
ঝিনাইদহে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ৭ম তলা ও ৮ম তলার ব্যালকনি যেন ময়লা ভাগাড়। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রয়ারি) শিশু ওয়ার্ডের পাশের ব্যালকনিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঝিনাইদহ দমকল বাহিনীর স্টেশন অফিসার সুমন আলী এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, দমকল বাহিনী পৌছানোর আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ময়লার স্তুপ থেকে আগুনের সুত্রপাত বলে তিনি মনে করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৭ম তলার ২নং শিশু ওয়ার্ডের এফ নাম্বার কক্ষের পশ্চিম কোণের একটি কক্ষের পাশের বেলকনীতে স্তুপ করে রাখা ময়লা আবর্জনায় হঠাৎ আগুন ধরে যায়। আগুনের খবরে গোটা হাসপাতাল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গর্ভবতী মা ও মুমূর্ষু রুগীরা ভয়ে সিড়ি দিয়ে নীচে নামাতে থাকেন। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান তারা। ওই সময় মুমূর্ষু শিশু কোলে মায়ের কান্নায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়। ফায়ার সার্ভিস দল আসার পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। পরে ভর্তি রোগীরা ফিরে যান নিজ নিজ ওয়ার্ডে।
প্রত্যক্ষদর্শী সিনিয়র স্টাফ নার্স নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ৭ম তলার ২নং শিশু ওয়ার্ডের এফ নম্বরের পূর্ব দিকের কক্ষের নিউমনিয়া আক্রান্ত চার মাস বয়সের শৈলকুপা উপজেলার মলমলি গ্রামের খলিলের ছেলে হযরত আলীর মত্যু হয়। সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনোয়ারুল ইসলাম সহ সকলে ছুটে যান। এসময় চারিদিকে চিৎকার শুরু হয়ে যায়। শিশুদের নিয়ে মায়েরা নিচের দিকে ছুটতে থাকেন। পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করে যে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলে না তারা। প্রাণ ভয়ে রোগীরা ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। আগে থেকেই লিফট অচল থাকায় ৭ম ও ৮ম তলাসহ সব ফ্লোরের রোগী এবং স্বজনরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকেন।
ওয়ার্ড বয় মো. ফিরোজ আলী ও আছমা খাতুন জানান, দ্রুত ধোঁয়ার দিকে ছুটে যান তারা এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র চালু করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিছু সময় পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসে। একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান আগুন দেখে সার্জিক্যাল, গাইনি, অর্থোপেডিক রুগীরা চরম বিপাকে পড়েন। লিফট দিয়ে নামতে না পেরে কাঁধে নিয়ে ছুটতে থাকেন স্বজনেরা। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সরেজমিনে দেখা যায় ৮ম তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটির ৯ম তলার নির্মাণ কাজ চলছে। দুইটি লিফট দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে।
ঠিকাদারের ম্যানেজার মো. মাহবুব ইসলাম জানান, লিফট চালু হতে আরো অন্তত এক মাসের বেশি সময় লাগতে পারে।
জানা যায়, আগুনের ঘটনার কয়েক দিন আগে (৫ ফেব্রুয়ারি) নিচতলার সিড়িতেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন এক প্রসূতি মা। এমনকি ৭ম ও ৮ম তলায় পাতলা টিনের চাল দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ময়লা আর্বজনায় ঠাসা। দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন রোগীরা। স্বজনরা অভিযোগ করেছেন ফেলে রাখা ময়লার স্তুপ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। বহুতল এই ভবনের ময়লার স্থুপ অপসারণের জন্য র্কতৃপক্ষ আজও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বিশাল ভবনটি যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে।
অপর দিকে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুুপুরে (অফিস সময়ে) হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল করিমকে পাওয়া যায়নি। সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডাক্তার আলাউদ্দিন জানালেন, খুলনা থেকে ডিডি ( উপ-পরিচালক স্বাস্থ্য) চুয়াডাঙ্গাতে এসেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সেখানে গেছেন।
মোবাইলে যোগাযোগ করার এক পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক নিজের অবস্থান নিশ্চিত না করে বলেছেন, আগুনে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিড়ি কিংবা সিগারেট আগুন থেকে (শিশু ওয়র্ডের একটি কক্ষের বাইরে) ব্যালকনিতে ফেলা আর্বজনাতে আগুন লাগে। ওই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
লিফট বন্ধ এবং আবর্জনার স্তূপের বিষয়ে তিনি বলেন, ৯ম তলার নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদার টিনের চাল দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করেছেন। ময়লা আর্বজনা স্তূপ করার জন্য রুগীর স্বজনদের দায়ি করেন এ কর্মকর্তা। নির্মাণ কাজের লিফট বন্ধ আছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। তত্ত্বাবাধয়কের এমন দাবি নাকোচ করে দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বিবার্তা/রায়হান/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]