
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুর রহমান ইজাজকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়কে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনের শৃঙ্খলা ও মর্যাদা পরিপন্থি এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে হাসান আল ফারাবীকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৬ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেলে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে বিকেল পৌনে ৫টায় মৃতদেহ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাদ এশা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা ও পরে গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার উত্তর সুহিলপুর কেন্দু বাড়ি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ২য় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত ফারাবীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। উদ্ধার হয়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি।
এদিকে প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে গুলি ছুড়ে ছাত্রলীগ কর্মী ইজাজকে হত্যার ঘটনার পর এলাকা জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কের ঘোর কাটেনি এলাকাবাসীর। এদিকে ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল উদ্দিন খোকা ও তার অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিহতের বাড়ি কলেজ পাড়ায় চলছে শোকের মাতম। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে কাতর বাবা-মা। ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তারা। নিহতের মা ফেরদৌসী রহমান বলেন, আমার একমাত্র ছেলে ইজাজ। নির্বাচনের আনন্দ মিছিল আমার বুকের ধন খালি করছে। নির্বাচনের দিন বিকেলে তাকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলেছিলাম, জানাল চলে আসবে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
ইজাজের বাবা আমিনুর রহমান বলেন, যে সন্তান হারায়, সে বুঝে বুকের কত যন্ত্রণা। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার চাই।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা বিভাগ নিবিড়ভাবে মাঠে কাজ করছে। হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। হত্যাকারীরা যেখানেই থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহদাৎ হোসেন শোভনের বিজয় মিছিল করার সময় শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দিনের সমর্থক জালাল উদ্দিন খোকার নির্দেশে ইজাজের মাথায় গুলি করে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়ের গুলিতে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুর রহমান ইজাজের বাড়িতে ছুটে গেছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজি মো. হেলাল উদ্দিন ও নব-নির্বাচিত সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহদাৎ হোসেন শোভনসহ স্বজনরা নিহতের কলেজ পাড়াস্থ বাড়িতে ছুটে যান।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাজি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে হামলাকারী ছেলেটি ফিল্মি স্টাইলে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে পিস্তল কোমড়ে রেখে হেঁটে চলে যায়। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত এবং নির্দেশদাতা তাদের বিচারও আমরা চাই। সন্ত্রাসী কোনো দলের না। তাদেরকে আমরা দলে রাখব না। দল থেকে তারা কোনো প্রশ্রয় পাবে না।
এদিকে নিজের কর্মীর এমন মৃত্যুতে হতবাক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নব-নির্বাচিত সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহদাৎ হোসেন শোভন। তিনি বলেন, যে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে তা মর্মান্তিক। যে গুলি করেছে এবং অস্ত্রের জোগান দিয়েছে তাদের সকলের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
বিবার্তা/আকঞ্জি/রোমেল/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]