শুকবাস মন্ডল, ওসমান শেখ, এছার উদ্দিন হোসেন মন্ডল, কছির উদ্দিন মোল্লা, বাদেশ প্রাং, সুলতান পাটোয়ারী, কেয়ামত মোল্লা, রুহুল আমিন ভূঁইয়া, আছের শেখ, কেকু প্রাং, আব্দুর রহমান, কাঁচু প্রাং।


ছাতনী দিয়াড় গ্রামের আয়ুব আলী মন্ডল, ছাতনী পূর্বপাড়া গ্রামের সৈয়দ আলী মুন্সী, ছাতনী শিবপুর গ্রামের পচাই দফাদার, হামিদ দফাদার, ভাটপাড়া গ্রামের ময়দান মোল্লা, শিবপুর গ্রামের সাধু প্রাং, খলিল মন্ডল, শুকুর প্রাং, হাড়িগাছা গ্রামের কালা চাঁদ, রঘুনাথপুর গ্রামের শুকলাল, বড়গাছা গ্রামের জঙ্গী, আব্দুল জব্বার, জসিম উদ্দিন ও আব্দুল কাশেম। এছাড়া নাম না জানা আরো প্রায় তিনশত শহীদ রয়েছেন।


ছাতনী গণহত্যায় শহীদ পরিবারের সন্তান দুলাল সরকার জানান, ২০১১-১২ অর্থ বছরে জেলা পরিষদ এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। তবে তবে স্মৃতিস্তম্ভটির আরো সংস্কার প্রয়োজন। তার দাবি শহীদদের তালিকা করে তাদের মূল্যায়ন করা হোক। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হলে নতুন প্রজন্ম ১৯৭১ সাল সম্পর্কে জানতে পারবে।


শহীদ পরিবারের সন্তান সুমি খাতুন জানান, এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা পাঠাগার প্রয়োজন। তাহলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে। এছাড়া এখানে যারা শহীদ হয়েছে তাদের সম্পর্কেও জানতে পারবে।


ছাতনী গণহত্যা দিবসের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা হোক।


বিবার্তা/সাকলাইন/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com