৪ বছর ধরে তেল শূন্য ভাসমান তেল ডিপো
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:২৭
৪ বছর ধরে তেল শূন্য ভাসমান তেল ডিপো
চিলমারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে দীর্ঘ প্রায় ৪বছর ধরে ভাসমান তেল ডিপো যমুনা অয়েল কোম্পানি লি. ও মেঘনা পেট্রোলিয়ম লি. এর বার্জ দুটি তেল শূন্য পড়ে আছে।


সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় ডিপো দুটি তেল শূন্য হয়ে পড়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে ডিপো দুটি তেল শূন্য পড়ে থাকায় সেখানে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীসহ ডিপো সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।


জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসমান তেল ডিপো মেঘনা ও যমুনা কোম্পানির দুটি ভাসমান তেল ডিপো স্থাপিত হয়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলার কয়েকটি উপজেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করে আসছে। ডিপো দুটির অনুমোদিত ২২জন ডিলার সরকারিভাবে প্রদত্ত দরে জ্বালানি ক্রয় করে খুচরা বিক্রেতাদের নিকট সরবরাহ করছিলেন। খুচরা বিক্রেতারা সামান্য মুনাফায় তেল বিক্রি করছিলেন। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখে যমুনা অয়েল কোম্পানি লি. ও ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে মেঘনা পেট্রোলিয়ম লিমিটেডের তেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় অজানা কারণে ডিপো দুটিতে তেল আসছে না।


তেলের দাম বৃদ্ধি ও ডিপো দুটি তেল শূন্য হয়ে পড়ায় পার্বতীপুর অথবা রংপুর ডিপো থেকে ১০৫.০৮ টাকায় কিনে সড়কপথে তেল পরিবহন করলে ১ লড়ি অর্থাৎ ১৫হাজার লিটার তেল আনতে অতিরিক্ত পরিবহন, ঘাটতি ও লেবার খরচ হয় প্রায় ২০হাজার টাকা। যা প্রতি লিটারে প্রায় ১ টাকা ৫০পয়সা বেশি। সব মিলে ডিলারদের তেল কিনতে হয় প্রায় ১০৭.৫০টাকায়। এরপর খুচরা বিক্রেতা থেকে খুচরা ক্রেতা। ফলে কৃষকদের তেল কিনতে হচ্ছে ১১০-১১১টাকায়।


ভাসমান ডিপো দুটি উপজেলার জ্বালানি তেলের চাহিদা মিটানোর পর পার্শ্ববর্তী নারায়নপুর, যাত্রাপুর, সাহেবের আলগা, রৌমারী, রাজিবপুর, সানন্দবাড়ী, জাফরগঞ্জ, কামারজানী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ মৌসুমে ভাসমান তেল ডিপো থেকে প্রতিদিনের তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫০ ব্যারেল বা ১ লাখ ৫০ হাজার লিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদে চালিত নৌকা, ড্রেজার মেশিন, জমি চাষের ট্রাক্টর, বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে চালিত জেনারেটর, মাহেন্দ্র গাড়ি, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন যন্ত্র চালনার জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত প্রায় ১শ থেকে দেড়শ ব্যারেল বা ২০-৩০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে।


এছাড়াও সম্প্রতি চরাঞ্চলে ব্যাপক ভূট্টা চাষের জন্য জমি চাষ ও সেচ মিলে প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। ডিলাররা পার্বতীপুর/রংপুর ডিপো থেকে তেল নিয়ে স্থানীয়সহ বিদ্যমান এলাকা সমূহের তেলের চাহিদা পূরণ করতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এতে প্রায় প্রতিদিন ৪-৫লাখ টাকা অতিরিক্ত লেনদেন হচ্ছে এলাকায় সৃষ্ট তেল বাজারে।


শুধু তাই নয়, এভাবে চলতে থাকলে ডিলারদের হাতে থাকা দীর্ঘ দিনের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতা হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফলে চিলমারীর তেল ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতাদের নিকট পড়ে থাকা বাকী অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।


অপরদিকে ডিপো দুটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় সেখানে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কর্মরত ১৭জন কর্মচারীসহ প্রতিদিন খেটে খাওয়া প্রায় ৩শ শ্রমিক কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।


চিলমারী ভাসমান তেল ডিপো দুটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জ্বালানি তেলের বাজার জোড়গাছ বাজারে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় খুচরা তেল ব্যবসায়ী বাদল, রাশেদুল, মমিনুল, ধীরেন্দ্র নাথসহ অনেকের সাথে।


তারা বলেন, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল নিতে অতিরিক্ত খরচ না থাকায় বাজারে আমরা প্রতি লিটার তেল ১০৬ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু দুর থেকে তেল আনতে পরিবহন খরচ বেশী হওয়ায় তেল আনতে প্রতি লিটার ১০৫.০৮টাকা দরের তেল আমাদের কিনতে হচ্ছে ১০৭.৫০টাকায় এজন্য বেশি দামে তেল বিক্রি করছি।


এসময় কথা হয় ক্রেতা আক্তারুজ্জামান আসিফ, রহমত আলী ও সুলতান মাহমুদের সাথে। তারা জানায় ডিপোতে তেল না থাকায় প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় তেল কিনতে আমাদের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে অনেক টাকা।


খুচরা তেল বিক্রেতা মমিনুল ইসলাম বলেন, অজানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে ডিপো দুটি তেল শূন্য থাকায় জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল কৃষকরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানি তেল সংকটের ফলে বাড়তি দামে তেল ক্রয় করায় এলাকার মৎসজীবিরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী মো. হযরত আলী জানান, পার্বতীপুর ও রংপুর থেকে সড়কপথে তেল পরিবহন করলে লিটারপ্রতি প্রায় ২টাকা বেশি খরচ হয় ফলে ক্রেতাদের অধিক মূলে তেল কিনতে হয়।তাই জনগণের সুবিধার্থে ডিপো দুটিতে তেলের মজুদ বাড়িয়ে এ অঞ্চলে জ্বালানি তেলের সংকট নিরসন করা দরকার। চিলমারী জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাদল বলেন, যমুনা ও মেঘনা ডিপো দুটি প্রায় ৪ বছর ধরে তেল শূন্য রয়েছে।


এলাকার জ্বালানির তেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ডিপো দুটি কোম্পানির কাছে অবহেলিত হওয়ায় এখানকার কৃষকরা চরম সংকটে রয়েছে। আসন্ন সেচ মৌসুমের আগে ডিপো দুটিতে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।


এ ব্যাপারে মেঘনা পেট্রোলিয়ম লিমিটেড বার্জ ইনচার্জ মো. মহশিন হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তেলে বিষয়ে হেড অফিস থেকে আমাকে কিছু বলা হয়নি।


এ বিষয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির এজিএম (ডিপো অপারেশন) জাহিদ মুরাদ বলেন, চিলমারীতে তো এখন তেল যাবে না। ওইটা আসলে আর একটা ডিপো করার চিন্তা ভাবনা চলছে। সোর ডিপো করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


বিবার্তা/রাফি/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com