
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে খেলার মাঠ তৈরিতে একের পর এক সরকারি বরাদ্দ ‘সিডিএ আবাসিক মাঠে’ দিলেও শেষে মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসানোর ফলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় উপজেলার কালারপোল স্কুল মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টে আয়োজনের খবর পাওয়া গেছে।
এতে পুরো উপজেলা জুড়ে ক্রীড়ামোদী সংগঠক ও খেলোয়াড়দের মাঝে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেননা, কর্ণফুলীর সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রশীদ এর বিশেষ অনুরোধে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদার ১০ লক্ষ টাকার বরাদ্দের প্রকল্প দেন সিডিএ আবাসিক খেলার মাঠে, যাতে ছেলে-মেয়েরা খেলার সুযোগ পায়।
পরে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনে আরো এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে গোলপোস্ট তৈরি করা হয়। কিন্তু সরকারি এসব বরাদ্দ কোন কাজেই আসেনি। গত কোরবানি ইদে উপজেলা প্রশাসনের নীরবতায় এ জে চৌধুরী কলেজ মাঠ ও মইজ্জ্যারটেক সিডিএ আবাসিক মাঠে পশুর হাট বসিয়ে মাঠের বারোটা বাঁজিয়েছে।
অথচ খেলার মাঠে পশুর হাট আর মেলা না করতে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রতিটি জেলায় মাঠ করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই নির্দেশনা মানছেন না কর্ণফুলীর দায়িত্বশীলরা। এখানে বড় মাঠ পেলেই খেলা বন্ধ করে বসছে পশুর হাট, নয়তো মেলা।
অথচ শুধুমাত্র খেলার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম অংশের সীমানা চিহ্নিত করে সেটি দখলমুক্ত করা হয়েছে খেলার জন্য। যেটি বিশেষায়িতভাবে গড়ে তোলার ঘোষণাও দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। অথচ কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন হাঁটছেন উল্টোপথে।
সরেজমিনে কলেজ বাজার ও আবাসিকের মাঠের বেহাল দশা দেখতে পেয়েছেন প্রতিবেদক। এভাবেই কর্ণফুলীর প্রতিটি মাঠ হারাচ্ছে খেলার উপযোগিতা। ফলে কোমলমতি শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে খেলার সুযোগ থেকে। পাড়ায় পাড়ায় বাড়ছে মাদকাসক্ত তরুণের সংখ্যা। বাড়ছে শিশুদের মোবাইল আসক্তি। বাড়ছে কিশোর গ্যাং। তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম টার্ফ।
কিন্তু একের পর এক সরকারি বরাদ্দ আর সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কষ্টে অর্জিত মাঠে সুফল পেলো না কর্ণফুলীবাসী। দুটি খেলার মাঠ অনুপযোগী হওয়ায় সত্ত্বেও উপজেলা প্রশাসন সোমবার (০১ জুলাই) সকালে উপজেলার কালারপোল হাজী ওমরা মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন।
কর্ণফুলী উপজেলার সচেতন মহল জানিয়েছেন, এ জে চৌধুরী কলেজ মাঠ, মইজ্জ্যারটেক সিডিএ আবাসিক মাঠ ও ফকিরনীরহাট মহাসড়কে পশুর হাট বসিয়ে উপজেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে সংস্কারেও কোন নজর রাখেনি। ফলে, উপজেলার এক কোণে কালারপোল স্কুলের খানাখন্দ বালি ভরা মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী এলাকার মো. বাহার হোসেন খান বিবার্তাকে জানান, বিষয়টি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। সিডিএ আবাসিক ও এ জে চৌধুরী কলেজ মাঠটি খেলার উপযোগী থাকলে আজকে কর্ণফুলী উপজেলাবাসীকে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ উপহার দেয়া যেত।
ইমতিয়াজ আহমদ মিহির বিবার্তাকে জানান, খেলার মাঠে গরুর বাজার করার জন্য প্রশাসন অনুমোদন দিলো, তাজ্জব কাণ্ড! মইজ্জ্যারটেকে এত বছর গরুর বাজার বসেনি? এবার কেন গিয়ে মাঠের মধ্যে বসাতে হলো। পুরো আবাসিকে কি কেবল খেলার মাঠটাই চোখে পড়ছে। আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান কি ঘুমের মধ্যে ছিল? বারণ করার দরকার ছিল না!
কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মহসিন বিবার্তাকে জানান, কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন কঠোর হলো কোন মাঠ নষ্ট হতে পারতো না। অনেকটা উপজেলা প্রশাসনের গাফিলতি ছিল বলা যায়।
নুর মোহাম্মদ ইকবাল বিবার্তাকে জানান, সিডিএ মাঠ ব্যক্তিমালিকাধীন সম্পত্তি। তাছাড়া এটা ইজারার টাকা কার পকেটে যায়- এটা জানা দরকার। মাঠে প্যান্ডেল আর বাঁশের খুঁটি এমনি এমনি হয়নি।
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য মাহবুব আলম তারা বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক।
একই বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু বিবার্তাকে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিধি বিধান সমূহ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের রেজুলেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে গরুর বাজার করাও এখন কর্ণফুলী প্রশাসন আইনে রূপান্তরিত করেছে। যা একটি নিকৃষ্টতম উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কোন ধরনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক বিবার্তাকে জানান, শুধু মাঠের অভাবে কর্ণফুলীতে একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ করতে পারছি না। মেরিন ফিশারিজ এর মাঠ চাইলাম এরা অনুমোদন দেয়নি। আরেকটি মাঠ ছিল সিডিএ এর আবাসিক। সেটা নষ্ট করলো গরুর বাজার বসিয়ে। আশা করি ইজরার টাকা থেকে মাঠ সংস্কার করার ব্যবস্থা নেবেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, শহরের কোথাও মাঠ নেই। মফস্বলেও একই আঘাত করা হচ্ছে। খেলা বন্ধ করে আর্থিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য পশুর হাট বা মেলা করার কোনো যৌক্তিকতা হয় না। অনেক সময় মাঠ থাকলেও ব্যবহারের উপযোগী হয় না। যেমন কারো শার্ট আছে। কিন্তু হাত নেই, বোতাম নেই। তাহলে পরবেন কিভাবে। মাঠ আছে কিন্তু অনুপযোগী করে ফেলেছে। এসব বন্ধের জন্য সর্বস্তরের ক্রীড়াপ্রেমী ও ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিবার্তা/জাহেদ/রোমেল/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]