ভরা মৌসুমেও পর্যটক নেই কক্সবাজারে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:০৭
ভরা মৌসুমেও পর্যটক নেই কক্সবাজারে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়েছে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প। গত এক মাসে দেশের প্রধান এই পর্যটন কেন্দ্রে ৯০ শতাংশ পর্যটক কমে গেছে। তাতে এ শিল্পের ২০টি খাতে দৈনিক ১৫-২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।


এদিকে ক্ষতির মুখে পড়ে পর্যটনসেবা খাতের হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই শুরু হয়েছে।


সাগরপারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররাও পর্যটক না পেয়ে বেকার সময় কাটাচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।


পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস সময়কে পর্যটন মৌসুম ধরা হয়। এই সময়ে সাপ্তাহিকসহ বিশেষ ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটক ঘুরতে আসেন। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডাকা টানা হরতাল ও অবরোধের কারণে কক্সবাজার অনেকটাই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে।


৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও পর্যটকের চাপ নেই।


হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ ও দোকানপাটগুলো প্রায় খালি পড়ে আছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ছাতা মার্কেটের সৈকতে নামার ফটকে ১০-১২ জন ফটোগ্রাফার পর্যটকের অপেক্ষায় বসে ছিলেন। আবদুল হালিম (৪৫) ও জসিম উদ্দিন (৩৫) নামের দুই ফটোগ্রাফার প্রতিবেদকের কাছে দৌড়ে এসে জানতে চান, ছবি তুলবেন কি না।


তাঁরা বলেন, ‘পর্যটন মৌসুমে দৈনিক প্রায় ২ হাজার টাকা রোজগার হতো। এখন ২০০ টাকাও রোজগার নেই। এভাবে চললে কীভাবে সংসার চালাব ভেবে কূল পাচ্ছি না।’


এই মার্কেটের প্রধান গলিতে সৈকতের তীরে রয়েছে মক্কা হোটেল নামের একটি রেস্তোরাঁ। এটি অন্তত তিন সপ্তাহ আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পাশের পানদোকানি মোশারফ হোসেন।


জেলা হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, কক্সবাজার শহরে অন্তত ১ হাজার ২০০ হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ পর্যটকনির্ভর। টানা হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটক না আসায় রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।


একই অবস্থা শামুক-ঝিনুক, জুয়েলারি, শুঁটকিসহ পর্যটনপণ্যের দোকানগুলোতে। গতকাল বুধবার বিকেলে লাবণী পয়েন্টের অন্তত ৫০টি দোকান ঘুরে জানা গেছে, অধিকাংশ ব্যবসায়ী সকাল থেকে দোকান খুলে বসে থাকেন। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই।


আলম (৪০) নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও পরিবার চালাতে মাসে অন্তত ৮০ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু গত এক মাসে তাঁর দোকানে ৫০ হাজার টাকাও বেচাবিক্রি হয়নি। অথচ এ সময়ে দৈনিক ৫০ হাজারের বেশি বিক্রি হয়।


সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে পর্যটকের খোঁজে ঘোড়া নিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে আরিফ নামের এক কিশোর। আরিফ বলে, ‘প্রতিদিনই ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। আজ সকালে বের হয়ে সারা দিনে ১০০ টাকা পেয়েছি। এখন আমি খাব, নাকি ঘোড়াকে খাওয়াব?’


আরিফের মতো অবস্থা চেয়ার-ছাতা (কিটকট), বিভিন্ন ধরনের বাইক, হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। কক্সবাজার শহর ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রেস্টহাউস ও রিসোর্ট রয়েছে। তাতে ১ লাখ ৭০ হাজারের মতো পর্যটক থাকার সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি তারকা মানের হোটেল আছে। হোটেল কক্স টুডেতে কক্ষ রয়েছে ২৭০টি।


এই হোটেলের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, খুবই খারাপ অবস্থা। গত এক মাসে গড়ে ৮-১০টি কক্ষ ভাড়া হয়েছে।


রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসা হবে বলে মনে হচ্ছে না। দেশের পর্যটন খাতকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে কক্সবাজারকে হরতাল ও অবরোধের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছেন ফেডারেশন অব ট্যুরিজম সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।


তিনি বলেন, ভরা মৌসুমেও ৯০ শতাংশ হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসের কক্ষ খালি। করোনা মহামারির ক্ষতি এখনো ব্যবসায়ীরা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এই অবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প।


কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, ইনানী সৈকতেও পর্যটক নেই। সি-ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘গত সোমবার চারটি জাহাজে মাত্র ৮০০ পর্যটক সেন্ট মার্টিন গেছেন। অথচ ২ হাজার ১০০ জনের ধারণক্ষমতা ছিল জাহাজগুলোতে। এর মধ্যে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচলের জন্য আরও ৯টি জাহাজ অনুমোদন পেলেও পর্যটকের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না।


এ বিষয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপত্তার অভাবে মানুষ ঘুরতে আসছে না। তাতে কক্সবাজারের পর্যটকসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে। হোটেল, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনের অন্যান্য খাতে দৈনিক ১৫-২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।


বিবার্তা/ফরহাদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com