ভিকারুননিসায় যৌন হয়রানি: গণিত শিক্ষক মুরাদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:১৫
ভিকারুননিসায় যৌন হয়রানি: গণিত শিক্ষক মুরাদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকেরা।


২৫ ফেব্রুয়ারি, রবিবার দুপুর ১২টার দিকে লালবাগের পিলখানা রোডে ঢাকার আজিমপুর শাখার সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চাকরিচ্যুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন শুরু করেন।


বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলে, অভিযুক্ত শিক্ষকের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। তারা এই শিক্ষককে তাদের স্কুলে দেখতে চায় না।


সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘প্রত্যাহার নয় বরখাস্ত চাই, মুরাদ হোসেনের শাস্তি চাই’, ‘নিরাপদ স্কুল চাই, মুরাদ হোসেনের শাস্তি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তারা নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।


পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা বেলা ৩টার দিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়।


আন্দোলনে থাকা অভিভাবকদের একজন শাহেদা আক্তার বলেন, বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা।


মুরাদ হোসেন সরকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর ক্যাম্পাসের দিবা শাখার গণিতের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। ২০১০ সাল থেকে তিনি এখানে পড়াচ্ছেন। পাশাপাশি আজিমপুর এলাকার একটি ফ্ল্যাটে কোচিং সেন্টার খুলে ছাত্রী পড়াতেন।


ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘ভালো সম্পর্ক’ তৈরি করে ওই কোচিংয়েই তাদের যৌন হয়রানি করে আসছিলেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড চললেও ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পেত না।


গত ৭ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে একটি সংবাদপত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করলে শোরগোল পড়ে যায়।


এরপর শনিবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মুরাদ হোসেন সরকারকে আজিমপুরের ক্যাম্পাসের দিবা শাখা থেকে প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।


এছাড়া আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ বেগমকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।


কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে রবিবার ক্যাম্পাসের গেইটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।


এসময় ‘মুরাদ হোসেন সরকার, জেলে যাওয়া দরকার’, ‘মুরাদের আস্তানা, ভিকারুননিসায় থাকবে না’, ‘মুরাদ তুই জেলে যাবি, এক দফা এক দাবি’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’,‘মুরাদের চামড়া, তুলে নেব আমরা’ ইত্যাদি স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।


অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, মুরাদ স্যার এই ক্যাম্পাসে গণিতের জন্য বেস্ট টিচার। উনার সাথে আগে কথা বলেছি অনেকবার। কিন্তু উনি এমন কাজ করবেন কখনো চিন্তাও করি নাই। যখন শুনেছি এ ঘটনা তখন বেশ অবাক হয়েছি। আসলে শিক্ষক ভালো হলেও চরিত্র যে ভালো থাকবে তা বলা কঠিন।


আজিমপুর ক্যাম্পাসের দিবা শাখার প্রধান শাবনাজ সনিয়া কামাল বারবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিচার বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকে।


শাবনাজ সনিয়া কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগে কোনোদিন কোনো মেয়ে অভিযোগ দেয়নি। এবার বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে সবাই মুখ খুলতেছে। আমাদের কাছে কিছু মেয়ে এসেছে, আমরা জিজ্ঞেস করলাম এতদিন বলনাই কেন বাবা? তারা বলল, লোকলজ্জার ভয়ে বলেনি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার দ্রুত ব্যবস্থা নেব।


একাদশ শ্রেণির বাণিজ্য শাখার একজন শিক্ষার্থী বলে, উনাকে স্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে উনাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা। একেবারে প্রজ্ঞাপন দিয়ে বহিষ্কার করা, যাতে আর কোথাও শিক্ষকতার নাম করে বা কোচিং ব্যবসার নাম করে এমন কাজ না ঘটাতে পারে।


ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, যেদিন এ ঘটনার আলোচনা শুরু হয়েছে, সেদিনই উচিত ছিল উনাকে (মুরাদ) এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া। কিছু শিক্ষকের বিকৃত মানসিকতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। বাচ্চাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গার্লস স্কুলে দিলাম। অথচ এখানেও অনিরাপদ মেয়েরা।


চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. জামাল হোসেন বলেন, এই শিক্ষকদের কাছে আমাদের মেয়েরা কোচিং করে। আমরা তাদের বিশ্বাস করে পড়াতে দিয়েছি। কিন্তু তারা যদি এ বিশ্বাস না রাখে তাহলে আমরা অসহায় হয়ে যাই।


ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজনের অভিভাবক শাহেদা আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এগুলো করে আসছে। বাচ্চারা ভয়ে মুখ খোলে নাই। এক বাচ্চা ভয়ে অসুস্থ হয়ে গেলে বাচ্চাটা সিক রুমে গেলে সেই শিক্ষকও সেই সিক রুমে যায়, অথচ পুরুষদের সেখানে যাওয়ার অধিকার নেই। এরপর বড় বড় চোখ করে বাচ্চাকে আরও ভয় দেখায়। এভাবে বাচ্চারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। ভুক্তভোগী কেউ মুখ খুলছিল না।


মানববন্ধন শুরুর প্রায় দুই ঘন্টা পরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী এসে শিক্ষার্থীদের বিচারের আশ্বাস দেন।


তিনি বলেন, তোমরা আমার মেয়ের মত। আমি তোমাদের ভালো চাই সবসময়। আজ আমরা মিটিং করতে পারব না। আগামীকাল আমরা তদন্ত কমিটির সদস্যদেরসহ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব। আইনগতভাবে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেব আমরা।


পরে আরও ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ চালিয়ে বেলা তিনটার দিকে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্খীরা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com