
কক্সবাজারে টানা ভারি বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে বসতি, থেমে গেছে আয়ের একমাত্র উৎস, তছনছ রাস্তাঘাটও। একই সঙ্গে অনেক স্থানে চলাচলের রাস্তা পরিণত হয়েছে খালে। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, সহায়তা না করে সেলফি তুলে দায় সারছেন অনেক জনপ্রতিনিধি। তবে তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্তদের টিন, চাল ও নগদ অর্থ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে পৌর মেয়র।
১৩ জুলাই, শনিবার দুপুরে পানিবন্দি গ্রামগুলোতে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করায় এমন চিত্র ভেসে উঠছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) থেকে টানা দু-দিন ভারি বৃষ্টিপাত হয় কক্সবাজারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, একদিনেই বৃষ্টিপাত হয় ৩৩৪ মিলিমিটার। এ বৃষ্টিপাতে কক্সবাজার শহরের ফদনারডেইল, পূর্ব-মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়া, পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়ার বসতির পর বসতি তলিয়ে যায় পানিতে। ডুবে যায় ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট ও দোকানপাট। আর এসব এলাকার ৬ হাজারের বেশি মানুষ হয়ে পড়েন পানিবন্দি।
টানা ৩ দিন পানিবন্দি থাকার পর শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কক্সবাজারের পানিবন্দি এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি পানি নামেনি। যে-সব স্থানে পানি নেমেছে সেসব স্থানে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। এছাড়া এখনো বেশ কিছু জায়গা পানিতে তলিয়ে আছে। ডুবে আছে চলাচলের রাস্তা।
ভুক্তভোগীরা বলছে, ভারী বর্ষণে এমন পানিবন্দি অবস্থা অতীতে হয়নি। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট, ক্ষতিগ্রস্ত বসতি নিয়ে পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
পূর্ব-মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়ার বাসিন্দা ছলিমা খাতুন বলেন, ‘পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল বসতি। এখন পানি নামছে আর মাটি দিয়ে বসতি উঁচু করছি। এখনও কোনো খাওয়া-দাওয়া হয়নি।’
মাস্টার কামাল হোসেন বলেন, ‘চলাচলের রাস্তা পরিণত হয়েছে খালে। পানির কারণে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। পানিতে মসজিদ ডুবে যাওয়া নামাজও পড়া যায়নি। এখন বসতি থেকে পানি নামছে আর ঘর-বাড়িগুলো ঠিক করছি।’
রহিমা বেগম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘রান্নার চুলা পানিতে ভেসে গেছে। গত ২ দিন রান্না হয়নি। কিছু শুকনো খাবার কিনে এনে দিনযাপন করছি।’
ইজিবাইক চালক হুমায়ুন বলেন, ‘পানিতে ইজিবাইকের মটর নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ইজিবাইক চালানো যাচ্ছে না। আর ইজিবাইক ঠিক করলেও রাস্তা তো ক্ষত-বিক্ষত, পানিতে ডুবে থাকা প্রধান সড়কেও যাওয়া যাবে না। আয়ের একমাত্র উৎস বন্ধ, কি করব কিছুই ভাবতে পারছি না।’
সরেজমিন পূর্ব-মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়ায় দেখা যায়, পানি নামতে শুরু করলেও বসতিগুলোতে হচ্ছে না রান্না। ফলে অনাহারে রয়েছেন অনেকেই। আবার অনেকেই নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করছেন বসতি মেরামতের।
ভুক্তভোগীদের দাবি, সহায়তা নিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না। শুধু জনপ্রতিনিধিরা সেলফি তুলে দায় সারছেন।
মো. আনিছ কুতুবী বলেন, ‘ভারি বর্ষণের কারণে পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি। অনেকের ঘরে রান্নার চুলাও নেই। হয় পানিতে ভেসে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে অনেক জনপ্রতিনিধি দেখতে এসেছিলেন। অনেকে সেলফি ও ছবি তুলে চলে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো মানুষের খবর নিচ্ছে না। কোনো ধরনের সহায়তা করছে না।’
রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা দুর্ভোগে আছি কিন্তু কাউন্সিলর কোনো খবরও নিল না। কিছু সহায়তাও করল না। শুধুমাত্র কাউন্সিলরের স্ত্রী এসে পরিস্থিতি দেখে গেছে। আমাদের কষ্টে দেখে সবাই ছবি তুলতে আসে কিন্তু সহযোগিতা করে না।’
তবে পৌর মেয়র জানিয়েছে, নালা দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। আর ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে টিন, চাল ও নগদ অর্থ দেয়া হবে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘পানিবন্দি হয়ে পড়ার বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত পানি যাওয়ার যে নালা, ছড়া ও খালগুলো ছিল তা দখল কিংবা সরু হয়ে গেছে। ফলে পানি আটকে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে বাসিন্দারা। এবার নালা ও খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোববার থেকে অভিযানে নামবে পৌরসভা। এতে জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
মেয়র আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা আজকের মধ্যে হয়ে যাবে। আর রোববার (১৪ জুলাই) থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাল, টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে।’
টানা ভারি বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে কক্সবাজার শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বিবার্তা/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]