
৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সংস্কার ও উন্নয়নকাজ শেষ করতে নাটোরের সিংড়া এলজিইডি অফিসের সময় লেগেছিল দুই বছর। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার ১ বছর না যেতেই জামতলি-রানীরহাট ‘লাইফ লাইন’ সংযোগ সড়কে এখন বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে।
সিংড়ার প্রাণকেন্দ্র জামতলি থেকে বামিহাল, দুর্গাপুর, রানীরহাট পণ্যবাহী যান চলাচলের প্রধান সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুধু জামতলি বামিহাল রোড নয়, এ অবস্থা সিংড়ার বেশিরভাগ সড়কের। কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দের। এসব সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে, ঘটছে দুর্ঘটনা।
সিংড়া এলজিইডি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নাটোরের সিংড়া উপজেলার সড়ক সংস্কারে গত ছয় বছরে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এসব প্রকল্পের আওতায় জামতলি-বামিহাল ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়েছে এতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এছাড়া গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সড়কে দুই প্যাকেজে সড়ক সংস্কারের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে এলজিইডি অফিসের যোগসাজশে দ্বিতীয় ধাপে এলজিইডি অফিস সরকারকে ব্যয় ধরিয়ে দেয় সাড়ে ৭ কোটি টাকা কিন্তু সংস্কারের পর এক বছর না পেরোতেই সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল অর্থ ব্যয়ে সংস্কারের পরও নিম্নমানের কাজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় এক মৌসুমেই সড়কের এই দশা হয়েছে।
সিংড়া উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আহমেদ রফিক বলেন, বিপুল অর্থ ব্যয়ে সংস্কার হওয়া সড়কের এই পরিণতির কারণ বর্ষায় জলাবদ্ধতা। বিটুমিনের রাস্তায় পানি জমে থাকলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এই ৯ কিলোমিটার সড়কের যেখানে যেখানে গভীর গর্ত হয়ে গেছে আমরা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে ঠিক করছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রাতার বাজার থেকে বামিহাল কলেজ প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত রোডে বড় বড় গর্ত। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির বেশিরভাগ অংশে বিটুমিন উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বিটুমিন ধুয়ে মুছে গিয়ে নুড়িপাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এর মধ্য দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহনের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মোটরবাইক, ভ্যানগাড়ি চলছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এমন নিম্নমানের কাজ করতে সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে সড়কটির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দা সৈকত বলেন, সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন পর পর সংস্কার করা হয়, কিন্তু টেকসই কাজ হয় না। নিম্নমানের কাজের কারণে সড়কটি বারবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জীবন হাতে নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে লোকজন। আমাদের দেশে এখনো পুরোনো নিয়মে বিপুল টাকা খরচ করে সড়ক সংস্কার করা হয়। কিন্তু টেকসই করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বর্ষা মৌসুমে তাড়াহুড়া করে সড়কের সংস্কার করা হয়। কাজের মানও হয় খারাপ। কাজের মান ঠিক রেখে নির্মাণ করা হলে পিচ ঢালাইয়ের সড়ক ১০ বছর টেকসই হওয়ার কথা।
সড়কটি সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.শহিদুল আলম বলেন, রোডটি আমার নিজের অর্থায়নে সাময়িক সময়ের জন্য পিকেট ও বালি দিয়ে ঠিক করা হচ্ছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় আবারও সংস্কার করা হবে। সড়কটিতে যেসব গর্ত হয়েছে, সেগুলো মেরামতে কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ী ও টেকসইভাবে সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।
বিবার্তা/রাজু/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]