নাসিরনগরে যৌন নিপীড়ন মামলার আসামিকে বাঁচাতে প্রধান শিক্ষকের কৌশল
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ২৩:৩৯
নাসিরনগরে যৌন নিপীড়ন মামলার আসামিকে বাঁচাতে প্রধান শিক্ষকের কৌশল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে টেকানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পাঁচ শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ একই গ্রামের ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরের বিরুদ্ধে। ঘটনার দিনই ওই কিশোরকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরের দিন আদালতের মাধ্যমে কিশোরকে গাজীপুর কিশোর শোধনাগারে পাঠানো হয়। ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই কিশোর জামিনে আসে।


ওই কিশোর বাড়িতে আসার পরই বাধে বিপত্তি। সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রথম দিনের ঘটনার বিপরীত বক্তব্য দিয়ে যৌন নীপিড়নের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ অভিযুক্ত কিশোরকে চিনতে পেরে আদালতে শিশুরা ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রৌশন আরা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোবারক মিয়ার সামনে শিশুদের একটি মোবাইল থেকে ছবি দেখালে অভিযুক্তকে সনাক্ত করে। থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগও করেন ভুক্তভোগীর বাবা। তারপর প্রাধান শিক্ষক হঠাৎ করেই উল্টো অবস্থান নিয়েছেন। স্থানীয়দের দাবী স্কুলে যৌন নীপিড়নের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কিছু অতিউৎসাহী গণমাধ্যমকর্মী ধর্ষণের ঘটনা লিখে শিরোনাম করে নিউজ করেছে। যা খুবই দুঃখজনক। এ ক্ষেত্রে একটি ঘটনাকে ধাপাচাপা দিতে নতুন ঘটনার জন্ম হচ্ছে। এবং প্রকৃত ঘটনা আড়াল হতে পারে।


স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোবারক মিয়া বলেন, ঘটনার দিন সকালে প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন করে। কিন্তু আমি ফোন না ধরায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি মন্টু চৌধুরীকে ফোন করেন। যখন আমরা দুজন বিদ্যালয়ে আসি, তখন প্রায় সাড়ে নয়টা। আমি প্রধান শিক্ষককে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের কথা বলি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বলেন বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়েছে। তখন আমরা স্কুল থেকে চলে আসি। তিনি আরো জানান, গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আমার ছেলের নাম উল্লেখ করেন প্রধান শিক্ষক। পরে আমি আমার ছেলেকে ওসিকে সামনে রেখে শিশুদের দেখাই। তখন ওই শিশুরা বলেন আমার ছেলে ঘটনার সাথে জড়িত না।


ভিন্ন বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে জানতে টেকানগর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রৌশআরার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কথা বলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।


টেকানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মো. মন্টু চৌধুরী বলেন, প্রধান শিক্ষক ও শিশুদের বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনা সত্য মনে হয়। তবে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে বলতে হবে। কিন্তু নতুন করে প্রধান শিক্ষক কেন এমন বক্তব্য দিচ্ছে সেটা তার বিষয়।


অথচ ঘটনার পর শিশুদের সাথে একান্তে কথা বলে ওই প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার সবার জবানবন্দি নেন। এ সময় অভিযুক্তের নাম ও বাবার পরিচয় দেয় তারা। এ প্রতিবেদকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও রয়েছে । কিন্তু প্রধান শিক্ষক ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই অভিযুক্তকে রক্ষা করতে ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন।


নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহাগ রানা বলেন, শিশুরা আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। ভিকটিমের পরিবার থানায় মামলা করেছেন। শিশুরা প্রধান শিক্ষকের সামনে অভিযুক্তের ছবি দেখে সনাক্ত করেছে। সবকিছু মিলিয়ে ঘটনার সত্যতার মিলেছে। প্রধান শিক্ষক ঘটনার এক সপ্তাহ পর কেন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন সেটা বোধগম্য নয়।


উল্লেখ্য, গত ৪ জুন টেকানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পাঁচ শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার (যৌন নীপিড়ন) অভিযোগ একই গ্রামের ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরের বিরুদ্ধে।


বিবার্তা/আকঞ্জি/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com