মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ময়লার ভাগাড় সরানোর দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
২৯ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সকাল ১১ ঘটিকায় শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বার্ডস রেসিডেনসিয়্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ।
পরে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের চৌমুহনায় গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে পৌরসভায় গিয়ে পৌরসভার প্রশাসক এর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, শহরের কলেজ রোডে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পৌরসভার বিশাল ময়লার ভাগাড় রয়েছে। বহু বছর ধরে প্রতিদিন বাসা-বাড়ি ও পুরো শহরের ময়লা-আবর্জনা এখানে এনে ফেলা হয়। ময়লার দুর্গন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসে ক্লাস করা খুবই কষ্টকর। শিক্ষার্থীদের নাক মুখ চেপে ধরে ক্লাসরুমে বসতে হয়।
এছাড়া ময়লার ভাগাড়ের পাশে রয়েছে আরও দুটি আবাসিক এলাকা। মশা, মাছির উপদ্রব ও ময়লার দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর নাভিশ্বাস অবস্থা বিরাজ করছে। এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এ ভাগাড় সরানোর জন্য বারবার আন্দোলন করেছি। বারবার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কিছুই করা হয়নি। এর আগেও কলেজের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড় সরানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমেছিলেন। শিক্ষার্থীরা আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ২০১৭ সালে আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের ৬ মাসের মধ্যে ময়লার ভাগাড় সরানো হবে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও পরিবেশ উপদেষ্টার নিকট দাবি রাখেন অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে তাদেরকে সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে পড়ালেখা করার সুযোগ করে দিতে।
উল্লেখ্য, পৌর কর্তৃপক্ষ এই দাবির প্রেক্ষিতে ময়লা ফেলার জন্য বিগত ২০১৩ সালে সদর ইউনিয়নের জেটি রোডের হাওর এলাকার পাশে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার এর মাধ্যমে ২ একর ৪৩ শতক ভূমি অধিগ্রহণ করেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ওই এলাকায় ময়লা না ফেলার জন্য বিরোধিতা করেন। ঐ এলাকার ফয়েজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি এলাকাবাসীর পক্ষে হাই কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। তবে মামলার বাদীর মৃত্যু হলেও আদালতের স্থগিতাদেশ এর কারণে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মো. মহসিন মিয়া মধু জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লার ভাগাড় থাকুক সেটা আমরাও চাইনি। ময়লার ভাগাড় স্থানান্তরের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সদর ইউনিয়নের হাইল হাওরের পাশে জায়গা ক্রয় করা হয়েছে।
তিনি জানান, সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও ধরা হয়েছিল, কিন্তু সে সময় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সকল মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরও আমরা থেমে থাকিনি। যখন ময়লার ভাগাড় স্থানান্তরের কাজ শেষের দিকে নিয়ে আসি ঠিক তখনই হাই কোর্টে রিট করে আবার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্রশাসক এডিসি মোছাম্মৎ শাহিনা আক্তার জানান, প্রথমে আমি ময়লার ভাগাড় ও অধিগ্রহণকৃত স্থান পরিদর্শন করেছি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি এর আগেও মেয়র পৌরসভার পক্ষ থেকে ময়লার ভাগাড় স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই প্রক্রিয়ার শেষের দিকে আদালতে রিট করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে মহামান্য হাইকোর্টে দ্রুত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার আবেদন করবো। এরপর সবাইকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম, পৌর কাউন্সিলর কাজী আব্দুল করিম, মীর এম এ সালাম, আলকাছ মিয়া, চয়ন রায়, আব্দুল জব্বার আজাদ প্রমুখ।
বিবার্তা/কাউছার/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]