ব্রিটিশবিরোধী ও টঙ্ক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪, ১৭:১৯
ব্রিটিশবিরোধী ও টঙ্ক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন
নেত্রকোণা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নেত্রকোণার দুর্গাপুরে ব্রিটিশবিরোধী ও টঙ্ক আন্দোলন তথা হাজং বিদ্রোহের একমাত্র সংগ্রামী মুখপাত্র কমরেড কুমুদিনী হাজং (৯২) মারা গেছেন।


২৩ মার্চ, শনিবার দুপুরে বার্ধক্য জনিত কারনে নিজ বাড়ি উপজেলার বহেড়াতলীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।


দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামে পাহাড়ী অঞ্চলের এক টিলায় বসবাস করতেন তিনি। হাজং বিদ্রোহের সাক্ষী কুমুদিনী হাজং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, টঙ্ক আন্দোলন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি জুলুম বৈষম্য, নিপীড়ন, ১৯৬৪ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কালের স্বাক্ষি ছিলেন তিনি।


টঙ্ক আন্দোলনকারীদের খোঁজ করার নামে আন্দোলনকারী কৃষক হাজং নেতা কুমুদিনী’র স্বামী লংকেশ্বর হাজংকে ঘরে না পেয়ে ব্রিটিশ পুলিশ নববধূ কুমুদিনীকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুর্গাপুর সেনাছাউনির দিকে। এই খবর পেয়ে বহেরাতলী গ্রামের রাশিমনি হাজং শতাধিক নারী পুরুষ নিয়ে দেশীয় দা, ঝাড়ু, বল্লম, লাঠি, তীর ধনুকসহ সুমেশ্বরী নদীর তীরে কুমুদিনীকে ছেড়ে দিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু পুলিশ কোন কথাই না শুনে টেনেহিঁচড়ে কুমুদিনীকে দুর্গাপুরের সেনাছাউনির দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে রাশমনি হাজং দা দিয়ে পুলিশদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকলে একজন পুলিশ ঘটনাস্থলেই মারা যান।


পুশিলের গুলিতে রাশিমনি হাজং নিহত হন। সহযোদ্ধা সুরেন্দ্র হাজং সেই পুলিশকে কুপিয়ে মেরে ফেলেন। পরবর্তিতে পুলিশের গুলিতে ২২ জন হাজং কৃষক নারী-পুরুষ মারা যায়। পরস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ চলে যায়। গ্রামবাসীদের ওপর আরো হামলা হতে পারে এই ভয়ে লাশগুলো সুমেশ্বরী নদীতে ভাসিয়ে দেয়। পরদিন ব্রিটিশ পুলিশ বহেরাতলী গ্রামে তান্ডব চালায় এবং পুরো গ্রামকে তছনছ করে ফেলে। কুমুদিনী হাজং এর স্বামী মারা যান ২০০০ সালে। তিনি দুর্গাপুরবাসীর কাছে গর্ব ও গৌরবের সংগ্রামী মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।


কুমুদিনী হাজং বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মননা পেয়েছেন তারমধ্যে, ১৯৯৯ সালে তেভাগা কৃষক আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে পুরস্কার, ২০০৩ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ নির্বাচিত পুরস্কার, ২০০৫ সালে স্বদেশ চিন্তা সংঘ ড. আহম্মদ শরীফ স্মারক পুরস্কার, ২০০৭ সালে মনিসিংহ স্মৃতিপদক পুরস্কার, ২০১০ সালে সিধু কানহু ফুলমনি পদক, ২০১৪ সালে জলসিঁড়ি পদক, ২০১৮ সালে হাজং জাতীয় পুরস্কার, ২০২১ সালে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক সম্মাননা, ২০২২ সালে পথ পাঠাগার সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।


তার মৃত্যুতে, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং, ইউএনও এম রকিবুল হাসান, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কমরেড দিবালোক সিংহ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচালক গীতি কবি সুজন হাজং, দুর্গাপুর প্রেসক্লাব পরিবার, পথ পঠাগার পরিবার, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন, সিপিবি নেত্রকোনা জেলা ও দুর্গাপুর উপজেলা কমিটি সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদন জানিয়েছেন। মৃত্যুকালে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।


রবিবার (২৪ মার্চ) সকালে স্থানীয় শ্মশানঘাটে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com