কুবি শিক্ষক সমিতির আহ্বান
প্রক্টরের অপসারণসহ নানান অভিযোগের কার্যকরী পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ১৯:০৮
প্রক্টরের অপসারণসহ নানান অভিযোগের কার্যকরী পদক্ষেপ নিন
কুবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসন আগামী ১৭ এবং ২৬ মার্চ উদযাপনে গঠিত কমিটির অব্যবস্থাপনায় বিতর্কিত আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে সমালোচিত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেনের অবিলম্বে প্রত্যাহার চেয়েছেন। উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতাসহ প্রশাসনের নানান অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখিত-অলিখিত অসংখ্য অভিযোগের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।


২ মার্চ, শনিবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু তাহের এবং সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা যায়।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় সকল কর্মসূচিতে তার নিজস্ব আইন, চিরাচরিত প্রথা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও পরম্পরা অনুযায়ী জাতীয় অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মসূচি প্রতিপালনের অংশ হিসেবে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, আলোচনা ও অন্যান্য কর্মসূচি পরিচালনা করে। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ যথাযথ মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সার্বিক পরিচালনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইদিন শহিদ মিনার, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আবাসিক হলেও হয়নি। এমন কি, দিনটি উদযাপনে ইতোপূর্বে যেখানে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, শহিদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে- সেখানে বর্তমান উপাচার্যের আমলে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে প্রগতিশীলতার চর্চা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।


আরো বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্‌যাপিত ২১ ফেব্রুয়ারির এ আয়োজনকে তুলনা করা যায় তৎকালীন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পরিচালিত সরকারের অধীন সাদামাটা অনুষ্ঠানের দুঃসহ স্মৃতির সাথে। এর মাধ্যমে মহান ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য ও ভাবগাম্ভীর্যতা প্রচণ্ডভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং ভাষা শহিদদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে। তাছাড়া এই প্রথমবারের মতো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শহিদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণক্রম ও পরম্পরা লঙ্ঘন করে শহিদ মিনারে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ফুল দেয়ার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত না করে রীতিবর্জিতভাবে প্রতিষ্ঠানের বাহিরের একটি দফতরকে শহিদবেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের নাম ঘোষণা করা হয়। এটি উপস্থিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল সদস্যদের মধ্যে বিব্রতকর প্রতিক্রিয়া তৈরি করে- যা ধৃষ্টতাপূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরাচরিত রীতি ও পরম্পরা লঙ্ঘন।


১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটিতে পুনরায় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এমতাবস্থায় তাকে আবারো গুরুত্বপূর্ণ দুটি জাতীয় অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়াটাকে শিক্ষক সমিতি একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত বলে মনে করে। এভাবে জাতির পিতার জন্মদিবস এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি এরকম ব্যর্থ আহ্ববায়কের হাতে তুলে দেওয়াতে শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।


আরো উল্লেখ করা হয়, অধিকন্তু ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা ও হত্যাচেষ্টাকারী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানো ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেনকে উক্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে। শিক্ষকরা উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিডি করেছে এবং বিচারের দাবিতে প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উপরন্তু হামলায় মদদদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) জনাব কাজী ওমর সিদ্দিকীকেও উক্ত কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষক সমিতি প্রক্টরের অপসারণ দাবি করে প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করলেও এ বিষয়েও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ ঘটনাসমূহের ফলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উপাচার্য সন্ত্রাসীদের লালনপালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা এবং একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শাসনকে অগ্রাহ্য করেন। তিনি বারবার প্রতিষ্ঠানের চিরাচরিত রীতি, অনুক্রম ও পরম্পরা লঙ্ঘন করেই চলেছেন। এমতাবস্থায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিতর্কিত তিন ব্যক্তিকে আগামী ৩ মার্চের মধ্যে কমিটি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যথায়, শিক্ষক সমিতি ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করবে।


এই বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি একেবারেই অবহেলিতভাবে পালন করা হয়েছে। শহিদ মিনারে ফুল দেওয়াতেও কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা ছিল না। শহিদ মিনারে কোনোপ্রকার সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয় নাই। কোন আলোচনা অনুষ্ঠান করা হয় নাই। এরকম একটা ব্যর্থ কমিটিকে আবারো ১৭ মার্চ এবং ২৬ মার্চের আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি উপাচার্য দফতরে প্রক্টরের মদদে শিক্ষকদের উপর হামলার বিষয়ে আমাদের লিখিত অভিযোগের এখনো কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।


সভাপতি আবু তাহের বলেন, মার্চের গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিবস আয়োজনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। যেখানে আহ্বায়ক হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে অব্যবস্থাপনার জন্ম দেওয়া মিজানুর রহমানকেই রাখা হয়েছে। তাছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের দফতরে প্রক্টরের ইন্ধনে কর্মকর্তারা যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে, আমাদের উপর হামলা করেছে- তাদেরকেও কমিটিতে রাখা। এটা আমাদের আপত্তির জায়গা। আমরা তাদের বিচারের দাবিতে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু সেটার পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বরং কমিটিতে রেখে তাদের আরো প্রণোদনা দিচ্ছেন। তাদের যদি কমিটি থেকে প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের সাথে ওইসকল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবো না।


বিবার্তা/প্রসেনজিত/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com