বিএমডিএ সেচ নীতিমালা, জলমহাল লিজপ্রথা পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১৮:০১
বিএমডিএ সেচ নীতিমালা, জলমহাল লিজপ্রথা পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈষম্যমূলক পানি ব্যবস্থাপনা, পুকুর-দিঘি, জলমহাল লিজ প্রথা, নীতিমাল ও আইন পরিবর্তন করে কৃষক, জনবান্ধব করার দাবিতে কৃষক, আদিবাসী ও স্থানীয় নাগরিক সমাজের মানববন্ধন ও বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈষম্যমূলক পানি ব্যবস্থাপনা, পুকুর-দিঘি, জলমহাল লিজ প্রথা, নীতিমাল ও আইন পরিবর্তন করে কৃষক, জনবান্ধব করার দাবিতে কৃষক, আদিবাসী ও স্থানীয় নাগরিক সমাজের মানববন্ধন আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাজশাহীর তানোর উপজেলা থানা মোড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।


বরেন্দ্র অঞ্চল জনসংগঠন ফোরাম, সবুজ সংহতি, সচেতন নাগরিক সমাজ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র যৌথ আয়োজনে বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈষম্যমূলক পানি ব্যবস্থাপনা, পুকুর-দিঘি, জলমহাল লিজ প্রথা, নীতিমালা ও আইন পরিবর্তন করে কৃষক, আদবিাসী ও জনবান্ধব করার দাবিতে কৃষক, আদিবাসী ও স্থানীয় নাগরিক সমাজের মানববন্ধন করনে।


একই সাথে তারা নয় দফা দাবি সম্মিলিত একটি স্মারকলিপি তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার এর মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর প্রেরণ করেন। স্মারকলিপির অনুলিপি বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তপক্ষ তানোর এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগেও প্রদান করেন।


মানবন্ধনে বক্তরা বলেন- বিগত সময়ে সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ এর কারনে গ্রামের কৃষক, প্রান্তিক এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের জলাধার পুকুর-দিঘিগুলোতে প্রবেশাধিকার হারিয়েছে।


গ্রামের ভিতরে এবং বিলের পুকুর-দিঘিগুলো লিজ দেবার কারণে সেগুলো থেকে তারা পানি ব্যবহার করতে পারেনা। একইসাথে মৎস আহরণের অধিকার থেকেও বঞ্চিত। বিভিন্ন সময়ে লিজ প্রথার কারণে গ্রামের পুকুরগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও ব্যববসায়ী বেশি টাকার বিনিময়ে লিজ নিয়ে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে মৎস চাষ করার ফলে পানির ব্যবহার করা যায়না। আবার লজি নেয়া পুকুরগুলো ব্যবহার করতে দেয়া হয়না গ্রাম বাসীকে। তাদের দাবি গ্রামের ভিতরের পুকুরগুলো গ্রামবাসিকে শর্তবিহীন ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। বৈষম্যমূলক জলমাহাল নীতিমালা ২০২৯ এর দোহাই দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রশাসনের এই পুকুড় দিঘিগুলো লিজ দিয়ে থাকে। তাই এই আইন পরিবর্তন করতে হবে এবং আইনের নামে কোন ধরণের লিজ দেয়া যাবেনা।


অন্যদিকে তারা আরো বলেন- খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে ‘বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃপক্ষ’ (বিএমডিএ) এর ডিপ ব্যবস্থাপনায় বিএমডিএ সেচ নীতিমালা ২০০৮ পরিবর্তন করে সেখানে কৃষকবান্ধব করতে হবে। ডিপগুলো সত্যিকারে কৃষকের হাতে দিতে হবে। রাজনৈতিক পালাবদলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যখন এইসকল ডিপ হাতিয়ে নেয় তখন প্রান্তিক কৃষক, আদিবাসীসহ দরিদ্র কৃষক পানির আিধকার থেকে বঞ্চিত হয়। অধিক দামে পানি কিনতে হয়। আবার কৃষকরা তাদের ইচ্ছে মতো শস্য ফসলও চাষ করতে পারেনা। অংশগ্রহণকারীগণ আরো বলেন যে- চলমান সময়ে একটি সরকারের পতন হবার পর দেখা যাচ্ছে আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি ডিপগুলো দখলে নেবার জন্য তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। সেচ নীতিমালাতে কৃষকদের মাধ্যমে সমতি করে, কৃষকদের মাধ্যমে ডিপ পরিচালনার দাবি জানান কৃষকগণ। তারা বলেন একটি ডিপ একটি সিজনের জন্য একজন কৃষককে পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে কৃষক সমিতির মধ্যে লটারি করে দিতে হবে।


বারসিক গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন- ‘বিএমডিএ সেচ নীতিমালা ২০০৮ পর্যালোচনা করে দেখা যায় সেখানে কৃষকদের দাবিগুলো একেবারেই কম স্তান পেয়েছে। নীতিমালার ২.৫ সেকশনে মহিলা অপারেটরের কথা বলা হলেও আদৌ সেটি বাস্তবায়নে চোখে পড়ার মতো নয়। আবার ২.৪ সেকশনে ভোটের মাধ্যমে অপারেটর নির্বাচনের কথা থাকলেও অন্য ধারার ক্ষমতা বলে বিএমডিএ কতৃপক্ষ ইচ্ছে মতো বা রাজনৈতিক চাপে পড়ে অপারেটর নির্বাচন করেন। তিনি আরো বলেন- এই নীতিমালায় ১.৬ ধারায় পার্টিসিপেশন ফি নির্ধারনে নির্বাহী পরিচালক কতৃক কমিটি র্নিধারণ করবেন, কিন্তু সেখানে কৃষকের অংশগ্রহণ নেই। গোটা নীতিমালাতে বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষার দিকগুলো কোন ভাবেই উল্লেখ করা হয়নি। তাই এই নীতীমালাটি সংশোধন করে ক্রৃষকবান্ধব এবং নীতরিন দিকগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।


স্বশিক্ষিত কৃষি গবেষক ও জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক নৃর মোহাম্মদ বলেন-‘আমাদের অঞ্চলটি খরাপ্রবণ। পানি সমস্যা প্রকট। মানুষের ব্যবহারের পানির পাশাপাশি কৃষি কাজে দিন দিন সমষ্যা আরো প্রকট হচ্ছে। পানি নিয়ে রাজনীতি , সহিংসতা বৃদ্ধি পােেচ্ছ । তিনি পানি পানি কেন্দ্রিক দূর্বল এবং বৈষিম্যমূলক নীতি আইনগুলো পরিবর্তন করে জনবান্ধব করার দাবি জানান।


মাহালী আতিদবাসী নেত্রী চিচিলিয়া হাসদা বলেন- ঘরের পাশে সরকারি পুকুর, পানি ব্যবহার করতে পারি না। মুরগীর বিষ্ঠা , গরুর গোবর দিয়ে মাছ চাষ করার ফলে আমরা সেই পানি ব্যবহার করতে পারিনা। তাই এসব পুকুর লিজ বন্ধ করে আমাদের গ্রামের জন্য ব্যভহার করতে দিতে হবে। সচেতন নাগরিক কমিটির যুবক মোঃ আলমাস বলেন- কমিউিনিটির সম্পদ, কমিউিনিটিকে ব্যবহারের জন্য বৈষম্যমুক্ত আইন করতে হবে। তিনি দাবি করেন- বরেন্দ্র অঞ্চলের নধী, খাল খাড়ি গুলো খনন করতে স্থানীয় কৃষক জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করতে হবে। নামকা ওয়াস্তে এসব উউন্নয়ন কাজ করে দূর্নীতির পথ করে দেয়া যাবে।


মানববন্ধনে বরেন্দ্র অঞ্চল জনসংগঠন ফোরামের সভাপ্রধান কৃষক নুর মোহাম্মদ বরেন্দ্র অঞ্চলের দিঘি-পুকুর, জলাধারগুলোতে সকল মানুষের প্রবেশাধিকার এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের জল জীবন ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা বিষয়ে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। নীচে দাবিগুলো তুলে ধরা হলো।
১. সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা,আইন ২০০৯ পরিবর্তন করে কৃষক ও জনবান্ধব করতে হবে।
২. বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রাম ভিত্তিক সরকারি প্রতিটি পুকুর-দিঘি, জলধার জলমহালগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে, লীজ দেয়া যাবে না।
৩. বরেন্দ্র অঞ্চলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃপক্ষের ডিপ ব্যবস্থাপনায় বিএমডিএ সেচ নীতিমালা ২০০৮ পরিবর্তন করে সেখানে কৃষকবান্ধব করতে হবে।
৪. বরেন্দ্র অঞ্চলের সকল প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সংস্কার করতে হবে। দখলমুক্ত করে সেগুলো কৃষকদের সেচের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
৫. বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য , বৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় উচুঁ-নীচু টিলা বৈশিষ্ট্য সম্পœ ভূমি কর্তন করে সমান করা বন্ধ করতে হবে। এবং বন্ধে আইন তৈরি করতে হবে।
৬. খরা ও দুর্যোগের কারনে শস্য ফসল হানি, পশুপাখির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একই সাথে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক, শ্রমজীবীসহ আদিবাসীদের জন্য খরা ভাতা চালু করতে হবে।
৭. পুকুর-দিঘি, জলাধারে গ্রামের ভিতরে পুকুড়/জলাশয় গুলোতে মানুষ বা পরিবেশের জন্যে ক্ষতি করে এমন রাসায়নিক কীটনাশক বা এমন কোন উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না সে বিষয়ে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. বরেন্দ্র অঞ্চলের নদ-নদীগুলো দখল দূষণ বন্ধ করাসহ, এগুলো খনন করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে কমিটি গঠন এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৯. কৃষিজমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে হবে। এবং পুকুর খনন বন্ধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


বিবার্তা/অসীম/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com