
ফেনীতে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া ৩ নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থান ভেঙে গেছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারও মানুষ।
বুধবার (৯ জুলাই) সরেজমিনে এ দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
এ দিকে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পরশুরাম উপজেলা।
পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় ৩টি, শালধর এলাকায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজীর দেড়পড়া এলাকার দুটি স্থানে ভেঙেছে। এ ছাড়াও কহুয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পরশুরামের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। গত বছরের বন্যাতেও সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। বছর না ঘুরতে আবার আমাদের বাড়ি পানিতে ডুবলো।
পরশুরাম উপজেলার ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন, মাঠপর্যায়ে থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। মানুষজন এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না। বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
ফুলগাজী উপজেলার ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, উপজেলায় ৩টি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। এরইমধ্যে শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। তাদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ বুধবার উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা দুদিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ। বুধ ও বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও বাঁধ ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ৬টি স্থান ভেঙে গেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর ফুলগাজী অংশে দুটি ও সিলোনিয়া নদীর পরশুরাম অংশে চারটি। ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ফুলগাজী উপজেলায় ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরশুরাম উপজেলায় ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]