ফের অশান্ত মিয়ানমার সীমান্ত, বিমান থেকে পড়ছে গোলা
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৫৮
ফের অশান্ত মিয়ানমার সীমান্ত, বিমান থেকে পড়ছে গোলা
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

তিনদিন শান্ত থাকার পর আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে মিয়ানমার সীমান্ত। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত থেকে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে আবারও মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে আবারও বিস্ফারণের বিকট শব্দের পাশাপাশি বিমান থেকেও চলছে গোলাবর্ষণ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলার শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে এপারের স্থানীয়দের মধ্যে।


মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে সোমবার বিকেল ৪টার পর থেকে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল না, কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা।


হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া এবং হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ফুলেরডেইল সহ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নাফ নদের ওপারে অন্তত ২ থেকে ৩ কিলোমিটার ভেতরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার ও নাকপুরা এলাকা ঘিরে সরকারি বাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত চলছে। এতে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসে এপারেও।


এসময় আকাশের অনেক উঁচু থেকে চক্কর দেওয়া বিমান থেকে মর্টার শেল বা বোমা নিক্ষেপের ঘটনাও দেখা গেছে।


মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সদস্যরা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ নেয়া বলিবাজার এলাকায় এই হামলা চালিয়েছে বলে স্থানীয়রা ধারণা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তারা।


সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে স্বীকার করেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী।


তিনি বলেন, তিনদিন পর সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ভোর থেকে থেমে থেমে শুরু হয় গোলাবর্ষণের বিকট শব্দ। সকাল ৯টার পর তা থেমে যায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টানা বিকট শব্দ ভেসে এসেছে। ওই সময় মিয়ানমারের বলিবাজার ও নাকপুরা পাড়ার দিকে আকাশে বিমানের চক্কর দিতে দেখা গেছে। বিমান থেকে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। তবে দুপুরের পর থেকে শব্দ কমলেও এখনও থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।


হোয়াইক্যং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, তিনদিন পর আবারও গোলাগুলি শব্দ শোনা গেছে। সীমান্তের লোকজন আতঙ্কিত রয়েছেন।


জানা যায়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মিদের সংঘর্ষ চলছে। হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমারের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরা গ্রামগুলোতে চলছে সংঘর্ষ। সংঘর্ষে গোলার শব্দ সীমান্ত এলাকা টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে শোনা যাচ্ছে।


হ্নীলা সীমান্তে বসবাসকারী মো.ইলিয়াছ বলেন, বুধবার রাত থেকে আবারও ভারী গোলার শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। অনেকক্ষণ টানা গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালেও নাফ নদের ওপারে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। যার কারণে সীমান্তে অযথা লোকজনকে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।


টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোহাম্মদ আলম বলেন, সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।


হোয়াইক্যং সীমান্তে বসবাসকারী দিন আলম বলেন, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে মিয়ানমারে মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। গত তিন দিন বন্ধ থাকার পর আবারও সীমান্তে গোলার শব্দ। এতে সীমান্তবর্তী লোকজন ভয়ে আছেন।


এ বিষয়ে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষের কারণে সীমান্তের নাফ নদে আমাদের টহল চলমান রয়েছে। নতুন করে বাংলাদেশে কোনও অনুপ্রবেশকারীকে ঢুকতে দেয়া হবে না। মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকালে আমরা দুই শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করেছি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com