
আব্দুর রহমান একসময় নিজের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার তথ্য গোপন করে চক-দিঘলী ব্যারাক হাউজের সরকারি ঘর বরাদ্দ নেন। কিছুদিন পর সেই ব্যারাক ঘর অন্যের কাছে বিক্রি করে ফিরেন নিজের বাড়িতে। সেটাও কমবেশি ২০ বছর আগের ঘটনা।
গত ২০ বছরে আব্দুর রহমানের সচ্ছলতার পালে আরও হাওয়া লেগেছে। দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। কিনেছেন মাঠের জমি, গড়েছেন পাকা বাড়ি। সম্প্রতি জরাজীর্ণ টিনশেডের জায়গায় সরকার আধাপাকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এবার অধিক লাভের কথা বিবেচনা করে বিক্রি করা ঘরে ফিরতে চাইলে শুরু হয় একঘর নিয়ে দুই দাবীদারের দ্বন্দ্ব। এমন ঘটনা ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা চক-দিঘলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে।
তথ্যমতে, উপজেলার চক দিঘলী ব্যারাক হাউজে ১৯৯৮ সালে সরকার ১০০টি ঘর নির্মাণ করে। সম্প্রতি সেখানে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আধাপাকা ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এখন নতুন ঘরে বরাদ্দ পেতে প্রায় ২০ জন সচ্ছল পুরোনো দাবিদার ও স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অসচ্ছল ভূমিহীনরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন সচ্ছল বাসিন্দা চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে নাটোর আদালতে মামলা করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আব্দুর রহমান (৬০) কৃষি জমিতে ফসল সংগ্রহে গিয়েছেন। তার স্ত্রীর দাবি আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও সরকারি বরাদ্দ দেয়া ঘরে তারাই থাকবেন। ঘর বিক্রি করে আসা প্রসঙ্গে জানান, দলিল করে বিক্রি করা হয়নি।
একই অবস্থা রোজিনা বেগমেরও। তিনিও তার বরাদ্দের ঘরে এক অসহায়কে থাকার সুযোগ দিয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মেদপুরে পাকা ঘরে বসবাস করছেন। সেখানে মুদি দোকান রয়েছে তার। ট্রাক চালক স্বামীকে একটি ট্রাকও কিনে দিয়েছেন। সচ্ছলতা ফিরলেও তিনিও চান আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বরাদ্দ।
শুধু আব্দুর রহমান, রোজিনা বেগমই নন- তাদের মতো মফিজ উদ্দিন, সাইদুর, তহিদুল, আরতি, ইব্রাহীম, খোরশেদ, মন্টু, মজিদ, কেরামত, খবির, কাজলীসহ অন্তত ২০ জন বাসিন্দা যারা পূর্বের ব্যারাক ঘরে না থাকলেও বর্তমান আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর দাবি করছেন।
২৪ বছর ধরে ব্যারাক হাউজে বসবাসকারী আব্দুর রহমান (৮০) জানান, চক-দিঘলী ব্যারাকে সরকার প্রায় ১০০ পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন। শুরুর দিকে সবাই বসবাস করলেও অল্প কিছুদিন পরে অন্তত ২০ পরিবারের কেউ কেউ ঘর বিক্রি কিংবা অসহায়দের বসবাসের সুযোগ করে নিজ ঠিকানায় ফিরেছেন। এখন পাকা ঘরের অধিকার নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।
এ বিষয়ে চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বিবার্তাকে জানান, স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে সরকারি ঘর বরাদ্দের সুযোগ নেই। বরাদ্দ নিয়ে যারা ব্যারাক হাউজে বসবাস করেনি অথবা যাদের সচ্ছলতা ফিরেছে- তাদের বরাদ্দ বাতিল করে দীর্ঘ সময় ধরে যারা বসবাস করছেন এমন অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের ঘর বরাদ্দ দেয়ার দাবি তার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বিবার্তাকে জানান, পূর্বের জরাজীর্ণ ব্যারাক হাউজ ভেঙে সরকার সেখানে ৯৮টি ঘর নির্মাণ করছে। কারা সেখানের বাসিন্দা হবেন সেটা দেখবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। যারা বরাদ্দ পেতে আদালতে গেছেন আদালতের আদেশ পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা আক্তার বিবার্তাকে জানান, বিধি অনুসারে প্রকৃত ভূমিহীন, গৃহহীনরা সরকারি ঘর বরাদ্দ পাবেন। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি তদন্ত সাপেক্ষে সমাধান করা হবে।
বিবার্তা/জনি/রোমেল/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]