কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ, নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ১৫:৫৫
কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ, নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত দুইদিন আগ থেকে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়াতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। পানি কমায় নতুন করে কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।



যার ফলে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার আর ধরলা অববাহিকার উঁচু চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন নিজেদের বসতভিটায় ফিরতে শুরু করেছেন। তবে নিচু চরগুলোর বসতভিটার চারপাশে এখনো বন্যার পানি রয়েছে। এসব এলাকায় এখনো যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা ও কলা গাছের ভেলা।


বন্যা কবলিত হওয়ায় জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান এখনো বন্ধ রয়েছে।



অপরদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে, পাট,আমন বীজতলা ও পটলের ক্ষেতসহ ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।


সরকারিভাবে দুই সপ্তাহ ধরে নিম্নাঞ্চলের ৫৫ ইউনিয়নের- ৪ শতাধিক গ্রামের প্রায় দেড় লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করলেও, বেসরকারি হিসেব বলছে এ সংখ্যা আড়াই লাখেরও অধিক।


সোমবার সকালে সরেজমিনে সদর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো অনেক নিচু অঞ্চলের বসত-বাড়ি থেকে বন্যার পানি পুরোপুরি নামেনি।


দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বিশেষ করে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বানভাসিরা। এসব এলাকায় মানুষজনের মধ্যে হাত পায়ে সাদা ঘা, চুলকানি, জ্বর ও পাতলা পায়খানাসহ দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। টিউবওয়েল ও শৌচাগারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লোকজন খোলা স্থানে সারছেন প্রয়োজনীয় কাজ । সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে সব থেকে বিপাকে পড়েছেন নারী ও কিশোরীরা।



এছাড়াও নদ-নদীগুলোর পানি কমায় নতুন করে দেখা দিচ্ছে নদী ভাঙন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে তা অপর্যাপ্ত । বন্যাকবলিত এসব এলাকায় গো-খাদ্য, ওষুধ ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা।


চিলমারির নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়া এলাকার মাইদুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢলে স্বল্প সময়ে প্লাবিত হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। বিগত বছরের মতো এবার কেউই দুর্যোগকালীন সময়ের পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারেনি। তাই দুর্ভোগ বেড়েছে।’


পার্শ্ববর্তী রমনা জোড়গাছ বাঁধ এলাকার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বানভাসিদের অনেকেই গবাদিপশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গো-চারণ ভূমিগুলো ডুবে যাওয়ায় গরুর খাদ্যের যোগানে খুব মুশকিল হয়েছে।


চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, পানি কমতে শুরু করলেও এখনো আমার ইউনিয়নের চর ও দ্বীপচর তলিয়ে আছে। অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সরকারিভাবে ধাপে ধাপে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি।



সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন,পানি অনেক কমছে। লোকজন বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু আমার এলাকার ৫-৬টি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।


কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, জেলায় ও ভারতের উজানে ভারি বৃষ্টিপাত না থাকায় জেলার প্রধান সব নদ-নদীর পানি গত ৩ তিন ধরে ধীরগতিতে কমতে শুরু করছে। যার ফলে জেলার উঁচু চরগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে।



জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন,বানভাসিদের কষ্ট লাঘবের জন্য ৯ উপজেলায় ৬০৯ মেট্রিক টন চাল, ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ২৫,৯৭০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে বানভাসিদের মাঝে যা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি জরুরি মুহূর্তে যেখানেই প্রয়োজন সেখানে আমরা ত্রাণ দিচ্ছি।


বিবার্তা/বিপ্লব/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com