কর্ণফুলীতে বিতর্কিতরাই আওয়ামী লীগের তৃণমূল কমিটিতে!
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ২১:১২
কর্ণফুলীতে বিতর্কিতরাই আওয়ামী লীগের তৃণমূল কমিটিতে!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে সম্মেলনের এক বছর পর কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ধারাবাহিকভাবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এতে চরলক্ষ্যা ও জুলধা ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি থেকে জানা যায়, কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধিক নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন সময় নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়ে আলোচিত হয়েছেন তারা।


এসব ব্যক্তিরা কমিটিতে স্থান পাওয়ায় চরমভাবে ক্ষুব্ধ জুলধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমন চিত্র যে শুধু জুলধাতেই তা নয়, আশঙ্কা করা হচ্ছে- চরপাথরঘাটা, চরলক্ষ্যা, বড়উঠান ও শিকলবাহা ইউনিয়নের ভাগ্যেও এমনটাই ঘটতে পারে। দলটির তৃণমূলে বিতর্কিতরাই জায়গা করে নিচ্ছে।


স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী, মাদক চোরাকারবারি এবং সামাজিক অপরাধের সঙ্গে যুক্তরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করছেন। এর পাশাপাশি নির্বিঘ্নে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে তাদের। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ফলে তৃণমূলে এদের লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থা নেই। ঢালাও বক্তৃতা-বিবৃতি ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দায়িত্ব এড়াচ্ছেন উপজেলার নেতারা। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।


তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় জুলধার বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও সংশোধনের দাবি জানান অনেকেই।


কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের দাবি, ওইসব কমিটিতে ত্যাগী ও যোগ্য সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের রাখা হয়েছে। অনৈতিক সুবিধা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কমিটিতে কাউকে স্থান দেওয়া হয়নি।


বঞ্চিত, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের জায়গা করে দিতে নতুন কমিটি ঘোষণার কথা জানালেও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিতর্কিত, বিভিন্ন মামলার আসামি ও একই ব্যক্তিকে ২০ বছর যাবত ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক রেখে কমিটি সাজিয়ে উপজেলায় জমা দিয়েছেন বলে চরপাথরঘাটা জুড়ে কানাঘুষা চলছে। ফলে, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী, মাদক বিক্রেতা ও স্বাধীনতাবিরোধীদের অন্তর্ভুক্তের অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।


বিতর্কিতদের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান তালুকদার বলেন, বিতর্কিত কেউ কমিটিতে আসে নাই। যারা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন তারা কেউ কেউ হয়তো পদ না পেয়ে অভিমানে পদত্যাগ করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় উপরের নির্দেশে আমরা কমিটি ঘোষণা করছি।


এদিকে কমিটির দেওয়ার পরপর জাহাঙ্গীর আলম নামে একব্যক্তি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে লিখেছেন, ওয়ার্ড সম্মেলনের এক বছর পর কমিটি হচ্ছে। মাইম্যান প্রাধান্য পাচ্ছে তৃনমূল? সংগঠিত হচ্ছে?


এদিকে রাতে কমিটি ঘোষণা করা হলেও সকালে জুলধা ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদ পাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে ২৫ নম্বর সদস্য মো. খোকন এবং ২৬ নম্বর সদস্য মো. আলী আকবর পদত্যাগ করেছেন।


বিশেষ সূত্রে জানা যায়, জমি দখলকারী, বিতর্কিতদের কমিটিতে না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ।


দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ নিয়ে কেউ পদ বাণিজ্য করার দুঃসাহস দেখালে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। পদ বাণিজ্যের মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিদের দলে ঢোকালে এসব ব্যক্তি উইপোকার মতো কাজ করে। তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে সাংগঠনিক ভিত ধ্বংস করে দেয়। তাই এসব পদ বাণিজ্যকারী এবং সুযোগসন্ধানীর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মাই ম্যান হিসেবে কাউকে তৃণমূল আওয়ামী লীগের কমিটি তথা ওয়ার্ডে যেন পদ দেওয়া না হয়।’


বিবার্তা/জে. জাহেদ/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com