
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলায় বিজিবির বিরুদ্ধে মাদক দিয়ে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গীপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে হাজারো জনতা ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় এসে হাজির হয় এবং বিজিবির সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা।
এক পর্যায়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে স্থানীয়রা। এতে সড়কের দুইধারে শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে। গন্তব্যে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীসহ যাত্রীদের। পরে দীর্ঘ আলোচনার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে প্রশাসন।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কয়েকজন সদস্য তেতুঁলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসলিম উদ্দিনের বাড়িতে যান। ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা আছে বলে বাড়ির বাকি সদস্যদের ঘরের বাইরে যেতে বলেন। অল্প কিছুক্ষণ পরে প্রায় শতাধিক বিজিবি সদস্য চেয়ারম্যানের বাসায় এসে পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেন। পরিবারের সদস্যরা বাইরে গেলে ইউপি চেয়ারম্যানকে তার রুমে নিয়ে যান। পরে তারা ঘর তল্লাশির কথা বললে চেয়ারম্যানের শোয়ার রুমের একটি টেবিলের নিচে একটি বস্তায় ১০৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেন বিজিবি সদস্যরা। পরে ইউপি চেয়ারম্যানকে স্থানীয় ভূতিপুকুর ক্যাম্পে নিয়ে যেতে শুরু করেন তারা। ইউপি চেয়ারম্যানকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করে প্রায় সহস্রাধিক জনতা বিজিবি সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়কের ভজনপুর এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
এক পর্যায়ে অতিরিক্ত বিজিবি সহ ১৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক সহ বিজিবির কর্মকতা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে দীর্ঘ আলোচনায় পরিস্থিতির সমাধান না হলে ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি। তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরে ফেন্সিডিল নিয়ে বিজিবির কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ।
স্থানীয়রা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানকে চক্রান্তমুলকভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল বিজিবি। আমরা জানতে পরে সবাই ছুটে আসি। আমাদের চেয়ারম্যান মাদক তো দূরের কথা ধূমপানও করেন না তিনি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে ষঢ়যন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা ।
ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসলিম উদ্দিন বলেন, শুক্রবার দুপুরে ভূতিপুকুর বিজিবি ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য আমার বাসায় আসেন। আমার সাথে কথা আছে বলে বাড়ির বাকি সদস্যদের বের করে দেন। তার কিছুক্ষন পরে বিজিবির প্রায় শতাধিক সদস্য পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেন। এবং আমার ঘর তল্লাসী করতে চান। আমি তাদের বলি কী কারণে এমনটা করছেন। তারা আমার কথা কর্নপাত না করে আমার শোয়ার রুমের একটি টেবিলের পাশ থেকে একটি বস্তা উদ্ধার করেন। বস্তা থেকে ১০৭ বোতল ফেনসিডিল বের করেন তারা। এসময় চেয়ারম্যান বলেন আমি কখনো মাদক গ্রহণ তো দূরের কথা কোন প্রকার ধূমপানও করি না। কিছুদিন আগে ১০ টি ভারতীয় গরু আটকের পর থেকে ভুতিপুকুর ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যদের সাথে একটু মনোমালিন্য হয়। সেই ক্ষোভের থেকে এমনটি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। ফেন্সিডিল দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছে শুনে হাজারো জনতা আমার বাসায় ছুটে আসেন। পরে তারা পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে দেয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। আমি এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করছি। যাতে আর কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা না করা হয়।
তেতুঁলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, শুক্রবার দুপুরে পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়ক অবরোধের বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুঁটে যাই। পরে জানতে পারি বিজিবি ইউপি চেয়ারম্যান মোসলিমের বাসায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তল্লাসী করতে যায়। এনিয়ে স্থানীয়দের সাথে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে আমি ও বিজিবির অধিনায়ক তদন্ত করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে তারা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক বলেন, একটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন উদ্ধুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো বলে জানান তিনি।।
বিবার্তা/বিপ্লব/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]