দৌলতপুরে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ২০:২৫
দৌলতপুরে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
কুষ্টিয়া থেকে শরীফুর ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জন্য সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্লাবের শিক্ষার্থীদের নাস্তার জন্য বরাদ্দ টাকায় নামমাত্র মূল্যের নাস্তা দিয়ে বাকিটা যাচ্ছে কর্মকর্তাদের পকেটে- এমন অভিযোগ করেছেন ক্লাবের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।


শেখ হাসিনার সরকার ২০১৮ সালে দেশে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলা ও নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের বিশেষ উদ্যোগ নেয়। সে লক্ষ্যে ৫৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলায় ৪ হাজার ৮৮৩টি ক্লাব স্থাপন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ১৪টি ইউনিয়নে ১টি করে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়। কিন্তু ক্লাবের শিক্ষার্থীদের জন্য নাস্তার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে খোদ দৌলতপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে। ক্লাবের শিক্ষার্থীদের নাস্তার জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে অথচ দেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা মূল্যের নিম্নমানের নাস্তা। আর বাকি টাকা চলে যায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পকেটে। এতেকরে প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সুবিধাভোগীরা।


সরেজমিনে দেখা গেছে প্রকল্পের কাগজে ও বাস্তবে রয়েছে ব্যাপক গরমিল। উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় কাগজে-কলমে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত পাওয়া গেছে মাত্র ১২-১৫ জন। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে ওইসব কেন্দ্রে শিক্ষকসহ ৩৫ জন উপস্থিত দেখিয়ে নাস্তার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। ক্লাবের শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদেরকে ছোট কেক আর কলা দেয়। এই নাস্তার সর্বোচ্চ ১০-১২ টাকার বেশি হবে না।


এছাড়াও ২০২২ সালে তৎকালীন দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মর্জিনা খাতুন কর্মরত থাকা অবস্থায় নিম্নমানের ক্রীড়া সামগ্রী ও বাদ্যযন্ত্র সরবরাহ করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। ক্রয়কৃত ওইসব বাদ্যযন্ত্র বছর না ঘুরতেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যা এখনও অব্যহারযোগ্য অবস্থায় পড়ে আছে।


কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, ক্লাবের শিক্ষার্থীদের নাস্তা বাবদ ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও নাস্তা দেয়া হয় মাত্র ১০-১২ টাকার। শিক্ষকরা বলেন, তাদের ক্লাবের সকল বাদ্যযন্ত্র একেবারে নিম্নমানের- যা বছর যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। বছর যাবৎ হারমোনিয়ামগুলি নষ্ট অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবলারও একই অবস্থা। বাদ্যযন্ত্র না থাকায় ক্লাবের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। ভর্তি হতেও অনীহা তাদের।


নাস্তার অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জেন্ডার প্রমোটার আসাদুজ্জামান লিটু বিবার্তাকে বলেন, নাস্তার জন্য বরাদ্দ ৩০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা করা হয়েছে। এরমধ্যে তেল খরচ বাবদ ২ টাকা করে তার নিজের রয়েছে। সরকারি ফি কেটে যে টাকা থাকে- সেই টাকার নাস্তা দেওয়া হয়। এছাড়াও তিনি খাতা কলমে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার কথাও জানান।


এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সরকার আমিরুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তোলার জন্য সরকারের যে উদ্দেশ্য ছিল, সেটা অসৎ কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দৌলতপুরে কিশোর-কিশোরী ক্লাবগুলোর জন্য যে বাদ্যযন্ত্র দেওয়া হয়েছিল সেগুলো খুবই নিম্নমানের হওয়ার কারণে আমরা ওইসময়ে সেগুলো ফেরত পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তৎকালীন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেগুলোকে নতুন করে রঙ করে সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলোকে হস্তান্তর করেন। সেসব বাদ্যযন্ত্রগুলো এখন অচল হয়ে পড়ে আছে। এতে সরকারের যে মহৎ উদ্যোগ সেটা ব্যাহত হচ্ছে। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।


শিক্ষার্থীদের নাস্তায় অনিয়মের বিষয়ে দৌলতপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, কিশোর-কিশোরী ক্লাবে কোন অনিয়ম নাই, কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে চলছে। দৌলতপুরের প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য নাস্তা বরাদ্দ আসে- ৩০ জনের নাস্তা দেওয়া হয়। নিম্নমানের নাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ফিল্ড সুপারভাইজার মনিটরিং করে, আমি ফিল্ড সুপারভাইজারের সাথে কথা বলে বিষয়টি দেখছি। বাদ্যযন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দ আসলে আমরা সেটা মেরামত করে দেব।


ফিল্ড সুপারভাইজার কাবিল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ১ জন সুপারভাইজার ৩-৪টা উপজেলার দায়িত্বে আছেন। তাই জেন্ডার প্রমোটারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নাস্তা বণ্টনের।


কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাস্তার অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ বিবার্তাকে জানান, এবিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা ও জ্ঞান বিকাশের যারা অন্তরায়, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।


বিবার্তা/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com