উখিয়ায় বন কর্মকর্তা হত্যা: মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেফতার ২
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:১৪
উখিয়ায় বন কর্মকর্তা হত্যা: মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেফতার ২
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজারের উখিয়ায় ডাম্পার ট্রাকের চাপায় বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সদস্যরা। র‌্যাবের দাবি এদের মধ্যে একজন এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী।


গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- মো. কামাল উদ্দিন (৩৯), উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের এবং হেলাল উদ্দিন (২৭) একই ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার নূর আলম মাইজ্জার ছেলে। কামাল উদ্দিনের পরিকল্পনাতেই বন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।


এ নিয়ে এ ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ।


সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে র‌্যাব-১৫’র একটি চৌকস আভিযানিক দল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কামালকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে এবং হত্যার সহযোগী হেলালকে উখিয়ার কোটবাজার থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তারা ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫’র মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালাম চৌধুরী।


১৬ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনার ব্রিফিংকালে র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন গ্রেফতারকৃতদের বরাতে জানান, উখিয়ার রাজাপালং ইউপিস্থ হরিণমারা এলাকায় স্থানীয় হেলাল, গফুর ও বাবুলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। এ চক্রের অধীনে প্রায় ১০/১২টি ডাম্পার ও কয়েকটি মাটিকাটা ড্রেজার রয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে বন কর্মকর্তাদের অগোচরে পাহাড়ের মাটি কেটে এনে প্রতি ডাম্পার ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিভিন্ন জনের কাছে জমি ভরাটের জন্য বিক্রি করেন। চক্রের মূল হোতারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রেখে বাকি টাকা ডাম্পারের মালিকদের গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ পরিশোধ করে দেয়। আর বনের কোন টিম আসছে কিনা তার তথ্য সংগ্রহে বিভিন্ন পয়েন্টে চক্রের লোকজন পাহারা বসাত।


তিনি আরও জানান, নিহত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হরিণমারা বন অঞ্চলের দায়িত্বপূর্ণ বিট কর্মকর্তা। তিনি সাহসী ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বন বিভাগের তথ্য মতে, গত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি একাধিক অভিযান চালিয়ে পাঁচটি মাটিকাটার ড্রেজারসহ কয়েকটি ডাম্পার আটক করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে বন আইনে কয়েকটি মামলাও দায়ের করেছেন। ফলশ্রুতিতে এ বন কর্মকর্তা অপরাধী চক্রের চক্ষুশূলে পরিণত হন এবং অপরাধীরা তাকে শায়েস্তা করতে পরিকল্পনায় বসেন।


র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ তার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বন বিভাগের আরও কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ের মাটি বোঝাই করা অবস্থায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালের একটি ডাম্পার আটক করেন এবং এ ঘটনায় কামালসহ চারজনের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলাও দেন। ফলে কামালসহ অন্যান্য আসামিরা বন কর্মকর্তা সাজ্জাদের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। এরপরই কামাল, হেলাল, সৈয়দ আলমসহ এ চক্র আরও কয়েকজন বন কর্মকর্তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।’


তিনি বলেন, ‘এর ধারাবাহিকতায়, গত ৩১ মার্চ রাত অনুমান ২টার দিকে ঘাতক বাপ্পি হত্যার পরিকল্পক ড্রাইভার কামালসহ দুজন হেল্পার সৈয়দ আলমের মালিকানাধীন একটি ডাম্পার নিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটতে বের হন। ডাম্পারের মালিক সৈয়দ আলম বন কর্মকর্তাদের আগমনের উপর নজরদারি রাখতে বাজারে অপেক্ষা করতে থাকেন। ইতোমধ্যে পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ তার আরেক সদস্য মো. আলীকে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাপ্পি ও কামাল মাটি বোঝাই ডাম্পার নিয়ে ফেরত আসার সময় স্থানীয় ফরিদ আহম্মদের দোকানের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদকে আসতে দেখে। তখন ডাম্পারের ড্রাইভার বাপ্পির পাশে বসে থাকা কামাল পূর্ববর্তী ঘটনার আক্রোশের জেরে এবং পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গাড়ি না থামিয়ে বন কর্মকর্তাকে গাড়ি চাপা দেওয়ার জন্য বাপ্পিকে নির্দেশ দেন। বাপ্পি গাড়ি না থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও তার সহযোগীকে চাপা দেয়। ফলে ড্রাম্পারের চাপায় মাথায় গুরতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ মৃত্যুবরণ করেন এবং সহযোগী মোহাম্মদ আলী আহত হন।’


র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক সাজ্জাদ বলেন, এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ স্থানীয় এবং জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একই সাথে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী ও বন কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সংশ্লিষ্টরা মানববন্ধন করেন। পাশাপাশি ৩১ মার্চ রাতে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বাদী হয়ে এজহারনামীয় ১০ জন এবং অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি অবগত হয়ে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এর ফলশ্রুতিতে কামাল ও হেলাল গ্রেফতার হন।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত কামাল ও হেলাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলে উল্লেখ করেন র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক। তাদের উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com