চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারত থেকে আমদানিকৃত নিম্নমানের চিনিতে তৈরি হচ্ছে গুড়। এছাড়াও গুড়ে দেওয়া হচ্ছে সোডা, রং, হাইড্রোজ ও বিভিন্ন জাতের জড় মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরির প্রতিযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তা আবারও চালু হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন বিষয়টি কঠোর হস্তে দমন না করায় ভেজাল গুড়ের জমজমাট ব্যবসা চলছে। এসব ভেজাল গুড় আবার যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বেশি মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা এই কাজ করছে। এতে হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। কয়েকদিন আগে শিবগঞ্জের পিঠালি তলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে সংঘবদ্ধ হয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার জানালার কাচ ভাঙচুরও করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ভেজাল গুড় খেলে কিডনি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হতে পারে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধি। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ এই কর্মকাণ্ড বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, আখচাষি ও উৎপাদন-কারীদের দাবি, অপরিপক্ব আখের রসের গুড় ঠিকমতো জমাট বাঁধে না। লাভের আশায় ও গুড় জমাতেই তারা অপরিশোধিত এসব চিনি ব্যবহার করেন। তবে আমদানিকৃত এসব চিনি স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা জানেন না তারা।
সরেজমিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারি বিল, নাককাটিতলা, বিরামপুর, ধাইনগরসহ বিভিন্ন সড়কে ও আখক্ষেতের পাশে ভেজাল গুড় তৈরির এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সড়কের দুইপাশে যত্রতত্র পাত্রে জ্বাল দেয়া হচ্ছে আখের রস। রস লালচে হয়ে এলেই তাতে মেশানো হচ্ছে ভারত থেকে আমদানিকৃত নিম্নমানের চিনি।
শুধু তাই নয়, আখের রসে চিনির পাশাপাশি মেশানো হচ্ছে চুন, সোডা, হাইড্রোজ এবং বিভিন্ন রং। আগুনের তাপে গলে গলে আখের রসে মিশে যাচ্ছে এসব। এভাবে প্রকাশ্যেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র তৈরি হচ্ছে ভেজাল আখের গুড়।
স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক বছর ধরে এভাবেই তৈরি হচ্ছে আখের ভেজাল গুড়, যা অবাধে বিক্রি হচ্ছে হাট-বাজার ও কানসাটের বিভিন্ন আড়তে। পরবর্তী সময়ে এসব গুড় চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাতেও।
স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামীম রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, এটা আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে দেখছি। শিবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারি বিলে বিপুল পরিমাণ আখ উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই আখের গুড় উৎপাদনের সময় চিনি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই চিনি কেন দেওয়া হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। এই চিনি পাশের দেশ থেকে আমদানি করা হয়। বিষয়টি প্রশাসনের তদারকি করা উচিত। কারণ প্রচুর গুড়ে ভেজাল দেওয়ার জন্য এই চিনি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ রকম ব্যাপক আকারে যদি ভেজাল গুড় তৈরি করা হয় তা হলে ভোক্তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা নিরাপদ খাবার থেকে বঞ্চিত হবে।
জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারত থেকে আনা এসব গুড় পরীক্ষা করার জন্য আমরা একাধিকবার সোনা মসজিদ স্থলবন্দরে গিয়েছি। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কোনো সহযোগিতা পাইনি। তাই ল্যাবে এসব গুড় পরীক্ষা করা যায়নি। আখের গুড়ের সঙ্গে ভারত থেকে আনা অপরিশোধিত চিনি মেশানোর বিষয়টি অবশ্যই অপরাধ। এ ছাড়া আখের গুড়ে শুধু আখের রস ছাড়া আর কিছু দেওয়া যাবে না। চুন, সোডা, হাইড্রোজ ও কাপড়ের রং মিশ্রণ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের কাস্টমের ডিসি নুর উদ্দিন মিলনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, এসব গুড় খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগও হতে পারে। তাই গুড় খাওয়ানোর আগে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। তা না হলে ভয়ংকর বিভিন্ন রোগ আমাদের দেহে বাসা বাঁধবে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, আখের রস থেকে যে গুড় হয় সেটাই শুদ্ধ। কিন্তু মানুষকে বোঝানো হচ্ছে চিনি না মেশালে গুড় উৎপাদন হবে না। এভাবে কোনো কিছু মেশালে সেটা আসলে বিশুদ্ধ গুড় হচ্ছে না। এটা স্বাস্থ্যসম্মত কি না তাও আমরা জানতে পারছি না।
প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গুড় উৎপাদনে মাঠ পর্যায়ে কী হচ্ছে সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কঠোর হস্তে দমন করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্যে ভেজালের ব্যাপারে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। এছাড়া অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এটা আমদানি বন্ধ করা হবে।
বিবার্তা/লিটন/এনএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]