বেইলি রোড ট্র্যাজেডি
স্ত্রী, সন্তান নিয়ে খাগড়াছড়ি যাওয়া হল না কাস্টমস কর্মকর্তার
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ১৭:৩৮
স্ত্রী, সন্তান নিয়ে খাগড়াছড়ি যাওয়া হল না কাস্টমস কর্মকর্তার
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকার বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে জীবন প্রদীপ নিভে গেছে কক্সবাজারের একই পরিবারের তিনজনের। কাস্টমস কর্মকর্তা স্বামী শাহজালাল স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে খাগড়াছড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাস স্টেশনে যাওয়ার পথে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় মাত্র ঢুকেছিল। কিছু বুঝে উঠার আগেই ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিল তাদের জীবন প্রদীপ।


শাহ জালাল কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল কাশেমের পুত্র। তিনি নারায়ণগঞ্জ কাস্টমস অফিসে কর্মরত ছিলেন।


দুর্ঘটনায় কাস্টমস ইন্সপেক্টর শাহ জালাল উদ্দিন (৩৫), তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা হেলালী (২৪) এবং তাদের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিলা (৪) মারা যান।


গতকাল শনিবার (২ মার্চ) রাতে তাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসলে এলাকায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে শাহ জালালের পিতা মাতা ও তার আত্মীয় স্বজন।


৩ মার্চ, রবিবার বেলা এগারোটায় উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাদের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে অংশ নেয় কয়েক হাজার মুসল্লী।


জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি থেকে সামান্য দূরে পশ্চিম মরিচ্যা জামে মসজিদের পাশের পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।


এর আগে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ ৩টি গ্রহণ করেছেন নিহত শাহ জালালের ভাই শাহজাহান সাজু। এরপর মরদেহবাহী গাড়ি নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে মরিচ্যা গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে গভীর রাতে বাড়িতে পৌঁছান।


সন্তান হারিয়ে অনেকটা নির্বাক মুক্তিযোদ্ধা পিতা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, ৫ ভাই এক বোনের মধ্যে শাহ জালাল উদ্দিন তৃতীয়। ২০১৭ সালে কাস্টমসের চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার পানগাঁও কাস্টমস অফিসে কর্মরত তিনি। প্রতিদিন পিতার সাথে ৩-৪ বার ফোনে কথা বলেন। বৃদ্ধ পিতার চিকিৎসা ওষুধ সেবনের জন্য তাড়া দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টার পর পিতার সাথে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন শাহ জালাল উদ্দিন।


তিনি বলেন, শাহ জালাল জানিয়ে ছিলেন, টানা ৩ দিনের ছুটি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে খাগড়াছড়ি ভ্রমণে যাচ্ছেন। ঢাকায় শ্যালিকার মেডিকেল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি এসেছেন। তাদের সাথে দেখা করেই বাসে উঠে রৌনা দেবেন।


এরপর থেকে আর কোনো ফোন পাননি পিতা। পিতা ধারণা করেছিলেন ছেলে বউ-নাতিনীকে নিয়ে খাগড়াছড়ি গেছেন।


তিনি বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর কক্সবাজার কাস্টমস অফিসের ভাইয়ের এক সহকর্মী ফোন করে জানান ফেসবুকে অজ্ঞাত পরিচয়ে যে কয়েকজনের মরদেহ দেখা যাচ্ছে যেখানে ভাবী ও মেয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে। ভাইয়ের বিষয়টি জানেন না। তারপর থেকে পরিবারের পক্ষে যোগাযোগ করার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শাহজালালের শ্বশুর ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হোসেন হেলালী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে গিয়ে ৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করেন।


বিবার্তা/ফরহাদ/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com