
টাঙ্গাইলে সরকারি সহায়তার আশায় না থেকে সদর উপজেলায় হুগড়া ইউনিয়নে ২৫টি গ্রামের ৬টি কাঠের সেতু স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেছেন এসি আকরাব ফাউন্ডেশন-এর যুবসমাজ। এতে করে প্রায় ২৫টি গ্রামের লক্ষধিক মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে বলে মনে করছেন এসি আকরাম ফাউন্ডেশন।
কাঠের সেতুগুলো হচ্ছে দক্ষিণ হুগড়া মন্ডল পাড়া ,বারালি পাড়া ও খান পাড়াসহ বেশ কয়কটি গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই দক্ষিণ হুগড়া কাঠের সেতু নির্মাণ।
আনুহুলা চিনাখালী, ধুপলা পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম গায়েন পাড়া কাঠের সেতু নির্মাণ।
মন্ডল পাড়া,মোল্লা পাড়াসহ কয়কটি গ্রামের যোগাযোগ মাধ্যম হুগড়া পুরাতন জামে মসজিদের কাঠের সেতু নির্মাণ।
চরহুগড়া,উত্তর হুগড়া, ধুলবাড়িসহ কয়েকটি গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা উত্তর হুগড়া শওকত ডা: বাড়ির সংলগ্ন কাঠের সেতু নির্মাণ।
মন্ডল মোড়ের উত্তরে রহিমের বাড়ির সংলগ্ন কাঠের সেতু নির্মাণ। এতে চরহুগড়া এবং কায়েম হুগড়ার মানুষ চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।
পূর্ব চিনাখালির গেদা গায়েনের বাড়ি সংলগ্ন কাঠের সাথে নির্মাণ । এই সেতু দিয়ে পূর্ব চিনাখালী ও উত্তর আনুহলার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।
স্থানীয়রা বলেন, এলাকার ছোট বড় যে সমস্ত খাল রয়েছে সে সমস্ত খালে মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য স্বেচ্ছায় কিছু যুবক সেতুর কাজ করে যাচ্ছেন। এটি এই ইউনিয়নের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন ইউনিয়নের যুবসমাজ। যদিও সমস্ত অবকাঠামো আকরাম ফাউন্ডেশন সরবরাহ করছে। তারপরও যুব সমাজের মধ্যে একটি উৎফুল্ল নিয়ে ইউনিয়নের ভোগান্তি কমাতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। এটি দেখে আশেপাশে ইউনিয়নের যুব সমাজ আগ্রহী হচ্ছে।
মুকুল মন্ডল ও সিয়াম চাকলাদার বলেন, বর্ষা এলেই চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। বর্ষার আগেই আমাদের এই অঞ্চলে যে সমস্ত গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সে সমস্ত এলাকায় আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সেতু নির্মাণ করেছি। আমাদের এলাকার বেশ কিছু যুবক রয়েছে তারা এলাকার যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছে। এরমধ্যে ছাত্র সহ দিনমজুর শ্রমিকও রয়েছেন।
স্বেচ্ছাশ্রমের আমির মন্ডল বলেন, আমাদের মধ্যে বড় কয়েকজন রয়েছে তারা ইউনিয়ন ঘুরে যে সমস্ত দুর্ভোগ এলাকার রয়েছে। সেটির খুঁজে নিয়ে আকরাম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে আবেদন করলে তারা অবকাঠামো ব্যবস্থা করে দেন। তিনি বলেন শুধু কাঠের সেতুই নয়। যেখানে যাহা প্রয়োজন তাহা দিয়েই কাজ করার মানসিক প্রস্তুতি আছে আমাদের। যেমন বৃষ্টি হলে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। সে সমস্ত নষ্ট রাস্তা মাটি ভরাট করে রাস্তার মেরামতের কাজও করি।
খলিল মন্ডল বলেন, এই সেতু নির্মাণ হওয়াতে আমাদের অনেক ভোগান্তি কবম আসলো। যদিও কাঠের সেতু। হয়তো কয়েক বছর পর কাঠগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও এ সেতু হওয়াতে আমাদের অনেক রাস্তা সহজ হল। বর্ষা এলে অনেক রাস্তা ঘুরে আসতে হয়। খালের অপর পাশে আমার চাচার বাড়ি। তারপরও অনেক রাস্তা ঘুরে আসতে হয় এখন সহজেই যেতে পারবো।
তিনি আরো বলেন সরকারের অর্থায়নের চিন্তা না করেই এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তিনি আকরাম ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে এই ইউনিয়নের ছোট ছোট কাঠের সেতু কাজ করে দিচ্ছেন। তবু সরকারের কাছে আমাদের দাবি এই অবহেলিত ইউনিয়নের কাজগুলো স্থায়ীভাবে করে দেওয়ার জন্য।
যারা এই কাজে নিয়মিত স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন, হুগড়া ইউনিয়নের রিপন মন্ডল , সোলাইমান, কবির, মাসুম, সিয়াম চাকলাদার, রউফ, ইমরান মন্ডল, আমির মন্ডল, আলিম মন্ডল, খোকা, মুকুল, রফিকুল ব্যাপারি, আকালু চাকলাদার, লতিফসহ বেশ কিছু যুবক কাজে অংশগ্রহণ করেন।
হুগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরী-ই আলম তুহিন বলেন, আমাদের এই ইউনিয়নটি যমুনা নদীর পার ঘেঁষা। এই ইউনিয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। এর আগে এই ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ ছিল নদী ভাঙ্গন। সেটি যদিও বর্তমানে ভাঙ্গন প্রতিরোধ হয়েছে। এরপরেও যমুনা নদী ঘেঁষা হওয়ার কারণে বর্ষার পানিতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
এদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ছোট ছোট কাঠের সেতুর কাজ করে যাচ্ছি। শুধু তাই নয় বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য টিউবওয়েল সেনেটারী সহ বেশ কিছু কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে আকরাম ফাউন্ডেশন।
আর এই আকরাম ফাউন্ডেশন-এর সহযোগিতা করে থাকেন এলাকার ছাত্র দিনমজুররা। তারা খুব সহজেই মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। স্বেচ্ছায় যারা শ্রম দিয়ে যাচ্ছে তাদের কখনোই ডাকতে হয়নি। তারা নিজেরাই আকরাম ফাউন্ডেশনের সহায়তা চেয়ে বিভিন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
বিবার্তা/ইমরুল/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]