চট্টগ্রাম কারাগারে কয়েদির অস্বাভাবিক মৃত্যু
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ২১:৫০
চট্টগ্রাম কারাগারে কয়েদির অস্বাভাবিক মৃত্যু
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ইব্রাহিম নেওয়াজ (৩০) নামে সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।


সোমবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় কারাগারের ভেতরে খাদ্য গুদামের সামনে চৌবাচ্চার টিনশেডের রডের সঙ্গে প্লাস্টিকের বস্তা ও কম্বলের বর্ডারের অংশ দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।


তবে কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, আত্মহত্যার চেষ্টাকালে তাকে উদ্ধারের পর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


মারা যাওয়া কয়েদি ইব্রাহিম রাঙামাটি জেলার কোতোয়ালি থানাধীন আলমডক এলাকার আলী নেওয়াজের ছেলে।


রাউজান থানার একটি অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ইব্রাহিম গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কারাগারে যান।


এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকালে একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা করেছে জানিয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম ওবায়েদুল হক বলেন, ওই কয়েদি আত্মহত্যা করেছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন। তার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।


কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক শামসুল ইসলাম জানান, সোমবার ৭টা ৪০ মিনিটে ইব্রাহিমকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনে কারা কর্তৃপক্ষ।


কর্তব্যরত চিকিসক ডা. মহিন উল্লাহর বরাত দিয়ে এসআই শামসুল ইসলাম জানান, ইব্রাহিমকে হাসপাতালে মৃত আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ডিউটি ডাক্তার মহিনউল্লাহ। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ইব্রাহিমের গলায় দঁড়ির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার ডান হাতের চামড়া ওঠে গেছে। জিহ্বা ছিল কামড় অবস্থায় এবং লালা পড়ছিল।


কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, কারাগারে তথ্য অনুসন্ধানে নিয়োজিত কয়েদিরা (সিআইডি) তাকে জোরপূর্বক গুদামের কাজ দিয়েছিলেন। আর তা সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।


অভিযোগ উঠেছে, কারাগারে হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি মাজহারুল ইসলাম ফরহাদ নিয়োজিত আছেন চীফ রাইটার হিসেবে। তার নেতৃত্বে পুরো কারাগারে আছে ক্যাশ টেবিল রাইটার, মেডিকেল রাইটার, বিভিন্ন দফার ইনচার্জসহ বেশ কয়েকজন রাইটার (কারাগারে লেখালেখি ও ডাকাডাকির কাজে নিয়োজিত)। তাদের মধ্যে সিআইডি শওকত, সিআইডি রূপন, আব্দুল খালেক, মাসুম, ইয়াকুব, মনা, জয়নাল বাবুর্চি অন্যতম। তারাই কারাগারে পানি, ক্যান্টিন, সিট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বলে অভিযোগ আছে।


মারা যাওয়া কয়েদি ইব্রাহিম ছিলেন একজন কল রাইটার। এতদিন সেই কাজ করলেও সম্প্রতি তার কাছে টাকা দাবি করা হয়। পরে টাকা না দিলে তাকে গত কয়েকদিন আগে কয়েদি সিআইডিরা গুদামের কাজ করতে বাধ্য করেন। কারাগারে কাকে কোন দায়িত্ব দেয়া হবে তা নিয়ন্ত্রণ করেন চীফ রাইটার মাজহারুল ইসলাম ফরহাদ। সাধারণত কারাগারে গুদামের কাজে কেউ নিয়োজিত হতে চান না। কেননা কারাগারের গুদামে কঠিন খাটুনির কাজ করতে হয়। যা অনেকেই সইতে পারেন না। ধারণা করা হচ্ছে ইব্রাহিম নেওয়াজকে গুদামের কাজে দেয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করেছেন।


এদিকে ইব্রাহিমের মৃত্যু নিয়ে করা কারা হাসপাতালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যার অপচেষ্টারত অবস্থায় বন্দিকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জনের পরামর্শে চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনে ‘ফাঁসিতে ঝুলে’ মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।


এদিকে কারা অভ্যন্তরে বন্দির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) টিপু সুলতানকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।


ডিআইজি-প্রিজন টিপু বলেন, কারাগারে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। আমাকে প্রধান করে বিভাগের আরও তিন জেলা কারাগারের তিন জেল সুপারকে এতে সদস্য করা হয়েছে। তদন্ত শেষের সময়সীমা অবশ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com