শিরোনাম
‘হামার হাত কই?’ বার বার জানতে চাইছে সুমি!
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০১৮, ০০:২৫
‘হামার হাত কই?’ বার বার জানতে চাইছে সুমি!
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘সুমিকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটাছুটি করেছি, পত্রিকায় খবর ছাপা হলো, টিভিতে দেখালো। ডিসি সাহেব, পুলিশের এসপি সাহেব, হামাকেরে ডাবলু ভাই এসেছিল। সুমির খোঁজখবর নিয়েছে, চিকিৎসার জন্য টাকাও দিছে। ডাক্তার স্যারেরা সব সময় খেয়াল রাখছে, হামার সুমি নাকি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবি। প্রথম শ্রেণির ছাত্রী শিশু সুমি বার বার বলছে, হামার হাত কই, ডাক্তারে হাত খুলে রাকিছে। এখন আমার মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দেবে কে?’


এসব কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন সড়ক দুর্ঘটনায় হাত হারানো আট বছরের শিশু সুমির মা মরিয়ম বেগম। বৃহস্পতিবার বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুমির মায়ের এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হন গণমাধ্যমকর্মীরাও।


সুমির মা শোকে পাথর হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। মেয়ের মাথার পাশে সারাক্ষণ বসে থাকেন। এমনকি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন সুমির বাবা দুলাল মিয়াও। মেয়ের এমন পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনিও।


কেঁদে কেঁদে বললেন, আমি ওর কষ্ট দেখে রাতে ঘুমাতে পারি না। খাবারও পেটে ঢোকে না। কী করব খুঁজে পাচ্ছি না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম স্যার দুর্ঘটনার দিন শেরপুর হাসপাতালেই ছিলেন। আমার মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় শেরপুর হাতপাতালে নিয়ে গেছিলাম। তবুও মন্ত্রী সাহেবের নজরে পড়েনি। আজতক পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষে কেউই শিশু সুমির খবর নেয়নি।


ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামের বেসরকারি এক সংস্থার বগুড়া জেলা শাখার নেত্রী মাহবুবা পারভীন বলেন, মেয়েটার উন্নত চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের টাকার প্রয়োজন। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি তার উন্নত চিকিৎসার জন্য হাত বাড়াতে পারেন। আমাদের দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক মানুষ আছেন, যারা সুমির পাশে দাঁড়িয়ে ওর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারেন। সুমির বাবা করজোড়ে অনুরোধ করছেন তার মেয়ের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।


মাহবুবা পারভীন জানান, সুমির মা মানসিকভাবে অনেকটাই বিপর্যস্ত। মানুষের বাসায় কাজ করে থাকেন। ওর বাবারও বয়স হয়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনিও। আগে ভ্যান চালাতেন। এখন সেই কাজও করতে পারে না। সুমির মায়ের কাজের ওপরেই ওদের পেটে দুই বেলা খাওয়া চলে। এমন পরিস্থিতিতে সুমিকে নিয়ে তারা ভেঙে পরেছে। কী করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।


ট্রাকের ধাক্কায় হাত হারানো শিশু সুমিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম। তিনি শিশুটির চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন এবং শিশুটির বাবার কাছে নগদ ১৫ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বিপিএম বার, আব্দুল জলিল পিপিএম, কুদরতই খুদা শুভ উপস্থিত ছিলেন। সমাজ সেবার কল্যাণ তহবিল থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে হাসপাতালে যান। তিনি মায়ের হাতে ২০ হাজার টাকা দেন।


এছাড়া সুমির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু। সুমিকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের বগুড়ার চেয়ারম্যান যুবনেতা ডাবলু। এ সময় বগুড়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু ও জেলা যুবলীগ নেতা সাজেদুর রহমান সিজু উপস্থিত ছিলেন।


সুমির চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার সার্বিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের নিয়ে একটি টিম করা হয়েছে। তার নিবিড় পরিচর্যা করা হচ্ছে। রক্তের স্বল্পতা থাকলেও সেটি হাসপাতালের চিকিৎকরা স্বেচ্ছায় রক্ত প্রদান করছেন। সুমির অবস্থা আগের থেকে কিছুটা ভাল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।


হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, সুমিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তারা বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং ডান হাত ও মাথায় আঘাত পেয়েছে। ডান হাতের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে সুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।


উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় শিশুটির একটি হাতের অর্ধেক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সুমির বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ফুলতলা দক্ষিন পাড়া।


বিবার্তা/নজরুল/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com