শীতের পাঁচ মাস পিঠা বিক্রির টাকায় সংসার চলে তার
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৩৯
শীতের পাঁচ মাস পিঠা বিক্রির টাকায় সংসার চলে তার
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নিঃসন্তান সোনাভান বেওয়ার (৭০) স্বামী সাদেক আলী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে গৃহস্থালি কাজে সহযোগিতা করে একরকম চলত সোনাভানের সংসার। বয়স বাড়ায় সে কাজেও তেমন ডাক পান না তিনি। তাই অনেকটা খেয়ে না খেয়েই চলে তার সংসার। অভাবের সংসারে শীত আসে সোনাভানের জন্য আশীর্বাদ হয়ে। শীতের পাঁচ মাস পিঠা বিক্রির উপার্জনে সারাবছর সচ্ছল চলে তার সংসার। সোনাভান বেওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লার বাসিন্দা।


শনিবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, আনন্দ নগর, খুবজীপুর প্রধান সড়কের স্কুল মোড়ে চুলা জ্বলছে সোনাভানের। চুলায় বসানো হাঁড়িতে পানি সেদ্ধ হচ্ছে। আর পানির ভাঁপে তৈরি হচ্ছে ভাপা পিঠা। পাঁচ টাকার মূল্যের পিঠা কিনতে তার চুলার সামনে অপেক্ষা করছে শিশুরা। তার বানানো গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। সন্ধ্যায় একই স্থানে তিনি বিক্রি করেন চিতই পিঠা।


সোনাভান বলেন, ঢেঁকিছাঁটা চালের গুড়ার সাথে খেজুরের গুড় দিয়ে গরম পানির ভাঁপে তৈরি হয় ভাপা পিঠা। আর চালের গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে তরল কাই তৈরি করে সেটি মাটির ছাঁচে নির্দিষ্ট সময় আগুনের আঁচে রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায় চিতই পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেয়া হয় ধনেপাতা, কালোজিরা বাটা, সরিষা বাটা, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি ভর্তা। যা পিঠার স্বাদকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।


সোনাভান বেওয়া আরো বলেন, প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ কেজি চালের গুড়ার পিঠা বিক্রি করেন তিনি। চালের গুড়া, খেজুর গুড়, জ্বালানি, অন্যান্য উপকরণ বাবদ খরচ হয় ১ হাজার টাকা। গড়ে দৈনিক বিক্রি ১ হাজার ৫০০ টাকা। খরচ বাদে ৫০০ টাকার মতো আয় হয়। যা দিয়ে ভালোভাবে চলে তার সংসার।


পিঠা খেতে আসা যুবক জুয়েল রানা বলেন, বাড়িতে তো সব সময় পিঠা তৈরি সম্ভব হয় না। মাঝেমধ্যে পিঠা খেতে আসেন তিনি। নিজে খেয়ে বাড়ির অন্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যান। এখানে প্রতিটি পিঠা ৫ টাকায় পাওয়া যায়।


সোনাভান বেওয়ার মতো উপজেলার সব হাটবাজার ও সড়কের মোড়ে শীতের পিঠা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই। অস্থায়ী দোকানগুলো সকাল ৬টা থেকে ৯টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি চলে। রসের পিঠা, ঝাল পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা বিক্রি হলেও চিতই ও ভাপা পিঠার ক্রেতাই বেশি।


রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী মলিন বলেন, শীত আর পিঠা বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। শীতের পিঠা ভোজনরসিক বাঙলির অন্যতম প্রধান খাবারও বটে। কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে বাড়িতে পিঠা তৈরির সময় বের করা কঠিন। এসব মানুষের জন্য শীতের পিঠা খাওয়ার উপযুক্ত স্থান পথের ধারের দোকান।


বিবার্তা/জনি/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com