আবাসিক হোটেলে রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের আয়োজন, আটক ৮২
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:৩৬
আবাসিক হোটেলে রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের আয়োজন, আটক ৮২
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলে দুই রোহিঙ্গা তরুণীর সঙ্গে দুই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে ৬৩ জন রোহিঙ্গা এবং ১৯ বিদেশি নাগরিককে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ১৯ জনের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ১২ জন অস্ট্রেলিয়া এবং সাত জন যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী।


১৫ জানুয়ারি, সোমবার দুপুরে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।


রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শহরের হোটেল-মোটেল জোনের লাইট হাউজ এলাকার হোটেল সি পার্ল-এ অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে আটক বর আব্দুল হামিদ (৩২) ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২৪) মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তাদের আত্মীয়-স্বজন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকেন। দুই কনে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা।


আটককৃতরা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।


স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আব্দুল হামিদ ও মোহাম্মদ ইলিয়াছের সঙ্গে দুই রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে হোটেল সি পার্ল-এ উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের শতাধিক রোহিঙ্গা এবং অনেক বিদেশি নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের অভিযানের সময় অনেকে পালিয়ে গেছেন।


পুলিশ জানিয়েছে, বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ১২ জন মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং সাত জন যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই রবিবার বিকালে শহরের হোটেল সি পার্ল-এ দুই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকের সঙ্গে দুই রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকসহ ৮২ জনকে আটক করা হয়। এ সময় ১৯ বিদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি দেখে হোটেলের ম্যানেজারসহ কর্মচারীরা পালিয়ে যান। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


হোটেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বিদেশি ১৯ জন নাগরিক গত এক মাস ধরে সি পার্ল হোটেলে অবস্থান করছেন। রবিবার দুই রোহিঙ্গা তরুণীর সঙ্গে দুই বিদেশি নাগরিকের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এখানে অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে একটি গরু ও মহিষ জবাই করা হয়েছে। খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে অনুষ্ঠানে আসা রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার পরপরই হোটেলের ম্যানেজারসহ কর্মচারীরা পালিয়ে যান।’


একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন হোটেলের পাশের দোকানি ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুই বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে দুই রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। পরে তা পণ্ড করে দেয় পুলিশ।’


উখিয়া উপজেলার ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হামিদা বেগম বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা বর আব্দুল হামিদ আমার আত্মীয়। দাওয়াত খেতে ক্যাম্প থেকে বাসে চড়ে কক্সবাজার শহরে আসি। দাওয়াত খেয়ে ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই হোটেলে এসে আটক করেছে পুলিশ।’


এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ নিষিদ্ধ সেক্ষেত্রে তাদের শহরের হোটেলে জড়ো করার আগে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। হোটেল মালিক কিংবা ম্যানেজার অনুমতি ছাড়াই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। আবার হোটেলে বিদেশি নাগরিকদের অবস্থানের বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়নি। পলাতক থাকায় হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এখনও জানতে পারিনি আমরা। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সদর মডেল থানার ওসি মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, ‘বরদের সঙ্গে বিদেশ থেকে যারা এসেছেন এবং দাওয়াত খেতে উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে যারা এসেছেন সবাই মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত। আটক রোহিঙ্গাদের রাতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের মাধ্যমে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গার বিয়ে যেন আর না হয়, এ ব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে বিদেশি পাসপোর্টধারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


বিবার্তা/ফরহাদ/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com