পরিবেশের পরম বন্ধু শকুন আমাদের দেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা ১০টি শকুনকে সেবা পরিচর্যা দিয়ে দিনাজপুরে জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্টে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিতকরণ ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভাও।
প্রকৃতি’র ঝাড়ুদার এই শকুন সম্পর্কে একসময় খারাপ ধারণা ছিল মানুষের। শকুনকে অশুভ এমনকি মৃত্যুর প্রতীক হিসেবেও কল্পনা করা হতো। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুন অশুভতো নয়, বরং মৃত পশু খেয়ে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। শকুন এক প্রকার পাখি। এটি মৃত প্রাণির মাংস খেয়ে থাকে। পাখিগুলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অধিকারী। এরা শিকারি পাখি বিশেষ। সারা বিশ্বে প্রায় ২৩ প্রজাতির শকুন আছে। এর মধ্যে ৬ প্রজাতির শকুন আমাদের দেশে রয়েছে। ৪ প্রজাতি স্থায়ী। আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন, হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালো শকুন ও সাদা শকুন।
দেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এর মধ্যে এক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির বাংলা শকুনও। শকুন অধিকাংশই বিপন্নপ্রায়। বইয়ে পড়লেও অনেকে বাস্তবে দেখেনি শকুন। বাস্তবে শকুন দেখে বেশ আপ্লুত এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা।তাই এই শকুন দেখতে এখন ভীর করছে মানুষ।
গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে শকুন বিলুপ্তির পথে। ওই ওষুধ দেয়া পশুর মৃতদেহ ভক্ষণ করলে কিডনি নষ্ট হয়ে শকুন মারা যায়।
বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা শকুনকে সুস্থ করার জন্য দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্টে গড়ে তোলা হয়েছে পরিচর্যা কেন্দ্র। বন বিভাগ ও আইইউসিএন-এর উদ্যোগে এখানেই আড়াই মাসের পরিচর্যায় সুস্থ করা হয়েছে ১০টি শকুনকে। শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় ৭’শ একরের এই বিশাল বনভূমিতে।
পরে শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করা ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়াতে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল,ঢাকা’র বন সংরক্ষক মো.জাহেদুল কবির, আইইউসিএন এর রিপ্রেজেনটেটিভ রাকিউবুল আমিন,পাখি বিশারদ ইনাম আল হকসহ অন্যরা।আইইউসিএন বাংলাদেশ এবং বন বিভাগের উদ্যোগে এ আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবীর মানুষ অংশ নেয়।
প্রকৃতির ঝাড়–দার খ্যাত শকুন নানাবিধ কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের পরম বন্ধু এই শকুন টিকিয়ে রাখতে সরকারের যেমন দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন জনসচেতনতার। এমনটাই আশা করেছেন পরিবেশ প্রেমীরা।
বিবার্তা/শাহী/সুমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]