ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
সড়কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই সরকারি বিল তোলার অভিযোগ
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:১৮
সড়কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই সরকারি বিল তোলার অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা’ আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শেষ না করেই ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি জামানতের ৫০ শতাংশ অর্থও তুলে নিয়েছে। কাজ শেষের আগে বিল তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।


নানা অজুহাতে দুই দফায় মোট চার বছর প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়িয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। তবুও তারা আঞ্চলিক এই মহাসড়কটির কাজ সম্পন্ন করেননি।


পাঁচটি প্যাকেজে মোট ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সঙ্গে নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলাকে কানেক্ট করবে। একনেকে অনুমোদন হওয়া বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজার মেঘনা সেতু চালু হলে এ সড়ক দিয়ে ঢাকার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে বিকল্প যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে সড়কটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।


এর আগে, ২০২২ সালে বগুড়া-নাটোর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ধীরগতির অভিযোগে কুমিল্লার মোহাম্মদ আলমের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। একই বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে ৪০ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এর মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন।


১৭.৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১ আগস্ট একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়। মহাসড়কটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর সময়সীমা দুই দফায় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।


সড়ক ও জনপথ বিভাগের নথি সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে ওই বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের চূড়ান্ত বিল তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর মাত্র তিন মাস না পেরোতেই একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর জামানতের ৫০ শতাংশ অর্থও তুলে নেয় এ ফার্মটি।


কাজ সমাপ্ত না হওয়া এবং বিল তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ।


তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি এই কার্যালয়ে কর্মরত ছিলাম না। তবে বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে।'


তিনি প্রতিবেদককে চিঠির একটি কপি প্রদান করেছেন।



চিঠিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার এই সড়কের কাজ বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়। একাধিকবার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা কর্ণপাত না করায় অত্র দপ্তর স্ব-উদ্যোগে কাজগুলো চিহ্নিত করেন এবং মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক মাপ গ্রহণ করেন। প্রাথমিক মাপ গ্রহণ শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত চূড়ান্ত বিলের সঙ্গে বাস্তবে সম্পাদিত কাজের পরিমাণে ব্যাপক ব্যত্যয় পাওয়া যায়। কাজ সম্পাদন না করেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চূড়ান্ত বিল উত্তোলন করায় বিধি অনুসারে কেন অভিযুক্ত ফার্মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।


এ প্রসঙ্গে ঠিকাদার মোহাম্মদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা থাকার কারণে আমাদের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত জমির মালিকদের দ্বারা আমাদের লোকজন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। তবে বিল উত্তোলন করলেও জামানতের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা এখনো আমি পাওনা আছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আমাদের আরো কাজ চলমান আছে। তাই এই কাজ ফেলে কোথাও পালিয়ে যাবো না।


বিবার্তা/আকঞ্জি/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com