
গত ২৪ জানুয়ারি ‘মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজায় প্রকাশ্যে বন বিভাগের চাঁদাবাজি’ শিরোনামে জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটনেটে সংবাদ প্রচারের পর টনক নড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল বিভাগীয় বন সংরক্ষক কার্যালয়ের।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা পর্যন্ত বিবার্তার জেলা প্রতিবেদক টানা ১১ দিন কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজায় অনুসন্ধান ও নজরদারিতে ছিলেন। এতে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে বন বিভাগের কোন গাড়ি তিনি দেখতে পাননি। বরং কাঠের গাড়ি নির্বিঘ্নে টোল পার হতে দেখা গেছে।
এ সময় জানতে চাইলে এক ট্রাক ড্রাইভার মো. ওসমান জানান, এখন আমরা বনবিভাগের কোন চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছি না। গত এক সপ্তাহের অধিক সময় বন বিভাগের কোন গাড়ি টোলে দেখিনি। ড্রাইভারের মতো একই কথা জানালেন টোলপ্লাজায় ডিউটিরত টোল আদায়কারী কর্মকর্তা সুমন ঘোষ ও দুই আনসার সদস্য।
ফলে, স্থানীয় লোকজন ও কাঠ ব্যবসায়িরা বিবার্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কেননা, কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বন বিভাগ দীর্ঘদিন যাবত মহাসড়কে প্রকাশ্যে অঘোষিত চেকপোস্ট বসিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। যা বিবার্তার নজরে আসে।
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছিলো চট্টগ্রাম আরাকান মহাসড়কের মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজায় দাঁড়িয়ে বনবিভাগ প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করতেন। এর নেতৃত্ব দিতেন চট্টগ্রাম বন বিভাগ শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. আরিফুল আলম ও তাঁর টিমের একাধিক সদস্য। যারা পালাক্রমে মইজ্জ্যারটেক টোলে অবস্থান নিতেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই সময় জানিয়েছিলেন, কাগজে কলমে মইজ্জ্যারটেকে বন বিভাগেরকোন চেকপোস্ট নেই। সত্যিই যার প্রতিফলন দেখা গেছে বিবার্তায় সংবাদ প্রকাশের পর।
এরপর থেকে বন বিভাগের ঢাকা মেট্রো-ঠ ১১-৪১৩৭ সিরিয়ালের গাড়িটি টোলে এসে চাঁদা আদায় করতে দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে বন বিভাগের একটি মোটর সাইকেল তাতে অংশ নিলেও গত কয়েক দিনে কাউকে টোলে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের অধীনে শহর, রাঙ্গুনিয়া, পদুয়া, পটিয়া, কালীপুর, জলদি, বারবাকিয়া, চুনতি, মাদারসা, কুরশিয়া, দোহাজারি, পোমরা পরীক্ষণ ফাঁড়ি, পটিয়া এসএফএনটিসির আওতাধীন ৩৬টি বিট রয়েছে।
রয়েছে কোষ্টাল উপকুল, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কক্সবাজার উত্তর-দক্ষিণ, লামা, বান্দরবান, পালবোর্ড বান্দরবান, বন ব্যবহারিক বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন বন বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চল। এসব স্টেশনের বাহিরে মইজ্জ্যারটেকে বন বিভাগের কোন চেকপোস্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
যার বিরুদ্ধে এত্তসব অভিযোগের তীর সেই চট্টগ্রাম শহর রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল আলম এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও এখনো অবধি ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, কাঠ পাচারে অনিয়ম রোধ করার জন্য বন বিভাগের নির্দিষ্ট কিছু চেকপোস্ট রয়েছে। যেখানে সেখানে চেকপোস্ট বসানো যায় না। বৈধ কাগজপত্র চেক করার নামে আর্থিক সুবিধা নেওয়া অন্যায়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন মইজ্জ্যারটেক এলাকায় বনবিভাগের অনৈতিক কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হলে তথ্য প্রমাণ ও গাড়ির নাম্বারসহ তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে প্রেরণ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
যদিও তিমধ্যে সমস্ত স্থির ও চলমান ভিডিও চিত্র বিভাগীয় বন কর্মকর্তার মুঠোফোনে পাঠানো হলে হয়তো তিনি বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। যার কারণে টোলপ্লাজায় বন বিভাগের আর কোন গাড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভূক্তভোগিদের মতো এমনটি ধারণা বিবার্তা প্রতিবেদকেরও।
বিবার্তা/জাহেদ/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]