
খাগড়াছড়িতে শিক্ষক সোহেল রানাকে বেধড়ক গণপিটুনি দিয়ে হত্যার পর জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করেছে প্রশাসন। এছাড়া এ ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে চাপা আতঙ্ক আর থমথমে পরিস্থিতির রেশ কাটেনি স্থানীয়দের মধ্যে।
এদিকে, শিক্ষক সোহেল রানাকে বেধড়ক গণপিটুনি দিয়ে হত্যার স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দুর্বৃত্তের দেয়া আগুন, লুটপাট, ভাঙচুরসহ ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটের স্মৃতিই এখন শেষ সম্ভব সাধারণ ব্যবসায়ীদের। সংঘাতের চিহৃ বয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষত-বিক্ষত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সড়ক, ভাঙচুর ও আগুনে পোড়া গাড়ি লুটপাটের ঘটনায় কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ীর ধ্বংসযজ্ঞের স্থল।
ব্যবসায়ীরা এমন সংঘাত চায় না বরং সংগঠিত শিক্ষক হত্যার ঘটনার রেশ ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বর্বরতার ক্ষু্ব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে শনাক্তকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান গণমাধ্যমকে দেয়া এক বক্তব্যে বুধবার দুপুরে সংগঠিত ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
একই সময় খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান। এসময় তিনি আইন হাতে তুলে না নিয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করাসহ পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এবং পৌর এলাকায় জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আসায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন চন্দ্র রায়।
বুধবার (২ অক্টোবর) ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিকাল ৩টা থেকে আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষককে গণপিটুনি করে মেরে ফেলার ঘটনায় খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ আনতে বিকেল ৩টা থেকে সদর উপজেলা এবং পৌর এলাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনার পর পাহাড়ি ও বাঙালিরা আবার মুখোমুখি অবস্থান নেন। খাগড়াছড়ি সদরের প্রাণ কেন্দ্র শাপলা চত্ত্বর সদরের মহাজনপাড়া, আনন্দনগর, কল্যানপুর, স্লুইচ গেইট, পানখাইয়া পাড়া সড়কে সংঘাতের রেশ ছড়িয়ে পড়ে। পরে অসংখ্য দোকানেও ভাঙচুর,লুটপাট ও মোটরসাইকেল আগুন দেয়া হয়।
নিহত শিক্ষক সোহেল রানা প্রতিষ্ঠানটির বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ও সেফটি বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি সদরের খেজুরবাগান এলাকায়। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সোহেল রানা কারাগারে ছিলেন। তিন মাস আগে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর একই প্রতিষ্ঠানে তিনি যেন আবার যোগদান না করেন, সে জন্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল।
বিবার্তা/আল-মামুন/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]