শিশুকে বলাৎকারের পর আত্মহত্যার নাটক, মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:৩৯
শিশুকে বলাৎকারের পর আত্মহত্যার নাটক, মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় একটি হেফজ মাদ্রাসার বাথরুম থেকে এক শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের পর খুন করে আত্মহত্যার নাটক সাজানোর ঘটনার প্রধান আসামি রিদুয়ানুল হককে (৩২) গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।


সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ওই উপজেলার পূর্ব চরণদ্বীপ এলাকার বদিউল আলমের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে অবস্থিত দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন।


গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক নুরুল আবজার বলেন, গ্রেফতার আসামি রিদুয়ানুল শিশুটিকে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে র‍্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন।


র‍্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নুরুল আবজার আরো বলেন, মামলাটি রুজু হওয়ার পর র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আসামির অবস্থান শনাক্তের পর তাকে গ্রেফতার করে। আসামিকে থানা-পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


র‍্যাব জানায়, ভুক্তভোগী শিশু শাবিব শাইয়ানকে (১১) গত ১৩ মার্চ সকালে প্রতিদিনের ন্যায় তার বাবা মাদ্রাসায় দিয়ে আসেন। এদিন রাতে আবার শাবিবকে নিতে যান তার বাবা। কিন্তু ওই সময় মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানান, শাবিব চতুর্থ তলায় বাথরুমে গেছেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে না আসায় মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শাবিবের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৬ মার্চ ভুক্তভোগীর বাবা মশিউর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে ৩ জনের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক রিদুয়ানুল হক। তিনি ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন।


চট্টগ্রাম র‍্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক তাপস কর্মকার বলেন, শিশুটি আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হলেও ময়নাতদন্তে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং বলাৎকারের আলামত পাওয়া যায়। প্রাথমিকে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মাদ্রাসা শিক্ষক রিদুয়ান অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।


থানা-পুলিশ বলছে, গত ১৩ মার্চ এই মাদ্রাসার বাথরুমের দরজা ভেঙে শাবিব শায়ানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। শিশুটি গলায় প্যান্টের বেল্ট দিয়ে একটি স্ট্যান্ডের সঙ্গে ফাঁস লাগান ছিল। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা ধারণা করে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে।


পরবর্তীতে মরদেহের ময়নাতদন্তে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং জোরপূর্বক শিশুটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আলামত পাওয়া যায়। এই ঘটনায় গত ১৬ মার্চ নিহতের বাবা মশিউর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে চকবাজার থানায় তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।


এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের বলেন, এই ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা হলেও পরে হত্যা মামলা হিসেবে নেয়া হয়। মামলা হওয়ার অনেক পরে ফরেনসিক রিপোর্টে বলাৎকারের বিষয়টি উঠে আসে। যেহেতু মামলাটি এখনো তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। তদন্ত শেষে বলাৎকারের ঘটনাটি প্রতিবেদনে দাখিল করা হবে।


ওসি আরো বলেন, এই মামলায় এজাহারনামীয় তিন আসামিই মাদ্রাসাটির শিক্ষক। এর মধ্যে দুজনকে পুলিশ ঘটনার কিছুদিন পর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি রিদুয়ানুল হককে মঙ্গলবার পুলিশ আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত রিমান্ড এখনো শুনানি করেননি।


নিহত সাবিব দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা মশিউর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর দামপাড়ার ২ নম্বর পল্টন রোডে আবদুল কাদের টাওয়ারে থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলায়।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com