চট্টগ্রামে ব্যাংকের লকার থেকে উধাও গ্রাহকের ১৪৯ ভরি সোনা
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ০০:৩১
চট্টগ্রামে ব্যাংকের লকার থেকে উধাও গ্রাহকের ১৪৯ ভরি সোনা
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামে চকবাজারে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের লকার থেকে এক গ্রাহকের ১৪৯ ভরি সোনা উধাও হয়ে গেছে। বর্তমানে এক ভরি সোনার বাজারমূল্য ১ লাখ ১৭ হাজার ১৭৭ টাকা। সে হিসেবে খোয়া যাওয়া সোনার দাম ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৩ টাকা।


ঘটনাটি গত ২৯ মে দুপুরে ঘটলেও এখন পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা গ্রাহক কেউই থানায় অভিযোগ করেননি।


তবে এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী সোনার মালিক রোকেয়া বারীর দাবি, এসব সোনা ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারীরাই সরিয়ে ফেলেছেন। এদিকে ব্যাংক থেকে সোনা চুরির বিষয়টি চট্টগ্রাম নগরীতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।


জানা যায়, নগরের চকবাজার এলাকার ইসলামী ব্যাংকে গেল ২৯ মে লকার খুলে চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন সোনার মালিক রোকেয়া বারী। এরপর তিনি চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাধারণ ডায়েরি এন্ট্রি করেনি চকবাজার থানা। তাই আগামী সোমবার (৩ জুন) চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। রোকেয়া বারী নগরের চট্টেশরী রোডের বিটিআই বেভারলী হিলসের বাসিন্দা।


তার চুরি হওয়া ১৪৯ ভরি সোনার মধ্যে রয়েছে ৪০ পিস হাতের চুরি (বড় সাইজ)। যার ওজন ৬০ ভরি। গলা ও কানের ৪টি জড়োয়া সেট। যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট। ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন। ১৫ ভরি ওজনের ৪টি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল। যার ওজন ১১ ভরি।


গ্রাহক রোকেয়া বারী বলেন, ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখায় ১৭ বছর ধরে একটি লকার ব্যবহার করে আসছি। ওই শাখার আমার একটি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। কিন্তু গত ২৯ মে দুপুর দেড়টায় কিছু স্বর্ণ আনতে যাওয়ার পাশাপাশি এসব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে গিয়েছি। এসময় লকারের দায়িত্বে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তাকে লকার খুলে দেওয়ার অনুরোধ করি। তিনি তার চাবি দিয়ে লকার রুমে দরজা খোলার পর দেখতে পাই আমার লকার খোলা। পরে আমি বিষয়টি দ্রুত চকবাজার থানার ওসিকে জানাই। তিনি দ্রুতই ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেখতে পান আমার লকারে মাত্র ১১ ভরি স্বর্ণ আছে। আমার বিশ্বাস ব্যাংকের লোকজন যোগসাজশে স্বর্ণগুলো গায়েব করেছে।


তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ব্যাংকই যদি আমাদের কাছে নিরাপদ না থাকে, তাহলে আর কাকেই বা বিশ্বাস করব।


রোকেয়া বারীর ছেলে রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে বলেন, এ ঘটনায় চকবাজার থানার একটি সাধারণ ডায়েরি করতে যাই, কিন্তু ওসি সাহেব বলেছেন জিডি হবে না মামলা করতে হবে। তাই আগামী সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে আমরা মামলা দায়ের করব। সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।


চিকিৎসক রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক বলেন, তার মা ২০০৭ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় তার স্বর্ণের গহনা রাখার জন্য লকার ব্যবহার করে আসছেন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ব্যাংকে গিয়ে লকার রুমের ইনচার্জকে তার লকার দেখার অনুরোধ করেন। মায়ের কাছে লকারের মূল চাবি আছে এবং আরেকটি ডুপ্লিকেট চাবি ইনচার্জের কাছে থাকে।


তিনি বলেন, তারা দুজন লকার রুমে প্রবেশ করেন। তখন ইনচার্জ প্রথমে দেখেন যে মায়ের লকারটি খোলা। পরে আমার মা লকারটি পরীক্ষা করে ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে স্বর্ণালঙ্কার বিষয়টি জানান।


মামলা প্রসঙ্গে মারজুক বলেন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং চকবাজার থানার ওসি লকার রুম দেখে গেছেন। বুধবার রাতেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওসি আমাদেরকে বলেন মামলা করতে। আমরা আমাদের পরিবারিক আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করছি। এ বিষয়ে সোমবার আদালতে অভিযোগ দায়ের করব।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, নগরীর বেভারলি হিল এলাকার বাসিন্দা ও ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক রোকেয়া বারী ব্যাংকের একটি লকারে প্রায় ১৪৯ ভরি স্বর্ণের গহনা রেখেছিলেন। ২৯ মে লকার ইনচার্জের সঙ্গে লকার রুমে প্রবেশ করে তিনি দেখতে পান যে, তার লকারটি খোলা এবং সেখানে কোনো গহনা নেই।


চকবাজার থানার ওসি ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, লকার রুমে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। ভিকটিম ও তার ছেলে থানায় জিডি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ঘটনাটির গুরুত্বের কারণে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে বলেছি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) আকিজ উদ্দিন বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি। গ্রাহকের কাছে মূল চাবি আছে, কিন্তু আমাদের কাছে নেই। তিনি এক মাস আগে ব্যাংকে এসে লকারটি পরীক্ষা করেছিলেন। আমাদের কাছে কোনো গ্রাহকের লকারের সঞ্চয় সম্পর্কে তথ্য থাকে না। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com