
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যার পরপরই অনাবৃষ্টি আর অব্যাহত খরায় চলতি মৌসুমে আমন চাষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন আমন চাষিরা। টানা তাপপ্রবাহে ক্ষেতে লাগানো ধানের চারা পুড়ে যাচ্ছে। ইতমধ্যেই তীব্র খরার কারণে অনেক চারা হলুদ রং ধারণ করেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে, এ মৌসুমে আমন চাষে লক্ষ্য মাত্রা নিধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১২০ হেক্টর। তবে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ২শ হেক্টর । এখনো চারা রোপণ বাকী আছে ২ হাজার ৯২০ হেক্টর। কৃষি অফিস বলছে তীব্র খরার করাণে চারা রোপণ একটু ধীর গতিতে হচ্ছে তাছাড়া এবার জমিতে পানি না থাকায় সেচ পাম্পের মাধ্যমে জমি প্রস্তুত করছেন কৃষকরা। এতে করে এ বছর কৃষকদের ব্যয় গত বছরের তুলনায় একটু বেশি গুনতে হবে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার পাত্রখাতা মাঠে দেখা যায়, ধানের চারা রোপণ করার জন্য জমি প্রস্তুত করছেন কৃষকরা। শ্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক সেচ ব্যবহার করে চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসময় কৃষক আক্কাস আলী, মাজেদুল ইসলাম ও শওকত আলী সহ অনেককেই ডাঙ্গারচর বিলের জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করতে দেখা যায়। বর্ষা ভরা মৌসুমে এই বিলে শাপলার দেখা মেলে। তবে এবারে বিলে এক ফোটা পানি জমেনি। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এবারে বিলের নিচু জমিতে ধানচাষের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। তবে শ্যালো মেশিন সেচ দিয়ে ধানের আবাদ করতে অনেক খরচ হচ্ছে। অতিমাত্রার খরচ করে ধানের আবাদ করে লোকশান হবে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় আমনের বীজতলা পুড়ে গেছে। আমন চাষের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এ অবস্থায় আমন চাষ নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এসময় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চাষাবাদ করে আর সংসার চালানো যাবে না।
জানতে চাইলে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের বাসিন্দা তাজরুল ইসলাম জানান, এবার আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে ধানের জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগে ৮৫ টাকা লিটার ডিজেল কিনে সেচ দেওয়ার কাজ চলছিল। এখন ১১০ টাকা দিয়ে কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে রাসায়নিক সারের দাম সাভাবিক রয়েছে। রাসায়নিক সারের সরকারি মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ১৩৫০ কিন্তু তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০০-১৩২০ টাকায়। সার নিয়ে কোন ধরনের দূচিন্তা নেই কৃষকদের। তবে তারা মনে করেন তেলের দাম যদি একটু কমানো যেত তাহলে আমাদের আরো অনেক সুবিধা হতো।
একই এলাকার হাজিপাড়া গ্রামের কৃষক সিদ্দিক আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরায় ফসল চাষে ব্যাঘাত ঘটছে। আমন চাষে প্রতিটি সেচ বাবদ ৩০০-৪০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। কৃষকরা সেচ পাম্পের মালিকের সঙ্গে মৌসুম চুক্তি করেও সেচ দিচ্ছেন। এতে এক বিঘা জমিতে ধানচাষ করতে এ মৌসুমে ৮-১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত সেচের খরচ গুনতে হবে। এ বছর চার বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছেন বৃষ্টি না হওয়ায় একদিন পরপর জমিতে সেচ দিচ্ছেন।
কৃষক সফিউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ৬-৭ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করি। এ বছর অনাবৃষ্টি আর খরার কারণে ভালো চারা পাইনি। বন্যায় বিজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারের চারা কিনে রোপণ করছি জানি না কেমন আবাদ হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, চলতি মৌসুমে চিলমারীতে ৮ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সেপ্টেম্বর মাস পুরোপুরি সময় আছে। চারা নিয়ে অনেকেই অপেক্ষায় আছেন। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে কৃষকরা ধান লাগাতে শুরু করবেন।
বিবার্তা/রাফি/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]